Logo

ক্যাম্পাস

শিক্ষার্থীদের মতামত

অভ্যুত্থান পরবর্তী অচলাবস্থা কাটছে না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভবিষ্যৎ কী?

Icon

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১৬:৩৫

অভ্যুত্থান পরবর্তী অচলাবস্থা কাটছে না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভবিষ্যৎ কী?

২৪-এর ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থা কাটছে না—এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনে অদক্ষ ও দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ, রাজনৈতিক আধিপত্য, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া এবং প্রশাসনিক অদক্ষতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। শিক্ষা-পরিবেশ স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের গঠনমূলক পদক্ষেপ এবং দায়ীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

-মো. মিরাজুল ইসলাম, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক , খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। 

আমরা দেখতে পেয়েছি অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করে এমন লোকদেরকে প্রশাসনে বসানো হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন প্রশাসনিক কোনো প্রকার কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত ছিল না। অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ের মতো পরবর্তী সময়গুলোতেও দলীয় ব্যক্তিদেরকে প্রশাসনিক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা নিজ দলীয় ব্যক্তিদের সুযোগ সুবিধা দিতে নিয়োগ বাণিজ্য এবং টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। ‎অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছ থেকে যেরকম আচরণ প্রত্যাশা করেছিল, প্রশাসন সেটা পূরণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ক্যাম্পাসগুলোতে দলীয় রাজনীতি আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়েছে এবং সেই দূরত্ব শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের মাঝেও প্রভাব বিস্তার করেছে।
-লেখা: তানভীর আহমেদ, শিক্ষার্থী, কুয়েট

অভ্যুত্থান পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত, আওয়ামী আমলের রেখে যাওয়া সমস্যাগুলো বেশি বিদ্যমান। ফ্যাসিস্ট সরকার ১৬ বছরে দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ করেছে, যার ফলে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ লোক প্রশাসনিক চেয়ারে বসেছে। এসবের জন্য, অভ্যুত্থান পরবর্তীতে শিক্ষার্থী এবং তাদের অংশীজনদের কাঠামো পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা, সেইটার সাথে বর্তমান প্রশাসনের উদ্যোগ ও কার্যক্রমের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। সকল শিক্ষার্থী ও তাদের অংশীজনদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসনকে কাজ চালিয়ে নিতে হবে। তা না হলে, এই অচলাবস্থার সমাধান পাওয়া যাবে না।
-লেখা: মো. মুন্না হোসাইন, শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অস্থিরতায় দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে  আবার রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে নতুন করে। যা ছাত্রসমাজ কে সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশে পাঠদানে উৎসাহিত করবে। নতুন করে সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া তোড়জোর শুরু হয়েছে। যা তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে সহায়তা করবে। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী প্রচণ্ড প্রতাপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে মামলা করতে কালক্ষেপন করতেছে, যা শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতির মধ্যে অতিবাহিত করতে হচ্ছে। এখনো ক্যাম্পাসগুলোতে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী দোসররা দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছে।  স্বৈরাচারী দোসরদের নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসগুলোতে বিরাজমান সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।
-লেখা: মো. পুলক আহমেদ , শিক্ষার্থী , বেরোবি। 

নতুন বাংলাদেশে সবাই এখন নিজেদের কথা বলতে পারছে, এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক। তবে দুঃখজনকভাবে ট্যাগিং আর বুলিংয়ের রাজনীতি এখনো যায়নি। এখনো দেখা যায়, হেনস্থা আর ভয় দেখিয়ে ভিন্নমত দমন করা হচ্ছে। অভ্যুত্থানের সময় যেসব ছাত্রলীগ নেতা হামলায় জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে এখনো দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসন অবশ্য এখন কিছুটা শিক্ষার্থীদের মনের কথা বুঝতে পারছে, এটাও একটা পরিবর্তন। তবে প্রশাসন যদি গঠনগতভাবে আরও শক্তভাবে কাজ করত, তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ভালো হতো। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
-লেখা: এইচএম খালিদ হাসান, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

জুলাই বিপ্লবের পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো চলছে চরম অস্থিরতা। প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক কাঠামো গঠিত হলেও এখনো স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়। বিপ্লব-পরবর্তী সময় নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল একটি আধুনিক, ইতিবাচক ও সুশাসনভিত্তিক শিক্ষা পরিবেশে ফিরবে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মহলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সেই সাথে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে দফায় দফায় আন্দোলন, প্রশাসনিক অদক্ষতা, অভ্যন্তরীণ জটিলতা ও একাডেমিক স্থবিরতা মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। নবনিযুক্ত প্রশাসনের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা যে নতুন যুগের সূচনা আশা করেছিল, তা বাস্তবে বাস্তবায়িত হয়নি। বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিপ্লব-পরবর্তী পর্যায়ে প্রশাসন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সময় পায়নি। পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে কীভাবে, কখন কী করতে হবে এবং কাকে কোন দায়িত্ব দিতে হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনার অভাব ছিল। সবকিছু মিলিয়ে প্রশাসন কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, আর বিশ্ববিদ্যালয় এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
-লেখা: তানজিদ শাহ জালাল ইমন, শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর