• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

মহানগর

দিনে ঘুম রাতে পার্টি

ডিজে নেহাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পুলিশের হাতে আটক ফারজানা জামান নেহা ওরফে ডিজে নেহা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। বিশেষ করে রাতে বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে ঘরোয়া পরিবেশে ডিজে পার্টি সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন নেহা। সেখানে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে দেওয়া হয় পার্টি। আর এ পার্টিতে মদ-বিয়ারসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। ডিজে পার্টির মেয়েরা সারাদিনই ঘুমায় আর সন্ধ্যার পর তাদের পার্টি শুরু হয়। এরকম এক শ্রেণির মেয়ে সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন নেহা। চাঞ্চল্যকর ঘটনা রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় করা মামলায় তার বান্ধবী ফারজানা জামান নেহা বর্তমানে পুলিশের ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গতকাল শনিবার তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন।  ডিসি হারুন-অর-রশিদ বলেন, নেহা প্রতি রাতে ডিজে পার্টি করেন। সারারাত বাইরে থাকেন। এই ডিজে পার্টির আড়ালে অন্য কোনো ব্যবসা আছে কি না অথবা তার অন্য কোনো পেশা কী, তার ইনকাম সোর্স কী, তার সঙ্গে কাদের সম্পর্ক আছে এসব নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাধুরীর বাবার করা মামলায় প্রত্যেক আসামিকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়া আরো যদি কেউ জড়িত থাকেন তাদেরও গ্রেপ্তার করব।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা দেখেছি ঢাকায় সপ্তাহে তিন দিন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার রাতে বাসা বা বিভিন্ন হোটেলে ডিজে পার্টির নামে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। পার্টিতে অনেকে মদ খাচ্ছেন। এতে অনেকে বিষাক্ত মদ খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন বা মারা যাচ্ছেন। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে এ ধরনের মদ যারা বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। আমাদের অভিযান চলছে। যারা ডিজে পার্টি ও মদ পার্টির আয়োজক, যারা মদ বহন করে পৌঁছে দেন তাদের আমরা খুঁজে বের করছি।

আদালতে যা বলেছে নেহা : গ্রেপ্তার ফারজানা জামান নেহা সেদিনের ঘটনা আদালতে তুলে ধরেছেন। গত শুক্রবার ওই ছাত্রীর বান্ধবী নেহাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তিনি এ বিষয়ে আদালতকে অবগত করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ওইদিন রেস্টুরেন্টে মদ পান করার পর আমার মুখ দিয়ে রক্ত ও বমি বের হয়। তখন সেখান থেকে আমি বাসায় চলে যাই। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিই।

নেহা আরো বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি আমার বন্ধু আরাফাতের নিমন্ত্রণে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে গিয়ে আরো কয়েকজনকে দেখতে পাই। আমি আরাফাত ছাড়া অন্য কাউকে চিনতে পারিনি। সেখানে আমি মদ পান করি। ৩ প্যাক পান করার পর আমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় এবং বমিও হয়। আমি তখন সেখান থেকে বাসায় চলে যাই। বাসায় যাওয়ার পরও আমার কয়েক দফা বমি হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিই।

দিনে ঘুম রাতে পার্টি :  নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, চাঞ্চল্যকর ঘটনা রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় করা মামলার অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের অনেক মেয়ে সারাদিন ঘুমায় আর রাতে সেজে টাকাওয়ালা ছেলেদের বিভিন্ন লাইসেন্সবিহীন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। ডিজে পার্টির নামে সেখানে তারা মদ পার্টি করেন। পরে নাচানাচি করে ভোর বেলায় চলে যান।

তিনি বলেন, সম্প্রতি উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে এরই ধারাবাহিকতায় আরাফাত মদ খেয়ে মারা গেছেন আর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) ছাত্রী মাধুরী অতিরিক্ত মদ পানে অসুস্থ হয়ে পরে মারা গেছেন। আর এ ঘটনায় মাধুরীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তার বাবার করা মামলায় মাধুরীর বান্ধবী ফারজানা জামান নেহাও রিমান্ডে স্বীকার করেছেন তিনিও মদ পানে অসুস্থ হয়েছিলেন, দুই দিন চিকিৎসাও নিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বলেন, সমাজে বিচ্ছিন্নতার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। দেখা গেছে অনেকে পরিবারে বাবা-মায়ের মিল নেই। আর এর ফলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাজে প্রভাব পড়ছে। তারা বাইরে গিয়ে নেশা করছেন। মদ খাচ্ছেন। এতে অনেকে বিষাক্ত মদ খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন বা মারা যাচ্ছেন। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে এই ধরনের মদ যারা বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। আমাদের অভিযান চলছে। যারা ডিজে পার্টি, মদ পার্টির আয়োজক, যারা মদ বহন করে পৌঁছে দেয় তাদের আমরা খুঁজে বের করছি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মাধুরীর বাবার করা মামলায় প্রত্যেক আসামিকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এছাড়া আরো যদি কেউ জড়িত থাকে তাদেরও গ্রেপ্তার করব।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ঢাকায় সপ্তাহে তিন দিন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার রাতে বাসা বা বিভিন্ন হোটেলে ডিজে পার্টির নামে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। আরাফাত যে মারা গেলেন ওই রাতে গুলশানে আরো একটি হোটেলে তিনি পার্টি করেছেন। আবার সেখান থেকে পার্টি করে তার এক গ্রুপ গেছে মাওয়াতে। সেখান থেকে ফিরে এসে অসুস্থ হয়েছেন।

ডিসি হারুন বলেন, সেই রাতে রায়হান মাধুরীকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে একটি বাসায় আসেন। রিমান্ডে রায়হান স্বীকার করেছেন তার সঙ্গে মাধুরীর শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে ওই রাতে। পরে অসুস্থ হলে তাকে ইবনে সিনা, এরপর আনোয়ার খান হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। তার প্রকৃত মৃত্যুর কারণ রিপোর্ট না আসলে বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা মনে করছি এবং রিমান্ডের থাকা তিনজনের কথা বলে যেটা জানা গেছে মদ পানে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুটাই মূল কারণ হতে পারে।

উল্লেখ্য, ইউল্যাব ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি তার দুই বন্ধু মুর্তজা রায়হান চৌধুরী (২১) ও নুহাত আলম তাফসীরের (২১) পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই দিনই ৪ জনকে আসামি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন নিহত তরুণীর বাবা। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো একজনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় মুর্তজা রায়হান ওই তরুণীকে নিয়ে মিরপুর থেকে আরাফাতের বাসায় যান। সেখানে স্কুটার রেখে আরাফাত, ওই তরুণী এবং রায়হান একসঙ্গে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যান। সেখানে আগে থেকেই আরেক আসামি নেহা এবং একজন সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আসামিরা ওই তরুণীকে জোর করে ‘অধিক মাত্রায়’ মদপান করান। মদপানের একপর্যায়ে ভুক্তভোগী তরুণী অসুস্থ বোধ করলে রায়হান তাকে মোহাম্মদপুরে তার এক বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নুহাতের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তরুণীকে ধর্ষণ করেন রায়হান। এ সময় রায়হানের বন্ধুরাও রুমে ছিলেন।

ধর্ষণের পর রাতে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে বমি করলে রায়হান তার আরেক বন্ধু অসিম খান কোকোকে ফোন দেন। সেই বন্ধু পরদিন এসে তরুণীকে প্রথমে ইবনে সিনা ও পরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads