• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব

দেশজুড়ে বাড়ছে খাদ্য ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব

সংরক্ষিত ছবি

স্বাস্থ্য

পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০১৮

দেশজুড়ে বাড়ছে খাদ্য ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। খাদ্যে ভেজাল ও পানি জীবাণুযুক্ত হওয়ায় মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড ও প্যারা-টাইফয়েডে। দীর্ঘদিন দূষিত পানি পান ও ভেজাল খাদ্য খেয়ে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভিড় বাড়ছে। আগে দূষিত পানিতে শুধু সংক্রামক রোগ ছড়ালেও কয়েক বছর ধরে অসংক্রামক রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী মারাও যাচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলেন, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। সারা দেশের হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে জন্ডিস। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, হালিশহর, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, বন্দরটিলা ও স্টিলমিল এলাকার অন্তত ২০ লাখ লোক জন্ডিসের ঝুঁকিতে রয়েছে অনিরাপদ পানি পানের কারণে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) জরিপ মতে, কয়েক বছর ধরে দেশে খাদ্যবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস ও টাইফয়েড। আড়াই বছর ধরে আইইডিসিআর জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য পায়। প্রতিষ্ঠানটি দেশের ১০টি বড় হাসপাতাল, সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুঠোফোনে বছরে দুবার তিন হাজার করে সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তা খতিয়ে দেখে জরিপের ফল চূড়ান্ত করে।

আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর অন্তত ৪৫ লাখ মানুষ ভেজাল খাদ্য ও এতে বিষক্রিয়া থাকার কারণে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি ১৯ শিশুর একজন মারা যায় খাদ্যে উচ্চমাত্রার ভেজালের কারণে। দেশের বাজারে থাকা ৭৬ শতাংশ খাবারে ভেজাল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভেজাল শিশুখাদ্যে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীদের মতে, বাজারে পাওয়া যায় এমন পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশ অনিরাপদ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সোয়া তিন লাখ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। রোগীদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে শিশু। তাদের মধ্যে ৯০ হাজারের বেশি ডায়রিয়ার রোগী ঢাকার আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে ভর্তি হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরুরি চিকিৎসাকক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. আয়েশা আক্তার এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে জানান, ‘সারা দেশে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের তথ্য নিয়মিত অধিদফতর সংগ্রহ করে থাকে।’ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কলেরা। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে, এমন অন্তত ২০ শতাংশ রোগী কলেরায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। চিকিৎসা নেওয়া ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে কত শতাংশ কলেরায় আক্রান্ত, এ তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে নেই।

নানা কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কলেরার প্রকোপ দেখা দিচ্ছে বলেও চিকিৎসকরা জানান। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে কলেরা আরো ভয়াবহভাবে ফিরে আসতে পারে বলে সম্প্রতি বিদেশি একটি সংস্থা দাবি করে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দুই বছর আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৯টি দেশে প্রতিবছর ২৯ মিলিয়ন মানুষ কলেরার কবলে পড়ে। তাদের মধ্যে বছরে অন্তত এক লাখ রোগী মারা যায়।

চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ জন্ডিস। গত এক মাসে এ এলাকায় এক হাজারের বেশি মানুষ জন্ডিসে আক্রান্ত হন। আরো অনেকে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয় বলে স্থানীয়দের দাবি।

জন্ডিস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চট্টগ্রাম ওয়াসার দূষিত পানি দায়ী বলে মনে করে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। ঢাকার আইইডিসিআরের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রান্ত রোগীদের রক্তের নমুনা ও ওই এলাকার ওয়াসার পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। এতে প্রমাণিত হয়, দূষিত পানি পানের কারণেই জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দারা।

হালিশহর এলাকায় জন্ডিস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ওই এলাকায় ইতোমধ্যে আক্রান্তদের চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের জন্য ‘ক্যাম্প’ চালু করেছে। চিকিৎসকদল সেখানে সপ্তাহে তিন দিন চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছে।

অন্যদিকে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে টাইফয়েডে আক্রান্তরা ভিড় করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাবারের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমিত হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করায় রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে— এমন এলাকায় টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর দুই কোটি ২০ লাখ লোক টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় দুই লাখ ২০ হাজার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads