• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
জনদাবি উপেক্ষার শাস্তি কল্পনাতীত : ড. কামাল

চট্টগ্রামে নগরীর নূর আহমেদ সড়কে গতকাল আয়োজিত সমাবেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা

ছবি - বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

ভয় পেয়েছে সরকার : মির্জা ফখরুল

জনদাবি উপেক্ষার শাস্তি কল্পনাতীত : ড. কামাল

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৮

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, দেশের জনগণ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। জনগণ হাত তুলে রায় দিয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত অমান্য বা উপেক্ষা করলে যে শাস্তি আপনারা পাবেন তা কল্পনাও করতে পারবেন না। গতকাল চট্টগ্রামে নগরীর নূর আহমেদ সড়কে বিএনপি কার্যালয়ে নাসিমন ভবনের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

চট্টগ্রাম বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে উত্তর-দক্ষিণ মুখে নির্মাণ করা হয় মঞ্চ। মঞ্চের পেছনে টাঙানো ব্যানারে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিসহ সাত দফা দাবির কথা লেখা ছিল। এছাড়া খালেদা জিয়া এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মুক্তির পাশাপাশি তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিলের দাবি সংবলিত দুটি ডিজিটাল ব্যানারও টানানো হয় সমাবেশস্থলে। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার আলোকচিত্র সংবলিত ব্যানার-প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে। কর্মসূচি ঘিরে নগরীতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সংঘাত মোকাবেলায় পুলিশ জলকামান, সাঁজোয়া যান প্রস্তুত রাখে। 

সমাবেশে ড. কামাল হোসেন বলেন, সরকার হলো সেবক। আর জনগণ হলো দেশের মালিক। আজ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসভা করতে দেওয়া হয়নি। এজন্য মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এটার কৈফিয়ত আদায় করতে হবে। তাদের শাস্তি দিতে হবে যারা এ কাজটা করেছেন। লালদীঘি ময়দান কেন দেওয়া হয়নি- এটার জবাব দিতে হবে। এটা কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়। জনগণ এটার মালিক।

তিনি বলেন, সরকার পদে পদে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। মিছিল, সমাবেশ জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। তাদের সভা-সমাবেশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রিতভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিচালনার চেষ্টা করছে। লালদীঘিতে সমাবেশ হলে সবাই বসে কথা শুনত। রাস্তার ওপর সমাবেশে এসে একটানা চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বক্তব্য শোনা কষ্টকর। যারা এই কষ্ট দিল তাদের বিচার জনতার আদালতে হবে। ২০১৪ সাল থেকে সংবিধান লঙ্ঘন হয়ে আসছে।

সরকারকে উদ্দেশ করে ড. কামাল বলেন, সময় থাকতে ৭ দফা দাবি মেনে নিন। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে অসম্ভবকে সম্ভব করে। কীভাবে ক্ষমতায় আছেন তার জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, জনগণ সংবিধানের মালিক। ৭ দফা দাবির বিষয়ে গণরায় পাওয়া গেছে। সমাবেশের মাধ্যমে চট্টগ্রামে গণরায় পাওয়া গেল। এর আগে ২৪ অক্টোবর সিলেটে গণরায় পাওয়া গেছে। এরপর রাজশাহী ও ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে জনরায় পক্ষে আসবে।

গণফোরাম নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়ার কী আছে? আর কত চাইব? মুক্তি চাইতে হবে কেন? মুক্তি দিতে হবে। যদি অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া না হয় আর তার কিছু হয়, তাহলে এর জন্য জবাব দিতে হবে। দেশের জনগণ বিচার চাইবে।

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ভয় পেয়েছে। যে কারণে কাউকে সমাবেশ করতে দেয় না। প্রশাসনের প্রতি অভিযোগ করে তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ লালদীঘির ময়দানে হওয়ার কথা ছিল। প্রশাসন সরকারকে সমর্থন করেছে। আমাদের সমাবেশে পদে পদে বাধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও জনস্রোত হয়ে গেছে পুরো এলাকা।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নিজেরা নাশকতা-সহিংসতা করে। তারপর বিরোধী দলের ওপর দোষ দেয়। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না। আমরা ৭ দফা দাবি আদায় করে তবেই ফিরব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন তিনি না থাকলেও জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে। স্বৈরাচার সরকারের কারাগারে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী বন্দি রয়েছেন। সারা দেশে নতুন করে পাঁচ হাজার মামলা দিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পায়ের নিচে মাটি নেই বলে সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বন্দি করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- জনগণকে জিম্মি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বন্দুক, পিস্তল দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বপ্ন পাকিস্তানিরাও দেখেনি।

সমাবেশে অংশ নিতে ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা গতকাল সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছেন। গত শুক্রবার রাতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ জোট নেতারা চট্টগ্রামে আসেন। সকালে তারা শাহপরানের মাজার জিয়ারত করেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মো. ইব্রাহিম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের সদস্য সচিব মোস্তাফা আমিন, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহম্মেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু প্রমুখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads