• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

অপেক্ষা পহেলা ফাল্গুনের

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

টানা ছুটির দুদিন পর একুশে গ্রন্থমেলায় গতকাল কিছুটা ভাট গেছে। শুক্র ও শনিবার বিক্রয়কর্মীরা যেভাবে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন, গতকাল রোববার তেমনটা ছিল না। এখন প্রকাশকরা অপেক্ষা করছেন আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি তথা পহেলা ফাল্গুনের জন্য। বাঙালির জীবনে পহেলা ফাল্গুনের গুরুত্ব ব্যাপক। গ্রন্থমেলায় সেই গুরুত্বের প্রভাব আরো বেশি।

ছুটির দিনের তুলনায় মেলায় পাঠক উপস্থিতি কম হলেও প্রকাশকরা একেবারে নিরাশ হননি গতকাল। বেচাবিক্রির তুমুল ব্যস্ততা না থাকলেও পাঠক-ক্রেতার উপস্থিতি ছিল। পড়ুয়ারাও আসতে শুরু করেছেন মেলায়। খুঁজে খুঁজে বের করছেন পছন্দের বইও।

কামরাঙ্গীরচর থেকে আসা এনজিও কর্মী রাইসুল ইসলাম জানালেন, নতুন বইয়ের জন্য মেলার শেষের দিকে একবার মেলায় আসবেন। কিন্তু পছন্দের কিছু বই আগেভাগেই কিনতে গতকাল মেলায় এসছিলেন তিনি।

রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘শেষের দিকে আসলে সব নতুন বই পাওয়া যাবে। তখন দেখে-শুনে পছন্দের বই কিনে নিব। কিন্তু এখন মেলা অনেকটা ফুরফুরে। এ সময় আসলাম কারণ আমার কিছু সিলেক্টেড বই আছে যা কেনা দরকার ছিল।’

গতকাল অন্যান্য স্টলের তুলনায় শিশু কর্নারে ভিড় ছিল বেশি। মতিঝিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী টুনটুন এসেছে তার মায়ের সঙ্গে মেলায়। টুনটুন বলল, কার্টুনের বই তার খুব পছন্দ। সে কারণেই শিশু কর্নারে মায়ের সঙ্গে বইয়ের পছন্দের বই খুঁজছে।

টুনটুনের মা ফারজানা আখতার বললেন, ‘মেয়ে বায়না ধরেছে কার্টুন বই কিনবে। গ্রন্থমেলায় যেহেতু সব ধরনের বই-ই পাওয়া যায় তাই এখানে নিয়ে এলাম।’

মেয়ের সঙ্গে নিজের পছন্দের কিছু বইও কিনে নিয়েছেন বলে ফারজানা আখতার জানান।

বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে গতকাল নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১১৬টি।

এদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মিল্টন বিশ্বাস রচিত ‘উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রশান্ত মৃধা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পাপড়ি রহমান ও মোজাফ্ফর হোসেন। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন মিল্টন বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আনোয়ারা সৈয়দ হক। সন্ধ্যায় ছিল কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থে লেখক মিল্টন বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে যত উপন্যাস রচিত হয়েছে, সবকটিকেই আলোচনায় রেখেছেন। মিল্টন বিশ্বাস আলোচিত উপন্যাসগুলোর প্রতিটিতে সময় ও সমকালীন রাজনীতির ঘটনাক্রমের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এসব উপন্যাসে ঔপন্যাসিকরা কাহিনী নির্মাণের জন্যে ভাষা এমনকি উপভাষা আর সংলাপের ক্ষেত্রে যে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে, তা আলোচনা করেছেন। উপন্যাসের কাহিনি উপস্থাপনায় প্রথাগত রীতির বাইরেও নানা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং কখনো ইতিহাসের উপকরণের হুবহু বর্ণনা, কখনো আবার আত্মজৈবনিক কৌশল কিংবা নিজের অনুভূতির প্রসারণ ঘটেছে আখ্যান বুননে।

আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখিত উপন্যাসগুলোকে শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক দুটি দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখার অবকাশ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস সমার্থক। তিনি হলেন সেই মহামানব যাঁর মধ্যদিয়ে আমরা স্বদেশকে উপলব্ধি করতে পারি। বাংলার ইতিহাসের এই মহান নেতাকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রেখে উপন্যাসের ভাষ্য নির্মাণ এবং সব ধরনের শিল্প মাধ্যমে তাঁর গৌরবগাথা তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন।

গ্রন্থের লেখক বলেন, এ গ্রন্থ লেখার প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লিখিত সকল উপন্যাস পাঠ আমার জন্য সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এসব উপন্যাসে ইতিহাসের নানা কাল-প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক জীবনের চিত্র উঠে এসেছে।

সভাপতির বক্তব্যে আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি হূদয়ের এত কাছের একজন মানুষ যে তাঁকে নিয়ে সাহিত্য রচনায় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ঔপন্যাসিককে এই আবেগের স্রোত এড়িয়ে নির্মোহভাবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উপন্যাস লিখতে হবে এবং আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর কীর্তিময় জীবনগাথা সাহিত্য ও শিল্পের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে হবে।

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি হালিম আজাদ, শাকিরা পারভীন, বায়তুল্লাহ কাদেরী এবং নাজমুল হুসাইন বিদ্যুৎ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম, ডালিয়া আহমেদ, শুচিতা সপর্যা। সংগীত পরিবেশন করেন ফকির আজমল শাহ, মো. আনোয়ার হোসেন, কাঙালিনি সুফিয়া, আমজাদ দেওয়ান, মমতা দাসী বাউল এবং প্রশান্ত সরকার।

গতকাল ‘লেখক বলছি’  অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন পারভেজ হোসেন, ওবায়েদ আকাশ, মোস্তফা হোসেইন এবং খায়রুল বাবুই।

 

আজকের অনুষ্ঠান

আজ সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৯ম দিন মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায়  গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে দিব্যদ্যুতি সরকার রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাশিদ আসকারী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সাহিদা বেগম ও আশফাক হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আবুল মোমেন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads