• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
হার্ড লাইনে সরকার

লোগো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

রাজনীতি

হার্ড লাইনে সরকার

  • মাহমুদ আল ফয়সাল
  • প্রকাশিত ২৪ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ ধরনের প্রস্তুতি হাতে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারও চায় বিজয় দিবসের কাছাকাছি নির্বাচন হোক। আগামী ১ নভেম্বর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৪ অথবা ৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

regular_4327_news_1540349177

নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতিতে। সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দলগুলো সংলাপের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সংলাপের অপরিহার্যতা তুলে ধরে তারা জনমত তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ‘সংলাপের প্রয়োজন নেই’ মন্তব্য করে সরকার ‘যথাসময়ে’ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিকল্প নেই। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংলাপের প্রয়োজনীয়তা নেই।

বর্তমান সময়কে ‘রাজনীতির ক্রান্তিকাল’ বলে অভিহিত করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবতার নিরিখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার এখন হার্ড লাইনে রয়েছে। তবে সংলাপ ইস্যুতে দুই ধরনের মতামত দিয়েছেন তারা। সংলাপের প্রয়োজনীয়তা নেই দাবি করে একপক্ষ বলছে- দেশে নির্বাচনী শানাই বেজে উঠেছে। সরকার ও বিরোধী দল সবাই এখন নির্বাচনী কার্যক্রমে ব্যস্ত। প্রার্থী মনোনয়ন, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে ব্যস্ত তারা। এ সময় সংলাপের কোনো অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে তারা বলেন, নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগের রয়েছে। তবে অন্যপক্ষের দাবি, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া খুবই জরুরি। এ নিয়ে কালক্ষেপণ কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সংলাপ এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পায়ের তলায় মাটি নেই বলেই সরকার হার্ড লাইনে রয়েছে। তবে শুরু থেকেই এই সরকার অনমনীয় মনোভাব দেখিয়ে আসছে; তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতিকৃতি নেই। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রাণ হচ্ছে সংলাপ। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে সংলাপ অপরিহার্য। কিন্তু সরকার বার বার তা অস্বীকার করছে।

‘জনজীবনে একটা অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে’- দাবি করে প্রফেসর এমাজউদ্দীন বলেন, ভুতুড়ে মামলা দেওয়া হচ্ছে। কাকে কখন ধরে নিয়ে যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমনি পরিস্থিতিতে কীভাবে ভোট হবে, মানুষ ভোট দিতে পারবে কি না- এসব নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্বাচনে যাতে কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া। কিন্তু আলোচনা ছাড়া তারা সেই নিশ্চয়তা দেবেন কি করে?

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যই সরকার হার্ড লাইনে রয়েছে এবং এটা যথার্থই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্পষ্ট করে বলেছেন, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। সংবিধান আছে, সাংবিধানিক বিধান মোতাবেক সবকিছু হলে তো কারো কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে শক্ত-সামর্থ্য বিরোধী দল থাকা জরুরি। বিএনপি দীর্ঘদিন বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে না। আর জাতীয় পার্টি- সে তো না ঘরকা না ঘাটকা। তারা তো ব্যস্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষি নিয়ে। তিনি বলেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।

অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নির্বাচন সন্নিকটে, তফসিল ঘোষণা সময়ের ব্যাপার। ‘ট্রানজিশন পিরিয়ডের’ এই সময়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর থাকে তস্কর শ্রেণি। তারা যাতে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে এবং কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সরকারের হার্ড লাইনে থাকাটা খুবই জরুরি ছিল। তিনি বলেন, শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর।

‘সংলাপের অতীত ইতিহাস সুখকর নয়’- দাবি করে অধ্যাপক কলিমুল্লাহ বলেন, চেঞ্জিং দ্য চিমেরা’র মতো মরীচিকার পেছনে ফ্রুটলেস ঘুরে লাভ নেই। তিনি বলেন, এখন সংলাপের সময় নয়, এখন সময় নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার। তফসিল ঘোষণার পর তো নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে যাবে।

নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গ : সংলাপ নিয়ে রাজনৈতিক এই বিতর্কের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। এতদিন নির্বাচনকালীন সরকার ছোট করার কথা থাকলেও সেই ধোঁয়ায় জল ঢেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা ছোট না করার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে চলা দেশগুলোতে নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভা পরিবর্তন করা হয় না। তিনি বলেন, ‘কাকে বাদ দেব- সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না।’ তার মতে, নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা ছোট করলে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হতে পারে, যা কাম্য নয়। তবে বিরোধী দল চাইলে মন্ত্রিসভা ছোট করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

এ ব্যাপারে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, প্রথাগতভাবে নির্বাচনের আগে ও পরে মন্ত্রিসভার কাঠামো অভিন্ন থাকে। প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন, বিরোধী দল চাইলে ছোট করা হবে। তবে জানা মতে, বিরোধী দল তেমন কোনো দাবি তোলেনি। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার কাঠামো কী হবে, তা প্রধানমন্ত্রীর ওপরই নির্ভর করে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মনে করেন, মন্ত্রিসভা ছোট করার কথা আলোচনায় ছিল। সেটা করাই ভালো। বিরোধী দল চাইলে প্রধানমন্ত্রী তেমনটি করার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ২-৩ মাসের জন্য মন্ত্রিসভা ছোট করলে, কিংবা এক মন্ত্রীকে ২-৩টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলে তা উন্নয়নে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads