• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮
সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ভিসির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

প্রচারণায় প্রাণবন্ত ঢাবি

সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ভিসির

  • ঢাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার থেকে। প্রচারণার প্রথম দিনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাত্র সংগঠনগুলোর পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০১৯ সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দল-মত নির্বিশেষে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। সবাই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করছেন।

উপাচার্য বলেন, অনেক শঙ্কা, সন্দেহ ও বিতর্কের পথপরিক্রমায় প্রায় তিন দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কোনো সন্দেহ নেই, এ দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় তথা জাতি যত সংখ্যক অধিকতর দক্ষ ও নেতৃত্বের গুণাবলি সমৃদ্ধ ব্যক্তিত্ব পেতে পারত তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে এ বঞ্চনার সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হতে সক্ষম হব। ডাকসু নির্বাচন যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘ক্যালেন্ডার ইভেন্ট’-এ পরিণত হয় সেজন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আন্তরিক সদিচ্ছা ও সদয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

তবে দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন একেবারেই ত্রুটিমুক্ত নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, অনিচ্ছাকৃত বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি হয়তো রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে হতে যাওয়া নির্বাচন আরো সুষ্ঠু ও নিখাদ হওয়ার পথ তৈরি হলো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ভিসির সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর থেকেই ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে নেমে পড়েন। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা লিফলেট বিতরণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের কলা ভবন, ব্যবসা অনুষদ, অপরাজেয় বাংলা, হাকিম চত্বর, মধুর ক্যান্টিন, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন এলাকা প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থীদের প্রচারে নামতে দেখা যায়নি। তাদের পক্ষে কর্মীরা ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করছেন। অন্যদিকে ছাত্রদল লিফলেট ছাড়াই প্রচারণায় নেমেছে।

প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য সমর্থিত বামজোটের প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী লিটন নন্দীর নেতৃত্বে কলা ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, টিএসসি এলাকায় প্রচারণা চালান বামজোটের প্রার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ও ডাকসুর ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুরুর নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালান বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত ভিপি প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির ক্যাম্পাসে লিফলেট বিলি করেন। আত্মমর্যাদাশীল ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভোট চান তিনি। প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য সমর্থিত লিটন-ফয়সাল সাদিক পরিষদের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী প্রার্থীদের ‘প্রভু নয়, বন্ধু ভাবার’ আহ্বান জানিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, ছাত্রমৈত্রী, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হন।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নূর বলেন, আমরা আচরণবিধি মেনে আজকে (গতকাল) থেকে প্রচারণা চালাচ্ছি। অনেক ছাত্র সংগঠন কিন্তু আগে থেকেই প্রচারণা করছে। আমরা আসলে জানি না এভাবে অবাধ প্রচারণা কতদিন চালাতে পারব। আমাদের মধ্যে এখনো শঙ্কা কাজ করছে।

লিফলেট ছাড়াই ক্যাম্পাসে প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ছাত্রলীগকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য ব্যালট নম্বর দেয়নি। বিভিন্ন জায়গায় আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই তারা প্রচারণা করছে, কিন্তু আমরা সেই সুযোগ পাচ্ছি না। ব্যালট নম্বর না দেওয়ায় আমরা লিফলেট ছাপাতে পারছি না।

উল্লেখ্য, গত রোববার ডাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায় কেন্দ্রীয় সংসদে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৯ জনে। এতে  কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৫ পদের বিপরীতে ২২৯ জন প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২১ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৩ জন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন এবং ১৩ জন সদস্য পদের বিপরীতে ৮৬ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল সংসদ নির্বাচনে তিন এজিএসসহ ৩৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া এজিএসরা হলেন, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবরিনা খাতুন, জিয়া হলে আব্দুল বাংলা বিভাগের মমিন এবং বঙ্গবন্ধু হলে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের জুলফিকার হাসান। তারা সবাই ছাত্রলীগ প্যানেলের।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়া প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী আবদুল্লাহ জিয়াদ, বামজোটের পক্ষ থেকে জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর, স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এ আর এম আসিফুর রহমান ও সদস্য প্রার্থী শাফায়াত হাসনাইন সাবিত চূড়ান্ত তালিকায় তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ অফিস থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads