• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

যুক্তরাষ্ট্র কি স্নায়ুযুদ্ধের ধারণায় ফিরছে

  • প্রকাশিত ০৮ এপ্রিল ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া স্ব-স্ব দেশ থেকে কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘটনার রেশ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই গত ১ এপ্রিল রাশিয়া সিরিয়া থেকে সকল মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। নিউজউইক ম্যাগাজিনের খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় নিযুক্ত রাশিয়ার বিশেষ দূত আলেকজান্ডার লাভরেনটিয়েভ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে যুক্তিতে সিরিয়ায় তার সামরিক উপস্থিতি রাখতে চায়, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের সামরিক উপস্থিতি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এর অর্থ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এখন একে অপরকে ‘শত্রু’ ভাবছে, অনেকটা স্নায়ুযুদ্ধকালীন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে যে ‘সম্পর্ক’ বিরাজ করছিল, ঠিক তেমনি একটি পরিস্থিতির দিকে দেশ দুটি এখন এগিয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বিভিন্ন ইস্যুতে দেশ দুটি পরস্পরবিরোধী একটা অবস্থান গ্রহণ করছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (২০১৬) রাশিয়ার পরোক্ষ হস্তক্ষেপ, সিরিয়ায় আসাদের পক্ষ অবলম্বন ইত্যাদি কারণে দেশ দুটির মাঝে বড় ধরনের আস্থাহীনতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষুদ্র আকারের পরমাণু বোমা তৈরি করার, যা কীনা বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দেওয়ার একটা ঝুঁকি তৈরি করেছে। এই যখন ঘটনা, তখন ব্রিটেন প্রথমে ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল। অভিযোগ ছিল, ব্রিটেনে বসবাসরত এক সময়ের রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য সার্গেই স্ক্রিপালকে হত্যার। স্ক্রিপাল ছিলেন ডবল এজেন্ট। তিনি রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করলেও, তিনি একই সঙ্গে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকেও তথ্য সরবরাহ করতেন। তাই স্ক্রিপালকে যখন নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়, তখন অভিযোগ ওঠে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্ত অনুুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। তারা সবাই মিলে ১৩৯ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া বহিষ্কার করে ১৫০ জন পশ্চিমা কূটনীতিককে, যার মাঝে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনের কূটনীতিকরাও আছেন। এই বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে নতুন করে দু’দেশের মাঝে (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, এর মধ্য দিয়ে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল আজ থেকে ২৭ বছর আগে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। একটা সময় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ইউরোপে প্রভাব-বলয় বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তির মাঝে এক ধরনের ‘যুদ্ধের’ আশঙ্কার জন্ম দিয়েছিল। দীর্ঘ সময় ওই পরিস্থিতি বহাল ছিল, যা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানে দুই পরাশক্তির কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে ভোর হওয়ার আগে বিশ্বে ‘ট্রিনিটি’ নামের বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। পরবর্তী সময়ে ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে দ্বিতীয় আরেকটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই বোমাই জাপানের আত্মসমর্পণ এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানকে ত্বরান্বিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের রেশ ধরে ১৯৪৯ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৬০ সালে সাহারা মরুভূমিতে ফ্রান্স, ১৯৪৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল মন্টেপেলো দ্বীপে ব্রিটেন, এবং ১৯৬৪ সালে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ঝিনজিয়াং প্রদেশের পারমাণবিক পরীক্ষার এলাকায় চীন পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে বিশ্ব আসরে নাম লিখিয়েছিল। পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ১৯৬৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আংশিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়মিত কৌশলগত অস্ত্র সীমিতকরণ আলোচনা (সল্ট) শুরু করে। ১৯৭০ সালের মার্চে নতুন করে আর কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের যাতে বিস্তার না ঘটে, সে লক্ষ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৯ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সল্ট চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পারমাণবিক অস্ত্রের বিলোপ সাধনে প্রেসিডেন্ট বুশ ও গর্বাচেভ কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস চুক্তি (স্ট্রাট) স্বাক্ষর করেন। ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় স্ট্রাট-২ চুক্তি। ওই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও রুশ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা হয়। ১৯৯৫ সালে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিকে (এনপিটি) ২৫ বছরের জন্য স্থায়ী রূপ দিতে জাতিসংঘে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এখানে আরো একটি কথা বলা প্রয়োজন। ভারত ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো এবং ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো, পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো, আর ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। এর বাইরে ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। যদিও ইসরাইলের এ ব্যাপারে কোনো স্বীকারোক্তি নেই। বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সর্বশেষ যে তথ্য (২০১৭) আমরা পাই, তাতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৬ হাজার ৮০০টি, রাশিয়ার কাছে ৭ হাজার, যুক্তরাজ্যের কাছে ২১৫, ফ্রান্সের কাছে ৩০০, চীনের কাছে ২৭০, ভারতের কাছে ১২০-১৩০টি, পাকিস্তানের কাছে ১৩০-১৪০, উত্তর কোরিয়ার কাছে ১০-২০টি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে। একটি ওয়্যারহেড একাধিক পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করতে পারে। আরো একটি কথা। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১২২টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। এখন ৫০টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করলেই ৯০ দিন পর এটি কার্যকর হবে। তবে এই চুক্তি কয়টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে সাত দশকের প্রচেষ্টার পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে বৈশ্বিক ওই চুক্তিটি হয়েছিল। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ দেশের আলোচকরা ১০ পাতার চুক্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন। চুক্তির পক্ষে পড়েছিল ১২২টি ভোট। একটি ভোট পড়েছে বিপক্ষে। দেশটি হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। সিঙ্গাপুর ভোটদানে বিরত ছিল। ভোটে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরাইল- বিশ্বের এই ৯টি পরমাণু অস্ত্র শক্তিধর দেশের কোনো আলোচনা ও ভোটাভুটিতে ছিল না। জাপানও আলোচনা বয়কট করে। এখন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কার, ছোট ছোট পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত এবং সিআইএ প্রধান পম্পিওর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তি বিশ্বে নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ছোট পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্তে চীন ও রাশিয়া তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল। মস্কো মনে করে, মার্কিন পরিকল্পনা সংঘাতপূর্ণ ও যুদ্ধের উসকানিমূলক। এ ধরনের পরিকল্পনা রাশিয়াবিরোধী বলেও মনে করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর চীন মনে করে, ‘শান্তি ও উন্নয়নে অপরিহার্য বৈশ্বিক প্রবণতা বজায় রাখা দরকার। তবু বিরুদ্ধে না গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্রের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তা অনুসরণ করে চলা। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধকালীন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসবে। চীনকে অযৌক্তিকভাবে পরমাণু হুমকি মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে চীনের নীতি সব সময়ই আত্মরক্ষামূলক- চীনের ওটাই বক্তব্য। অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি স্পষ্টভাবেই পরমাণু অস্ত্র বিস্তারবিরোধী আন্তর্জাতিক আইনের (এনপিটি) লঙ্ঘন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত রাশিয়া স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। একটা আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছিল সেখান থেকেই। ইউক্রেন নিয়েও এর আগে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে দ্বন্দ্ব ছিল। অভিযোগ আছে, ইউনেকোভিচকে (রাশিয়া সমর্থিত) উৎখাত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। পূর্ব ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক খারাপ। কেননা, ইউক্রেন মনে করে রাশিয়ার মদদে পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। পূর্ব ইউক্রেন অনেকটা ক্রিমিয়ার মতো রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তি চায়। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিক। রাশিয়ার এখানে আপত্তি। যদি ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে ইউক্রেনের মাটিতে মার্কিন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে, যা কীনা রাশিয়ার নিরাপত্তার প্রতি এক ধরনের হুমকি বলে রাশিয়া মনে করে। রাশিয়ার আপত্তিটা সে কারণেই। যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই এই এলাকায় রাশিয়ার ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখে আসছে। একই সঙ্গে সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকাকেও ভালো চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র। এটা তো স্পষ্ট, রাশিয়ার হস্তক্ষেপে (বিমান হামলা) সিরিয়া থেকে আইএস বিতাড়িত হয়েছে। আবার সিরিয়ায় আসাদ সরকারও টিকে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ,  রাশিয়ার বিমান হামলায় আসাদবিরোধী শক্তিও (যারা আইএসের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেছিল) ধ্বংস হয়ে গেছে। রাশিয়া আসাদের পক্ষ অবলম্বন না করলে, সিরিয়ার পরিস্থিতি আজ অন্যরকম হতো। এই অঞ্চলজুড়ে রাশিয়া-ইরান-তুরস্ক একটা অক্ষ গড়ে উঠছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরোধী। সঙ্গত কারণেই রাশিয়ার ভূমিকাকে খুব ভালো চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যাতে ট্রাম্প নাটকীয়ভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন, তাতে রাশিয়া প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিল- এটা তখন প্রকাশ্যেই উচ্চারিত হচ্ছে এবং ওয়াশিংটনে এটা নিয়ে এখন তদন্ত চলছে। ফলে নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের পর ট্রাম্পের প্রো-রাশিয়া বক্তব্য থেকে মনে করা হয়েছিল তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার কাছাকাছি নিয়ে যাবেন। তখন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন সেই অবস্থান থেকে একটা ‘ইউ টার্ন’ নিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি এখন অনেকটাই রাশিয়াকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান, সিরিয়া কিংবা উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে এমন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা রাশিয়ার স্বার্থকে আঘাত করছে।

ফলে বোঝাই যাচ্ছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে একটি আস্থাহীন সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দেবে। রাশিয়া ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আসরে অনেকটা ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছে। জি-৮ থেকে রাশিয়াকে অনেক আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন স্ক্রিপাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দু’দেশের মাঝে সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটল। যে কোনো বিবেচনায় এটা কোনো ভালো খবর নয়।

স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর একটি স্থিতিশীল বিশ্ব আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আবার উত্তেজনা বাড়ছে। এই উত্তেজনা বিশ্বকে আবারো বিভক্ত করে ফেলতে পারে। আবারো শুরু হতে পারে ‘প্রভাব বলয় বিস্তারের’ রাজনীতি। আর এই ‘রাজনীতি’ই জন্ম দেবে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধের। 

Dr. tarek Shamshur Rahman

ড. তারেক শামসুর রেহমান

প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

tsrahman09@gmail.com 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads