• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
প্রধানমন্ত্রীর সামনে উঠছে মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি

মেগা প্রকল্প

ছবি : সংগৃহীত

সরকার

প্রধানমন্ত্রীর সামনে উঠছে মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বিনিয়োগ আকর্ষণে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে গুরুত্ব পেয়েছে একগুচ্ছ মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পে গতি আনারও ঘোষণা রয়েছে ইশতেহারে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর সেইসব প্রকল্পে তদারকি বাড়াচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রকল্পগুলোর সার্বিক চিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সচিব কমিটির আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপনের আগেই প্রতিটি প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী কিছু দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সচিব কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় আড়াই বছর পর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে নির্বাচনী ইশতেহার পূরণের বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় থাকবে গ্রামকে শহরে রূপান্তর করতে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শীর্ষক রূপকল্প। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন, জবাদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতিও রয়েছে আলোচনার সূচিতে।

এর আগেই সরকারের অগ্রাধিকার ফাস্ট-ট্র্যাকভুক্ত সব প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে আইএমইডি। এর আলোকে আইএমইডির পক্ষ থেকে প্রতিটি প্রকল্পের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দুই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আইএমইডির ভারপ্রাপ্ত সচিব আবুল ফজল মো. ফয়জুল্লাহ।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ফাস্ট-ট্র্যাকে অন্তর্ভুক্ত ১০ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার প্রকল্পে ইতোমধ্যে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৯৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থ ব্যয়ের হিসাবে সার্বিক অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ।

পদ্মা সেতুর সুফল বিস্তৃত করতে এতে রেল সংযোগের উদ্যোগের অংশ হিসেবে চীনের সহায়তায় ২০১৬ সালে নেওয়া হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রকল্প। ২০২২ সালের জুনে সমাপনীর জন্য রাখা প্রকল্পটিতে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে চলে যায় দুই বছর। প্রকল্পটির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। বরাদ্দের ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে প্রকল্পের ভৌত কাজ হয়েছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ।

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকার প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ অর্থ এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। প্যাকেজ-১-এর শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ৭ শতাংশ কাজ হয়েছে প্যাকেজ-২-এর আওতায়।

রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৬৩ সালে। এর পর কয়েক দফায় নেওয়া উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। বিকল্প জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মেগা এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়েছে। এ কেন্দ্রের প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে চলছে মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ। প্রকল্পটির আওতায় ৮ হাজার ৪৬১ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ।

রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে কয়লা। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর চাপ কিছুটা কমে আসবে। ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে ইতোমধ্যেই ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৬০৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১৬ শতাংশের বেশি।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতরাবাড়ী দ্বীপকে বিদ্যুৎ হাবে উন্নীত করছে সরকার। এ বিদ্যুৎ হাবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মাতারবাড়ী ২৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার শীর্ষক প্রকল্পের কাজ। ২০১৪ সাল থেকে চলমান প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ২০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। বরাদ্দের ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে মাঠপর্যায়ে কাজ হয়েছে ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ।

কলম্বো বা সিঙ্গাপুর বন্দর ব্যবহার না করে চট্টগ্রাম বা মোংলায় পণ্য পরিবহন করতে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৫ সালে। এ প্রকল্পে ইতোমধ্যেই ৭১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২১ শতাংশের বেশি।

কক্সবাজারের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন করতে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এ লক্ষ্যে দোহাজারী থেকে রামু-কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এতে ৩ হাজার ১০৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ৭ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতির বিপরীতে ভৌত অগ্রগতি ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মহেশখালীতে চলছে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। এ টার্মিনালের মাধ্যমে সীমিত আকারে গ্যাস আমদানি শুরু হয়েছে। গত বছরের ১৮ জুলাই টার্মিনাল ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। জিও টেকনিক্যাল সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এ টার্মিনাল থেকে গ্যাস সঞ্চালনে মহেশখালী-আনোয়ারা, আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ও চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য এক বছরের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, চলমান ১০ মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সমন্বয় করে এ বিষয়ে কাজ করা হবে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এ বিষয়ে সর্বোচ্চ দৃষ্টি থাকবে বলেও তিনি জানান।

আইএমইডির সচিব বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার দুটি প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা জানতে আজ পৃথক দুই বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। বৈঠকে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরবেন। বৈঠকে দুই প্রকল্পের সমস্যা ও সমাধানের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। পর্যায়ক্রমে ফাস্ট-ট্র্যাকভুক্ত সব প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এমন বৈঠকের আয়োজন হবে বলেও তিনি জানান।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতির ইতিবাচক রূপান্তর ঘটবে। তবে বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে এসব প্রকল্পের সুফল কবে পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।

তিনি বলেন, নকশা চূড়ান্ত না করেই অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় একপর্যায়ে তা আটকে যাচ্ছে। মেট্রোরেলের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে। আবার সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি অনেক প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ছে। নির্দিষ্ট মেয়াদ ও সময়ের মধ্যে বড় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে তদারকি আরো বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। গতি ধরে রাখতে এসব প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করারও তাগিদ দেন ড. জাহিদ হোসেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads