• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

রাজধানীতে নাগরিক তথ্য সংগ্রহ শুরু

ভাড়াটিয়াদের পেশা যাচাই হবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

এবার ঢাকা মহানগরীতে ভাড়া থাকা মানুষের পেশা যাচাই করবে পুলিশ। সম্প্রতি ঢাকা মহানগরে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন আসামির নাগরিক তথ্য ভান্ডারে কোনো তথ্য মেলেনি। এ ছাড়া এমন কয়েকজন পাওয়া গেছে যাদের সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিআইএমএস) পেশাসহ প্রয়োজনীয় কিছু তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। তাই পেশা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে চলতি সপ্তাহে আবার শুরু হয়েছে নাগরিক তথ্য সংগ্রহ পক্ষ।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, এবার সিটিজেন ইনফরমেশন দেওয়া তথ্যে বাসিন্দার পেশাও যাচাই করবে পুলিশ। কোনো ব্যক্তি যদি তার ব্যক্তিগত ফর্মে চাকরিজীবী লেখেন, সেক্ষেত্রে তিনি চাকরি করছেন কি না তা সরেজমিনে যাচাই করা হবে। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন অপরাধী ও জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বাড়ির মালিককে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে বাসা ভাড়া নিচ্ছে। সে ব্যাপারে বাড়ির মালিকদের সচেতন করাই নাগরিক পক্ষের উদ্দেশ্য।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, এবারের নাগরিক তথ্য সংগ্রহ পক্ষে প্রতিটি বিটে নতুন ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সে ক্ষেত্রে যেসব ভাড়াটিয়া বাসা বদলেছেন, তাদের তথ্য হালনাগাদ করা হবে। তা ছাড়া প্রতিটি বিটে পেশাদার খুনি, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ডাকাত, চোর, ছিনতাইকারী, মাদক সংক্রান্ত অপরাধী, নারী উত্ত্যক্তকারী, জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নামও হালনাগাদ করা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হাফিজ আকতার বলেন, নাগরিক তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াটি অপরাধ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তা ছাড়া কোনো অপরাধ ঘটলে এ তথ্য কাজে লাগিয়েও রহস্য উদ্ঘাটন করার পথ সুগম হয়। আমরা ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়ায় অনেক অপরাধীকে শনাক্ত করতে পেরেছি।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনায় অনেক ভাড়াটিয়া পরিবারসহ ঢাকা ছেড়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ডিএমপি কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, সিআইএমএসে যাদের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে থাকা সব নাগরিককে তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার বিট অফিসারদের সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে তথ্য গোপন থাকবে কি না প্রশ্ন উঠেছে অনেক বাসিন্দার মনে। অনেকই বলেন, তথ্য দিতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা আগেও তথ্য দিয়েছি। তবে এই তথ্য নিয়ে কেউ যদি আমাকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করে, তা নিয়ে আতঙ্কে আছি। কেননা এখন তো সব জায়গায় এনআইডি ব্যবহার করা হচ্ছে। এনআইডি ও ফোন নম্বর দেওয়ার অর্থ হলো আমার সব তথ্য দেওয়া। পুলিশ যদি গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারে, তাহলে মানুষ নিজে থেকেই তথ্য দিতে আগ্রহী হবে। এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে বাসিন্দাদের সকল তথ্য। প্রয়োজন ছাড়া পুলিশও এ তথ্যে হাত দেবে না। পুলিশের কাছে বাসিন্দাদের তথ্য থাকলে অপরাধী সহজে অপরাধ করার সাহস করবে না।

পুলিশ আরো জানায়, নিবন্ধন করলে ভাড়াটিয়ারা অনেক উটকো ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবে। অনেক সময় দেখা যায়, ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত না থাকলেও তার নামে মামলা দেওয়া হয়। হয়তো মফস্বলের কোনো থানায় কারো নামে মিথ্যা মামলা হলে ঢাকায় অবস্থান করা ব্যক্তি তার নাগরিক তথ্য দিয়ে মামলা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেন। এছাড়া গভীর রাতে ঢাকায় চলাফেরায় অহেতুক হয়রানি থেকেও রক্ষা পাবেন। পুলিশি কোনো সেবা নিতে চাইলেও সহজে নিজের পরিচয় দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা নেওয়া যাবে।

পুলিশ জানায়, ভাড়াটিয়ারা ইচ্ছে করলে অ্যাপসেও নিবন্ধন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে প্রথমে ড়েড়মষব চষধু ঝঃড়ৎব ঈেওগঝ উগচ লিখে সার্চ করে অ্যাপসটি ইন্সস্টল করতে হবে। তারপর ষড়মরহ অপশনে ফোন নম্বর দিয়ে নিবন্ধনে ক্লিক করতে হবে। এরপর একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে মোবাইল ফোনে। কোড সক্রিয় করে পাসওয়ার্ড সেট করে ষড়মরহ করলে বিভিন্ন ক্যাটাগরি দেখা যাবে। এখান থেকে নির্দিষ্ট অপশনটিতে ক্লিক করলে একটি ফরম আসবে। ফরমে প্রদত্ত ঘরে সকল তথ্য নির্ভুলভাবে পূরণ করে সাবমিট করলে প্রাথমিক কাজ শেষ। এক্ষেত্রে অবশ্যই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। পূরণকৃত তথ্য সেন্ট্রাল ডাটাবেজে যুক্ত হওয়ার আগে থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদত্ত তথ্য যাচাই করে অ্যাপ্রুভাল দিলে ঈওগঝ-এর মূল ডাটাবেজে তথ্য যুক্ত হবে। আর যদি কোনো কারণে ফরম পূরণ অসম্পূর্ণ হয় বা তথ্যে ভুল থাকে সেক্ষেত্রে এসএমএস দিয়ে জানানো হবে।

আগের মতো ম্যানুয়েল সিস্টেমও থাকছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের নির্ধারিত নিবন্ধন ফরম প্রতিটি থানা ও ফাঁড়িতে পাওয়া যায়। নাগরিকরা সেখান থেকে ফরম নিয়ে পূরণ করে থানায় জমা দিতে পারবে। জমা দেওয়ার আগে ফরমের ফটোকপি নিজের কাছে রেখে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানাকে পাঁচ থেকে সাতটি বিটে ভাগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ডিএমপির ৫০টি থানায় মোট ৩০২টি বিট রয়েছে। নির্দিষ্ট এলাকার একটি করে বিট নম্বর রয়েছে। নির্দিষ্ট বিটের নাগরিকদের অধিকতর পুলিশি সেবা দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই, এএসআইসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে ঢাকা মহানগর এলাকায় শুরু হয় বিট পুলিশিং প্রথা। অপরাধ ব্যবস্থাপনার জন্য নানাবিধ তথ্য সংগ্রহের অংশ হিসেবে মহানগরে বসবাসরত বাসিন্দাদের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় নাগরিক তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম। তথ্যের বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে প্রস্তুত করা হয় সিআইএমএস। যার যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর।

২০১৯ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত সিআইএমএস সফটওয়্যারে বাড়ির মালিক ছিলেন ২ লাখ ৪১ হাজার ৫০৭ জন। ভাড়াটে ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৪, মেসের সদস্য ১ লাখ ২১ হাজার ৪০, অন্যান্য ১ হাজার ১০০ জন। পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৮২১, চালক ও গৃহকর্মী ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৪ জন। মোট ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৭ জনের তথ্য সংরক্ষিত আছে। এই সিস্টেমে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি ইউনিক ইনডেক্স নম্বরও রয়েছে। ওই নম্বর দিয়ে সিস্টেমে সার্চ দিলে কাঙ্ক্ষিত নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য জানার ব্যবস্থা রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads