• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
সবার দৃষ্টি আজ গণভবনে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়

ছবি : -পিআইডি

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপ

সবার দৃষ্টি আজ গণভবনে

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০১৮

সবার দৃষ্টি আবার গণভবনের দিকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম দফায় সংলাপের ‘অসম্পূর্ণ আলোচনা সম্পূর্ণ’ করতে আজ বুধবার সকালে আবার ‘সীমিত পরিসরের’ সংলাপ হচ্ছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দলের শীর্ষ নেতারা আলোচনার জন্য শেরেবাংলা নগরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বেলা ১১টায় বসছেন এক টেবিলে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাত্র একদিন আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফার সংলাপকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।

রাজনীতিবিদরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান মতভিন্নতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন- এমন প্রত্যাশায় গভীর আগ্রহ নিয়ে সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে আজকের দ্বিতীয় দফার সংলাপের দিকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বিশেষ আগ্রহ নিয়ে চোখ রাখছেন আজকের সংলাপে। প্রথম দফায় গণভবনে সাড়ে তিন ঘণ্টা দীর্ঘ আলোচনা হলেও দুই পক্ষের মধ্যে তা শেষ হয় অনেকটা সমঝোতা ছাড়াই। সে জন্যই দ্বিতীয় দফার সংলাপ নিয়ে এত আগ্রহ। আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত করার লক্ষ্যে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।  নির্বাচন অবাধ করার লক্ষ্যে সংবিধানের মধ্য থেকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আজকের সংলাপে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন দলটির নেতারা। সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার আগে আজকের সংলাপকে গুরুত্ব দিচ্ছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও। সরকার দ্বিতীয় দফা সংলাপে দাবি-দাওয়া না মানলে তারা আন্দোলন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য মেনে না নিলে সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকিও তারা দেন। তাদের দাবি, প্রথম বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে ঐক্যফ্রন্ট উপস্থাপিত ৭ দফার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও কোনো ‘সিদ্ধান্ত’ হয়নি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে হতে যাওয়া আজকের সংলাপে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের আগে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রস্তাব দিতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার বহাল থাকা, সংসদ বহাল রাখা এবং সংবিধানের বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ একাট্টা। ওই তিন ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছালে এবারের নির্বাচনকালীন সরকারে ঐক্যফ্রন্টের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন সরকারে মূলত আওয়ামী লীগ থেকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কারণে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গতকাল টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারে অনির্বাচিত মন্ত্রীদের জায়গা নেই।’ তবে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা হলে নির্বাচনকালীন সরকারে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী থাকতে পারেন।

কারণ, সংবিধান অনুযায়ীও এক-দশমাংশ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারে রাখার বিধান আছে। এছাড়া বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারভুক্ত। তিনিও চান সমঝোতার ভিত্তিতে এবারের নির্বাচনকালীন সরকারকে সর্বদলীয় রূপ দিতে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকলেও ঐক্যফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত দল থেকে অন্তত পাঁচজনকে মন্ত্রিসভার সদস্য করার প্রস্তাব আজ আসতে পারে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপি নেতাদের নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে তখনকার বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ও তাদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে শেখ হাসিনা নিজ থেকে প্রথমে ওই প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী ওই সময় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে মন্ত্রিসভায় তার দলের প্রতিনিধি দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

অন্য একটি সূত্র জানায়, আজকের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছুই আগ বাড়িয়ে বলা নাও হতে পারে। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি উত্থাপন করা হলে আলোচনার টেবিলেই এর সিদ্ধান্ত হবে। ঐক্যফ্রন্ট জোরালোভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলে প্রধানমন্ত্রী তা ইতিবাচক হিসেবে দেখবেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংলাপের আগেই এমন ইঙ্গিত দেন। সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টসহ অন্য রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক সংলাপে উঠে আসা দাবিগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল ও সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে বিশ্লেষণ অব্যাহত রয়েছে। দাবিগুলোকে চার ভাগে ভাগ করে মূল্যায়ন করেছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, কিছু দাবি আদালতের বিষয়, কিছু নির্বাচন কমিশনের আর কিছু দাবি সংবিধানের বাইরে। এ তিন ধরনের দাবি সরকারের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে কয়েকটা দাবি প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতাবলে পূরণ করতে পারেন। এসব দাবির অনেকটাই ইতোমধ্যে পূরণ করেছে সরকার।

সূত্র মতে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য ঐক্যফ্রন্টের দাবি অসাংবিধানিক। এ মুহূর্তে সংবিধান পরিবর্তন সম্ভব নয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পেছানোর এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। এখানে সরকারের কিছু করার নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads