• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

শিক্ষা

চার দশকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

  • ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৫ নভেম্বর ২০১৯

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ মীর মশাররফ হোসেন, বাউল সম্রাট লালন সাঁইজি, গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথের স্মৃতিধন্য, দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার সীমান্তে শান্তিডাঙা-দুলালপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। স্বাধীন বাংলায় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ও এটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৪০ পূর্ণ করল। বিশ্ববিদ্যালয়টির এই ৪০ বছরে রয়েছে যেমন অনেক প্রাপ্তি তেমনি রয়েছে অনেক না পাওয়ার বেদনা। তবে বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র। সম্প্রতি ৫৩৭ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে পাল্টে যাবে ইবি। ফলে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।

খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে দৃষ্টিনন্দন ও সুবৃহৎ প্রধান ফটক থেকে প্রবেশ দ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। একটু ডানেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ‘মুক্ত বাংলা’। আর বা দিকে পা বাড়ালেই দেখা যাবে সততার স্মারক ‘সততা ফোয়ারা’। রয়েছে ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে তৈরি ক্যাম্পাসভিত্তিক সবচেয়ে বড় শহীদ মিনার, স্বাধীনতাযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে দৃষ্টিনন্দন ও অনন্য কারুকার্যে তৈরি ‘স্মৃতিসৌধ’। একটু সামনে এগিয়ে গেলে বিস্তৃত সবুজে ঘেরা ডায়না চত্বর। এটি সব সময় শিক্ষার্থীদের আড্ডায় মুখরিত থাকে। এটিই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারের রূপ।

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। দেশের গণমানুষের চাহিদা পূরণ করতে তৎকালীন সরকার ১৯৭৬ সালে ১ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। পরে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়ার সীমান্ত শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। পরবর্তীকালে ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৮০ (৩৭) পাস হয়। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে ১৭৫ একর ভূমির ওপর ৮টি অনুষদ, ৩৪টি বিভাগ, ১টি ইনস্টিটিউট, ১টি স্কুল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখন পর্যন্ত ১২ জন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. এ. এন. এম. মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী।

শতভাগ আবাসিকতার মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছর পরও সে স্বপ্ন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। তবে বর্তমান উপাচার্যের আশ্বাস বাণী আশার সঞ্চার করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর অবহেলিত এ প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। তিনি সেশনজটে পিষ্ট শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে উদ্যোগ গ্রহণ করে অনেকটা সফলতা অর্জন করেছেন। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে চালু করেছেন মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, একুশে কর্নার এবং বঙ্গবন্ধু কর্নার। যেখানে রয়েছে বাঙালি জাতির রক্তাক্ত ইতিহাসের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বইছে নতুন হাওয়া। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার এত বছর পরে এসে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে বরাদ্দ পেয়েছে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টে ৯টি ১০ তলা ভবন ও ১৯টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে স্বপ্ন পূরণের দিকে অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম তোহা বলেন, ‘নানা ঘাত-প্রতিঘাত, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজ একটি সমৃদ্ধিশালী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে ইবি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হিসেবে আমি গর্বিত। বর্তমান প্রশাসনের অক্লান্ত পরিশ্রমে ইতোমধ্যেই শিক্ষা, গবেষণা, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একটি মেগা প্রজেক্ট উপহার দিয়েছেন। এ প্রজেক্ট সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘ ২৯ বছরের শিক্ষকতা জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার ভেতরে যে মনছবি ছিল তা বাস্তবে রূপ নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহিনুর রহমান বলেন, বতর্মান প্রশাসনের এ সময়ে অবকাঠামো, শিক্ষার মানোন্নয়ন, সেশনজটমুক্ত, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকমুক্ত পরিবেশে আমাদের সন্তানেরা লেখাপড়া করে দেশ-বিদেশে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তুলে ধরছে। আমি মনে করি, অদূর ভবিষ্যতে কেবল বাংলাদেশের নয় দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, প্রান্তিক জনপদের এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যুগের চাহিদানুযায়ী এখানের প্রতিটি বিভাগকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads