• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন সিনহা

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

এখানে আমি একজন শরণার্থী

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন সিনহা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সিনহা গত শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে তার নতুন বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান। অনুষ্ঠানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও নিরাপদ বোধ করছেন না বলে জানান।

এস কে সিনহা তার বক্তব্যে জানান, এ বইয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সবাইকে জানানোর চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এবং অন্যান্য খাতও তিক্ত হয়ে উঠেছে। বইটি বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। অনুষ্ঠানে সিনহা তার বইয়ে উদ্ধৃত বিভিন্ন বিষয় পড়ে শোনান। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন পর্যন্ত এখানে আমার কোনো স্ট্যাটাস নেই। আমি একজন শরণার্থী। ভিসা শেষ হলে আমি যেন থাকতে পারি, সেজন্য এখানকার কর্তৃপক্ষকে হয়তো সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করব। এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছি, কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ ‘শরণার্থী অবস্থায়’ থাকায় এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের অনুমতি নেই জানিয়ে তিনি বলেন- যুক্তরাজ্য, জেনেভা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বক্তৃতা করার আমন্ত্রণ থাকলেও এই অবস্থার কারণে তিনি যেতে পারছেন না। সিনহা দাবি করেন, এই বই প্রকাশে রাজনৈতিক অঙ্গনের কারো কাছ থেকে তিনি কোনো সহযোগিতা নেননি। আর নিজের অভিজ্ঞতার কারণে রাজনীতিকে তিনি ‘ঘৃণা’ করেন। যুক্তরাষ্ট্রেও নিরাপদ বোধ করছেন না জানিয়ে এস কে সিনহা বলেন- আমি এত ভীত থাকি যে, ২৪ ঘণ্টা বাসাতেই থাকি। এ সময় তিনি দাবি করেন, সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে আমার বাসা সব সময় মনিটরিং করে এবং যারা আমার বাসায় যায় তাদের ছবি তোলা হয়।

ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের একটি কক্ষে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের সিনিয়র পলিসি স্কলার উইলিয়াম বি মাইলাম। দর্শক সারিতে ছিলেন খালেদা জিয়ার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মুশফিক ফজল আনসারী। ‘রাইট টু ফ্রিডম’ নামের এক সংগঠনের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে উপস্থিত ছিলেন ডজনখানেক লোক। আমন্ত্রিতদের বাইরে কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে এস কে সিনহার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিতাংশু গুহ জানিয়েছেন। দেড় ঘণ্টার এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার কোনো সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকেও দেখা যায়নি।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর এক বছরের মাথায় তিনি বিদেশে বসে ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন, যা নিয়ে আলোচনা চলছে। বইতে সিনহা লিখেছেন, ‘২০১৭ সালে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক এক রায় দেওয়ার পর বর্তমান সরকার আমাকে পদত্যাগ করতে এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে।’

প্রকাশনা অনুষ্ঠানেও শেখ হাসিনার সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন সিনহা। তিনি বলেন, দেশে ফিরলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে তাকে মেরে ফেলবে না, সে নিশ্চয়তা নেই।  বক্তব্যের শুরুতে সিনহা বলেন, ‘অনেক বাধার পর আমি বইটা প্রকাশ করতে পেরেছি, আপনাদের সামনে আসতে পেরেছি, সে জন্য আমি আনন্দিত। আমার মোটো কী ছিল, আমি কী করতে চেয়েছিলাম, আর প্রধান বিচারপতির চেয়ারে বসার পর আমি কী দেখলাম- তা এই বইয়ে তুলে ধরেছি।’ তিনি দাবি করেন, বইটি প্রকাশ করার জন্য শুরুতে তিনি কারো কাছ থেকে সহযোগিতা-অর্থায়ন পাননি, এমনকি প্রকাশকও পাননি। যারা তাকে সমর্থন করেছেন, তারাও ‘সরকারের চাপের কারণে’ তাকে ছেড়ে গেছেন।

শেষ পর্যন্ত ‘কিছু বন্ধু পরোক্ষভাবে’ বইটি প্রকাশে সহযোগিতা করেছেন জানিয়ে বিচারপতি সিনহা বলেন, তাদের নাম তিনি বইয়ের ভূমিকায় লেখেননি, কারণ ‘দেশে আত্মীয়স্বজনের সমস্যা হতে পারে’ মনে করে তারা নাম না দিতে অনুরোধ করেছেন। সেভাবে কারো ‘সহযোগিতা না পাওয়ায়’ এ বইয়ে বেশ কিছু ভুলত্রুটি রয়ে গেছে এবং নির্ঘণ্টও তৈরি করতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি সিনহা। তিনি বলেন, শিগগিরই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা হবে, সেখানে এসব ত্রুটি সংশোধনের পাশাপাশি ‘আরো অনেক তথ্য’ সন্নিবেশিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, নিউইয়র্কের জামায়াতপন্থিরা এস কে সিনহার বইয়ের প্রচারের জন্য কাজ করছে। বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দলটির সাহায্য পেয়েছেন সিনহা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত শুক্রবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আপনারা একটু খুঁজে বের করেন না, বইটা লেখার পেছনে কার হাত আছে? এই বইটার পাণ্ডুলিপি কতবার বাংলাদেশে গেছে? কার কাছে গেছে বা তিনি যে লঞ্চটা করবেন; এই লঞ্চিংয়ের টাকা-পয়সা খরচটা কে দিচ্ছে? বাংলাদেশ থেকে কেউ দিচ্ছে কি না বা আপনাদের মতো কোনো সাংবাদিকরা এর পেছনে আছে কি না? কোনো সংবাদপত্র আছে কি না বা তারা কতটুকু সাহায্যপত্র দিচ্ছে? আমাদের কোনো আইনজীবী এর স্ক্রিপ্ট দেখে দিচ্ছে কি না? কোন পত্রিকা বা পত্রিকার মালিকরা তাকে এই মদতটা দিচ্ছে? স্ক্রিপ্টটা লেখার ব্যাপারে কোনো সাংবাদিক, কোন পত্রিকার, কে এটা সাহায্য করছে?’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিনহা বলেন, আমি একটি বই লিখেছি, সেই বই প্রকাশের ক্ষেত্রে যদি কারো ভূমিকা থাকে, কেউ যদি সহায়তা করেন, সেটি কি অপরাধ? এই বই নিয়ে এত ভয় কিসের? কেন তিনি আমার মুখ বন্ধ রাখতে চান- পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন সিনহা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads