• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
সবার দৃষ্টি গণভবনের দিকে

গণভবন

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

সবার দৃষ্টি গণভবনের দিকে

#এবার অন্ধকারে আলোর দেখা - প্রফেসর এমাজউদ্দিন

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর ২০১৮

নানা নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত সংলাপ হচ্ছে। দেশবাসীর দৃষ্টি এখন সংলাপের দিকে। তবে এবারের সংলাপ আয়োজনে দৃশ্যত বিদেশিরা নেই। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিদেশিদের মধ্যস্থতায় এদেশে যত সংলাপ হয়েছে তার কোনোটি সফলতার মুখ দেখেনি। এবারো আসন্ন সংলাপ সফল হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ বেশিরভাগ মানুষ প্রত্যশা না করলেও শেষ পর্যন্ত সংলাপ হচ্ছে তাতেই খুশি। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি অন্ধকার ঘরে ঢুকে আছে। এই সংলাপের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সে অন্ধকারে একটি আলোর রেখা পড়েছে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটময় মুহূর্তে সংলাপ হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৭৬ সালের ২২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠক হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালের ৯ এপ্রিল বঙ্গভবনে সাত দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন এরশাদ। তখন সাত দলের পক্ষ থেকে ৩৩ দফা দাবিনামা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সংলাপ ফলপ্রসূ না হওয়ায় সাত দলের নেতারা সংলাপকক্ষ ত্যাগ করেন। পরদিন বঙ্গভবনে জামায়াতের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এরশাদ। ১১ এপ্রিল ১৫ দলের নেতাদের সঙ্গে বঙ্গভবনে এরশাদের সংলাপ হয়েছিল। এক দিন পর ১২ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি এরশাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার একান্ত বৈঠক হয়। ১৪ এপ্রিল বঙ্গভবনে এরশাদের সঙ্গে ১৫ দলের দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। ২৮ এপ্রিল বঙ্গভবনে আবারো আরো ১০ দলের সঙ্গে সংলাপ হয় এরশাদের। কিন্তু সেসব সংলাপ শেষ পর্যন্ত কোনো ফল দেয়নি। ১৯৮৭ সালে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সংলাপের জন্য এরশাদ কয়েক দফা আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধী রাজনীতিকদের কাছ থেকে সাড়া পাননি।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর আবারো আওয়ামী লীগসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ১৯৯৪ সালে মাগুরার উপনির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে। সেবারই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে গেলে ১৯৯৪ সালের ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের দুই উপনেতার মধ্যে বৈঠক হয়েছিল। এ ছাড়া ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের বৈঠক হয়। উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আলোচনার। তখনকার কমনওয়েলথ মহাসচিব এনিয়াওকুর এমেকা রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ওই বছরের ১৩ অক্টোবর ঢাকায় এসে দুই নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কমনওয়েলথ মহাসচিবের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে সংলাপে দুই নেত্রী আনুষ্ঠানিক সম্মতিও দিয়েছিলেন। সেটিও সফল হয়নি। এমেকা পরে তারই বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ানকে পাঠিয়েছিলেন, যিনি বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক সংলাপ তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করেছিলেন। নিনিয়ান একটি রাজনৈতিক ফর্মুলাও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ফর্মুলা তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ মেনে না নেওয়ায় সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে আবার বিরোধী দল সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিল। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলের সেই সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তদানীন্তন শাসকদলীয় অন্যতম শীর্ষনেতা ও সংসদ উপনেতা একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগের তা প্রত্যাখ্যানের জেরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। তা নিরসনে বাংলাদেশে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। তিনি ফিরে যান ফলপ্রসূ কোনো ভূমিকা রাখতে না পেরে।

২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের মধ্যে প্রায় তিন সপ্তাহব্যাপী সংলাপ হয়েছিল নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৯ দফা তুলে ধরা হয়। ওই সময় মান্নান ভূঁইয়া ও আবদুুল জলিলের মধ্যে ছয় দফা বৈঠক হলেও সমঝোতা হয়নি। ফলে দুজনই তাদের দলের শীর্ষনেত্রীর কাঁধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের শেষ দিকে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে বিএনপি। সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো তিনবার ঢাকায় সফর করেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি ৬ দিন ঢাকায় অবস্থান করেন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সরকার ও বিরোধী দলের প্রথম বৈঠকটি হয় ১০ ও ১১ ডিসেম্বর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তারানকো। তৃতীয় বৈঠক হয় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নিল ওয়াকারের উপস্থিতিতে। কিন্তু কোনো বৈঠকেই সমাধান আসেনি।

স্বাধীনতার পর থেকে একটি সংলাপ সফল না হওয়ার পরও বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সংলাপের দাবি করে আসছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা তাতে সাড়া দেয়নি। এবার ঐক্যফন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়ার পর সেই ডাকে সাড়া দেয় ক্ষমতাসীনরা। এদিকে গতকাল যুক্তফ্রন্টের প্রধান ডা. বি. চৌধুরীকেও সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

বিগত সময়ে সংলাপ ব্যর্থ হলেও এবার ক্ষমতাসীনরা সংলাপে বসতে রাজি হওয়ায় অন্ধকারে আলো দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি অন্ধকার ঘরে ঢুকে আছে। এই সংলাপের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সে অন্ধকারে একটি আলোর রেখা পড়েছে। এটি ইতিবাচক দিক তা স্পষ্ট। এর ফল হবে না হবে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু সংলাপ যে হচ্ছে এটাই বড়। একসঙ্গে বসার একটি সূচনা হচ্ছে তা সামনের দিকে গেলেই রাজনীতির চেহারা পাল্টে যাবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads