• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
নির্দেশের পরই চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর পদত্যাগ

ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

নির্দেশের পরই চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর পদত্যাগ

# শূন্য পদে মন্ত্রিত্ব চায় জাতীয় পার্টি # তফসিলের পর মন্ত্রীদের সুবিধা বাদ

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সকালে নির্দেশ পাওয়ার পর সন্ধ্যায় পদত্যাগ করেছেন মন্ত্রিসভার চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। তারা হলেন- ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তাদের পদত্যাগপত্রগুলো জমা দেওয়া হয়েছে বলে পদত্যাগী চার মন্ত্রীর দফতর থেকে জানা গেছে। সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত নন এবং বিশেষ বিবেচনায় সরকারের মন্ত্রিপরিষদে রয়েছেন, তাদেরকেই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বলা হয়ে থাকে।

পদত্যাগের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব কিংবা বিভাগ থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। গতকাল দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুত। এবার নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় কতটা পরিবর্তন আসতে পারে সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকালীন সরকার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক করবে। এ সময় বৈঠক চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতি বা উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা রয়েছে ৫৩। অর্থাৎ চারজনের পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভার সংখ্যা ৪৯।

গতকাল মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই নির্দেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে হবে। কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ৮ নভেম্বর ঘোষণা হতে পারে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হতে পারবে না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী তার অনির্বাচিত মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে বার্তা দিতে চাইলেন যে, নির্বাচনকালীন সরকারে কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি মন্ত্রী হচ্ছেন না। এজন্যই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই পদত্যাগ করলেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এই সরকারের শুরু থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাজোট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নূরুল ইসলাম বিএসসি ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ইয়াফেস ওসমান ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তৎকালীন বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টের তিন দফা দাবির অন্যতম ছিল নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কিংবা সংসদের বাইরের বিরোধী দল থেকে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার। দাবির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগ পাওয়া চার মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগী মন্ত্রিদের শূন্যপদে নির্বাচনকালীন সরকারে কে দায়িত্ব পালন করবেন সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেননি। নির্বাচনকালীন সরকারে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে দাবি করা স্বরাষ্ট্র কিংবা জনপ্রশাসনে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে কি না অথবা অন্য কেউ এই দায়িত্ব পালন করবেন কি না তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল গণভবনে বলেছেন, মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত মোতাবেকই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বলেছেন। সংসদে নির্বাচিত নন এবং বিশেষ বিবেচনায় সরকারের মন্ত্রিপরিষদে রয়েছেন, তাদেরকেই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বলা হয়।

এদিকে মন্ত্রিসভায় এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টি বলছে, পদত্যাগের পর খালি হওয়া পদগুলোতে তাদের দল থেকে অন্তত চারজন সংসদ সদস্যকে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টি থেকে নতুন করে চারজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য মন্ত্রিত্ব পাবেন কি না তা প্রধানমন্ত্রী খোলাসা করেননি। তবে এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে, আসন্ন নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট হচ্ছে না এবং তাতে কোনো অনির্বাচিত প্রতিনিধি মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন না। এতে ধরেই নেওয়া যায়, নির্বাচনকালীন সরকারে ঐক্যফ্রন্ট থেকে অথবা অনির্বাচিত কেউ নির্বাচনী সরকারে মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, টেকনোক্র্যাট মন্ত্রিদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়তো নতুন কোনো ভাবনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। তবে এবার নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় কতটা পরিবর্তন আসতে পারে সে বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।

শূন্য পদ চায় জাতীয় পার্টি : নির্বাচনকালীন সরকার থেকে টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগ পাওয়া চার মন্ত্রীর পদত্যাগের পর জাতীয় পার্টি বলছে, এই চার পদে তাদের দল থেকে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রী পদ পূরণ করতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রী নিয়োগের জন্য চারজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এদের মধ্যে জিয়াউদ্দিন বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ ও সালমা ইসলাম উল্লেখযোগ্য। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না তা ওই মন্ত্রী জানাতে পারেননি। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তখনকার নির্বাচনকালীন সরকারেও জাতীয় পার্টি থেকে নতুন করে কয়েকজন মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

এ সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার : গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার। তবে তফসিল ঘোষণার পর এ সরকারের কার্যপরিধি কমে যাবে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ সময় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রীদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা না নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী সবাই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলবেন। সরকারি গাড়ি ব্যবহারসহ কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেবেন না। তিনি আরো বলেন, গত নির্বাচনের আগে ছোট আকারে নির্বাচনকালীন সরকার করার কথা ভাবা হয়েছিল। কারণ তখন সংসদে বিএনপি ছিল। তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে আনার জন্য সে চিন্তা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এবার তো সংসদে বিএনপি নেই। আর নির্বাচনকালীন সরকারে অনির্বাচিত কাউকে রাখা যাবে না। তাই এ সরকারকে আর ছোট করার কোনো দরকার নেই।

তফসিলের পর মন্ত্রীদের সরকারি সুবিধা নয় : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রীদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এই নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী এ তথ্য জানিয়ে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার ভোটের তফসিল হতে যাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ঘোষণার পর ওই সংসদেই সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়। তবে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে এই ব্যবস্থায় সব প্রার্থী সমান সুযোগ পাবেন না। বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা তাদের নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে ভোটে প্রভাব ফেলবেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে, ভোটে কেউ প্রভাব ফেলবে না। সম্প্রতি সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, মন্ত্রীরা নিরাপত্তা ছাড়া কোনো সরকারি সুবিধা পাবেন না, এমনকি তারা পতাকাও ব্যবহার করবেন না। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, আইন অনুযায়ী সবাই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলবেন। সরকারি গাড়ি ব্যবহারসহ কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেবেন না। আইন অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রচারণাকালে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন না মন্ত্রী বা এমপিরা। বৈঠকে ২০১৩ সালের মতো নির্বাচনকালীন আলাদা কোনো সরকার গঠন হবে কি না, এ নিয়েও কথা হয়। প্রধানমন্ত্রী জানান, পাঁচ বছর আগের ব্যবস্থা এবার ফিরবে না। বলেন, এ সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads