• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

মেডিকেল বোর্ড গঠন

বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়া

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ অক্টোবর ২০১৮

চিকিৎসার জন্য কারাবন্দি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় ৬১১ নম্বর কেবিনে আছেন তিনি। আজ রোববার দুপুর থেকে তার চিকিৎসা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. হারুন অর রশীদ। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হবে। খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগে তার চিকিৎসা দরকার। তার সুস্থ হওয়া জরুরি। দলের নেত্রীকে দেখার জন্য হাসপাতালে জড়ো হয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। তবে তাদের কাছে ঘেঁষতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গতকাল সকালেই খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার কথা থাকলেও রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে আসায় তাকে বিকালে আনা হয়। বেলা ৩টা ১০ মিনিটে পুরান ঢাকার কারাগার থেকে তাকে রমনা থানা পুলিশের একটি সাদা রঙের প্যাট্রল কারে করে নিয়ে আসা হয়। তার গাড়ির সামনে-পেছনে পুলিশ, র্যাবের বেশ কয়েকটি গাড়ি ছিল। ছিল একটি অ্যাম্বুলেন্সও। এ সময় কেন্দ্রীয় কারাগার, পুরান ঢাকা, আলিয়া মাদরাসা চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। তার গাড়ি বিকাল পৌনে ৪টায় হাসপাতালে পৌঁছায়। গোলাপি রঙের শাড়ি পরিহিত বিএনপি নেত্রী গাড়ি থেকে নেমে হুইলচেয়ারে বসেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কেবিন ব্লকের ছয় তলায়। খালেদার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমও হাসপাতালে এসেছেন। কয়েকটি ব্যাগও এ সময় নামানো হয় গাড়ি থেকে।

বিএসএমএমইউতে আনার পর পরিচালক ব্রি. জে. হারুন অর রশীদসহ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। হাসপাতাল পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি নেত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জলিল চৌধুরী কেবিনে গিয়ে তাকে দেখে এসেছেন। আজ রোববার দুপুর ১টার পর বোর্ডের সভা হবে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এরপর চিকিৎসা শুরু হবে। এখনই তার স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

খালেদা জিয়াকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। হাসপাতালে তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, আনসারসহ সরকারের সব এজেন্সি এ ব্যাপারে সহায়তা দিচ্ছে।

মেডিকেল বোর্ড : প্রফেসর ডা. আবদুল জলিল চৌধুরীর অধীনে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন রিউমোটলজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, হূদরোগ বিভাগের অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক নকুল কুমার দত্ত ও ফিজিক্যাল মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ।

বোর্ড নিয়ে অসন্তোষ : হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠন করা বোর্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ ছিল খালেদা জিয়ার জন্য নতুন মেডিকেল বোর্ডে ড্যাব (বিএনপি) ও স্বাচিপের (সরকারদলীয় চিকিৎসকদের সংগঠন) কোনো সদস্য থাকতে পারবেন না। খালেদা জিয়ার মতামত নিয়ে তার পছন্দের তিনজন চিকিৎসককে বোর্ডে রাখতে হবে। কিন্তু সে অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়নি। খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার আগে তার মতামত না নিয়ে এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

‘হাসপাতাল নিয়ে ভাবছি না, তার সুচিকিৎসা চাই’- মির্জা ফখরুল : খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার খবর শুনে সেখানে ছুটে যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘কোন হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাবছি না, আমরা তার সুচিকিৎসা চাই।’

ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের যেতে দেওয়া হয়নি খালেদার কেবিনে : খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে নেওয়ার পর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা দেখা করতে যান। তবে পুলিশ তাদের কেবিনে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে সন্ধ্যা ৬টায় খালেদা জিয়ার বড় বোনের ছেলে ডা. মামুনকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেওয়া হয়। রাতেও তিনি বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

নেত্রীকে একনজর দেখতে নেতাকর্মীদের ঢল : খালেদা জিয়াকে আনা হবে এমন খবরে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। তারা তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের বিএসএমএমইউর পূর্ব দিকের গেট দিয়ে বের করে দেয়।

হাসপাতালের ভেতরে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শিরিন সুলতানা, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি নেত্রীকে জেলে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাদের কাছে আপাতত কোনো নির্দেশনা নেই। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রোগীর স্বজনদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।

গত ৪ অক্টোবর উচ্চ আদালত বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করাতে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেন। ইউনাইটেড বা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে নির্দেশনা চেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া রিট করেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এরপর থেকে খালেদা জিয়া নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads