• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
রোডমার্চ পদযাত্রার হুশিয়ারি

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে শীর্ষ নেতারা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

রোডমার্চ পদযাত্রার হুশিয়ারি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা # দাবি পূরণে আপসহীন সংগ্রাম চলবে : ড. কামাল # নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে : ফখরুল # একদিকে সংলাপ অন্যদিকে গণগ্রেফতার চলছে : মওদুদ # গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে : আ স ম রব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ বুধবারের সংলাপে দাবি না মেনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অভিমুখে পদযাত্রা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া সংলাপ সফল না হলে এবং দাবি না মানলে ৮ নভেম্বর রাজশাহী অভিমুখে রোডমার্চ করা হবে। ৯ নভেম্বর রাজশাহীতে জনসভা হবে। এরপর একে একে খুলনা ও বরিশাল অভিমুখে রোডমার্চ হবে।

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় সভাপতির ভাষণে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে বলেন তিনি।

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা দাবি আদায়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত গতকালের জনসভা দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর দেড়টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভার কাজ শুরু হয়। কোরআন তেলাওয়াত করেন ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা নেসার উদ্দিন। পরে সদ্য প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সম্মিলিত সঙ্গীতসহ গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কর্মীরা।

‘কৃত্রিম’ যানবাহন সঙ্কট ও পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে রাজধানীসহ ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই জনসভাস্থলে আসতে থাকেন। ঐক্যফ্রন্টের জনসভা উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন, বিজয়নগর, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা পর্যন্ত হাজারো নেতাকর্মীর ঢল নামে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত লাখো নেতাকর্মী ‘বন্দি আছে আমার মা, ঘরে ফিরে যাব না’, ‘হামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। তাদের হাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ফেস্টুনও দেখা যায়।

জনসভায় ঐক্যফন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার আগে বলেছিলেন- কারাগারকে তিনি ভয় পান না। দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন তিনি। আজ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়াতেই দুঃশাসন থেকে মুক্তি, জনগণের শাসন নিশ্চিত করা হবে।

ঐক্যফ্রন্টের এই মুখপাত্র বলেন, আগামীকাল (আজ) আবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছোট সংলাপ হবে। ফ্রন্ট সংলাপে বিশ্বাস করে। কিন্তু নাটক করলে চলবে না। অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীকে সরে যেতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ফ্রন্টের সাত দফা দাবি মেনে নিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৩৭১টি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ২৫ লাখ নেতাকর্মীকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের জন্য কাজ করে এমন ২৫ নেতাকর্মীকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো সংবাদ নেই। অনেকে কারাগারে আছেন। অন্যায়ভাবে দৈনিক নিউ নেশনের সম্পাদক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে কারাগারে রাখা হয়েছে। বিএনপিদলীয় নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হতে চান না, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতে চান, জনগণের সরকার গঠন করতে চান।

আপসহীন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট : জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মালিক কোনো মহারানী-মহারাজা নন। দেশের মালিক জনগণ। জনগণের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপসহীনভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাবে ফ্রন্ট। আমরা দেশের মালিক হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকব। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেব। সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। ভোটকেন্দ্রে পাহারা দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে যা হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। স্বাধীন বাংলাদেশে এটা চলতে পারে না। যাকে-তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকে বন্দি রাখলে দেশে গণতন্ত্র থাকে না। বেগম জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দিতে হবে।

সমাবেশে আসা ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের পুলিশি বাধার সমালোচনা করে ড. কামাল বলেন- যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়রানি করছে, তা অপরাধ, মহা-অপরাধ। হয়রানি বন্ধ করতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে এটা চলতে দেওয়া যায় না। কোনো নির্বাচিত সরকার এভাবে গ্রেফতার-হয়রানি করতে পারে না। অনির্বাচিত সরকার তো নয়ই। কাউকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা অপরাধ। তারা যে অন্যায় করছে একদিন এর জবাব দিতে হবে।

ফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, সরকারের কথার এক পয়সার দাম নেই। সেটা গত পাঁচ বছরে প্রমাণিত হয়েছে। অনির্বাচিত সরকার সংবিধানের ১৬ আনাই উপেক্ষা করেছে।

জনসভায় আসতে নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তা বন্ধ করে, বাস বন্ধ করে জনগণকে নিষ্ক্রিয় করা যাবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, ঐক্যবদ্ধ থাকব। সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীনতার মানে জনগণ ক্ষমতার মালিক।

গায়েবি মামলা প্রত্যাহার না করলে খবর আছে : জনসভার প্রধান বক্তা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন- খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, গায়েবি মামলা বন্ধ করতে হবে, নাইলে খবর আছে। জনতার আদালতে বিচার হবে।

তিনি বলেন, এটা কোনো দলের জনসভা নয়, এটা জাতীয় ঐক্যের জনসভা। সরকারকে বলব, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে দেখে যান, মানুষ কীভাবে জেগে উঠেছে। এখন আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করলে হবে না, গ্রামে-গঞ্জে যেতে হবে। দাবি মেনে নিন, নাইলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

উন্নয়নের কথা বলে লাগামহীন দুর্নীতি করেছে সরকার : জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার ১০ বছর দেশকে শোষণ করেছে। উন্নয়নের কথা বলে লাগামহীন দুর্নীতি করেছে। নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্যই এবারো প্রহসনের নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু এবার সেই তামাশার নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মাদ ইবরাহিমসহ ফ্রন্টের নেতারা।

গ্রেফতারের অভিযোগ : বিএনপির দফতর সূত্র জানিয়েছে, ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানী ঢাকা থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীরা ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, শাহবাগ, রমনা, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা ও ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads