• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
কঠিন সময়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা

ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

কঠিন সময়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা

আদালতে বাতিল হয়ে যাচ্ছে প্রার্থিতা, ছুটে যাচ্ছে প্রতীক, অনেককে যেতে হচ্ছে জেলে

  • সাঈদ আহমেদ
  • প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

কঠিন এক সময় পার করতে হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের। আদালতের আদেশে একের পর এক কমছে জোটের প্রার্থী। বাতিলের পাশাপাশি স্থগিতও হচ্ছে অনেকের প্রার্থিতা। কোনো কোনো আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থী থাকছে না সরকারবিরোধী জোটটির। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রার্থিতা ঠিক থাকলেও ছুটে যাচ্ছে প্রতীক। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে ফ্রন্টের মূল দল ও শরিক দলের প্রার্থীদের আইনি জটিলতা। ফলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থীরা যেখানে মহাপ্রতাপে নির্বাচনী মাঠে তৎপর, ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা সেখানে ঘুরছেন আদালতের বারান্দায়। নতুন করে কারাগারেও যাচ্ছেন কেউ কেউ।

একের পর এক প্রার্থিতা ও প্রতীক হারানোর ঘটনায় পাল্টে যাচ্ছে আসনগুলোর ভোটের হিসাব-নিকাশ। এ প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের দেওয়া পৃথক কয়েকটি আদেশ-নির্দেশ। এর ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশ কয়েকজনের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তারা হলেন জামালপুর-৪ আসনের শামীম তালুকদার, জয়পুরহাট-১ আসনে ফজলুর রহমান, ঝিনাইদহ-২ আসনে অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে বশিরুল্লাহ জুরু। এদের মধ্যে শামীম তালুকদার, ফজলুর রহমান ও অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে। একই আদালত পৃথক আদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা- আখাউড়া) আসনে বিএনপির প্রকৌশলী মুসলেম উদ্দিনের প্রার্থিতা স্থগিত করেন। একই আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী জসিমউদ্দিন রিট করেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, মুসলেম উদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। হাইকোর্ট আবেদন আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। এতে স্থগিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং বিচারপতি খায়রুল আলমের ডিভিশন বেঞ্চ তাদের প্রার্থিতা স্থগিত করেছেন। আদালত থেকে বেরিয়ে নির্বাচন কমিশনের কৌঁসুলি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু স্থগিতাদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, যাদের প্রার্থিতা স্থগিত হয়েছে তারা হচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। ওই পদে বহাল থেকে তারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনও তাদের মনোনয়ন ‘বৈধ’ বলেছে। ইসির এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আপিল করেন প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাকের মনোনয়নও স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিকল্প ধারার কুলা প্রতীকের প্রার্থী জালালউদ্দিনের রিটে এ আদেশ দেন আদালত। একই দিন একই আদালত মানিকগঞ্জ-৩  আসনের বিএনপি প্রার্থী আফরোজা খানম রিতার মনোনয়ন প্রশ্নে আপিল বিভাগ ‘নো-অর্ডার’ করেন। তার মনোনয়ন ‘বৈধ’ হিসেবে সিদ্ধান্ত দেওয়া ইসির আদেশের বিরুদ্ধে রিট করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এতে হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে। এ আদেশের বিরুদ্ধে আফরোজা খানম রিতা সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেন। সুপ্রিমকোর্ট ওইদিন ‘নো-অর্ডার’ দিলে হাইকোর্টের আদেশই বহাল থাকে। রিতার প্রার্থিতা বাতিল হয়।

সিলেট-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনার প্রার্থিতা হাইকোর্টে স্থগিত হয় ১৩ ডিসেম্বর। প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির ইয়াহহিয়া চৌধুরী এই মর্মে রিট করেন যে, লুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তার প্রার্থিতা স্থগিত করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে লুনা সুপ্রিম কোর্টে এই মর্মে আপিল করেন যে, তিনি ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ ছেড়েছেন অন্তত ৬ মাস আগে। তবে তার আপিলটিও ‘নো-অর্ডার’ হয়। এর ফলে তিনি নির্বাচন করতে পারছেন না।

এদিকে প্রার্থিতা স্থগিত এবং বাতিল হওয়ার পাশাপাশি আদালতের আদেশে কারাগারে যেতে হচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট প্রার্থীদের। এরই মধ্যে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন, গাজীপুর-৫ আসনের বিএনপি প্রার্থী ফজলুল হক মিলন, টাঙ্গাইল ২-আসনে বিএনপি প্রার্থী সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কুমিল্লা-১০-এর মনিরুল হক চৌধুরী, মাগুরা-১-এর মনোয়ার হোসেন খান, নরসিংদী-১-এর খায়রুল কবির খোকন, রাজশাহী-৬-এর আবু সাঈদ চাঁদ, চট্টগ্রাম-৯ আসনের ড. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম-১৫-এর বিএনপি সমর্থিত জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আ ন ম শামসুল ইসলাম, খুলনা-৬-এর আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-৪ আসনের প্রার্থী জামায়াত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম এবং কুষ্টিয়া-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। তাদের মধ্যে গত বুধবার গ্রেফতার হন বাচ্চু মোল্লা, গাজী নজরুল ইসলাম ১৬ ডিসেম্বর এবং ফজলুল হক মিলন গত ১৩ ডিসেম্বর। অন্যরা প্রতীক বরাদ্দের আগে থেকেই কারাবন্দি। তবে তাদের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে। তাদের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মী এবং স্বজনরা মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে রয়েছেন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে। দুই মামলায় মোট ১৭ বছর কারাদণ্ড হওয়ায় তিনটি আসনে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকেই। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট ইসির আদেশ বহাল রাখেন। ফলে এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না বিএনপির প্রধান ব্যক্তিটিই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads