• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
 দুর্নীতি প্রতিরোধে ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন

প্রতীকী ছবি

সরকার

দুর্নীতি প্রতিরোধে ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দেশে সাম্প্রতিক ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি ও উচ্চমহলের দুর্নীতি এবং অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি সারা দেশে বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। নানারকম দুর্নীতি, অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রশাসনে অস্বস্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে বিভিন্ন রকম দুর্নীতি কমানোর চেষ্টা করা হলেও রাজনৈতিক চাপ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না এবং থামছে না দুর্নীতি ও অনিয়ম। ফলে জনগণ যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। এতে বর্তমান সরকারের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের স্বপ্ন যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি জনকল্যাণমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যবস্থাও অনেকটা হুমকির মুখে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।  

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। প্রশাসনের একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার  দুর্নীতির কারণে সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যাওয়ার আগে দুর্নীতি-অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে এর আগে একাধিকবার বলেছেন, আপনাদের বেতন-ভাতা  আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। তাই কোনোরকম দুর্নীতি-অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। জানা গেছে, প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রশাসনকে জনকল্যাণমুখী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া দুর্নীতি-অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অপকর্ম ও সম্পদের হিসাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদেরও তালিকা করা হচ্ছে। দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কেউ যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে বিষয়েও কঠোর নজর রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অপকর্মকারী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের স্বার্থে কারো কোনোরকম অন্যায়-অপকর্ম বরদাশত করা হবে না। তিনি আরো বলেন, ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জড়িত  কেউ যেন দেশের বাইরে চলে যেতে না পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। তারা বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সব ধরনের অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ যেই হোক, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া  অপরাধীদের শনাক্তকরণে গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে। তালিকা পেলে সেটা যে ধরনেরই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হোক, তাদের দমন করা হবে। অবৈধ-অন্যায় ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কাউকেই ছাড়া হবে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অপরাধীরা কে কোথায় আছে সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা হলো কে কতটুকু অপরাধ করেছে। তিনি বলেন, যারা অপরাধ করবে তাদেরই শাস্তি পেতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের নিজ সভাকক্ষে সোমবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে পুলিশ বিভাগের ইমেজ বৃদ্ধির জন্য শিগগির পুলিশ বিভাগে শুদ্ধি অভিযান শুরু করা হবে। এছাড়া দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিকালের রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশকাণ্ড দুর্নীতি, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পর্দা কেলেঙ্কারি, রংপুর ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল চেয়ার ক্রয়ের দুর্নীতি, রংপুর মেডিকেল কলেজে  ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, রেলওয়ের প্রকল্পে ক্লিনারের মাসিক বেতন চার লাখ ২০ হাজার টাকা দেখানোসহ পুলিশ প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে সরকারের উচ্চমহলে বড় ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে। জানা গেছে, সব ধরনের দুর্নীতি ও অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার নাম এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে জোরেশোরে। মতিঝিল থানার একশ গজের মধ্যে চারটি ক্লাব কী করে ক্যাসিনো পরিচালনা করে এবং এতদিন কেন এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিপরায়ণ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি তাদের প্রশ্রয়দানকারী প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও  জোরালো শুদ্ধি অভিযান শুরু করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতি এবং বারবার প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করে দুর্নীতির প্রসার ঘটানোর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শিগগির প্রশাসনিক অভিযান শুরু করা হবে। এদিকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসায় অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

প্রশাসনে পরিবর্তন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আ. গাফ্্ফার  খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন,  প্রশাসনকে জনকল্যাণমুখী করতে এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে শিগগির প্রশাসনে অভিযান শুরু করার চিন্তাভাবনা চলছে। এছাড়া সারা দেশের প্রশাসনে তদারক জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের সেবায় সর্বস্তরের প্রশাসন ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। সম্প্রতি ঢাকা জেলার এসপিকে বদলির কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা মূলত মাঠ প্রশাসন নিয়ে কাজ করি। প্রশাসনে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড দূর করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূলত প্রশাসনকে দুর্নীতি-অনিয়ম মুক্ত করতে প্রতিনিয়তই পরিবর্তন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads