• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
রক্তনালির রোগের ঝুঁকিতে দুই কোটি মানুষ

দেশে ক্রমেই বাড়ছে রক্তনালির রোগী

সংরক্ষিত ছবি

স্বাস্থ্য

রক্তনালির রোগের ঝুঁকিতে দুই কোটি মানুষ

# বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাত্র ২০ জন # সরকারি তিন হাসপাতালে ৫০ শয্যা

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৪ জুলাই ২০১৮

দেশে ক্রমেই বাড়ছে রক্তনালির রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ডায়াবেটিস, হূদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে রক্তনালির রোগগুলো সরাসরি সম্পর্কিত। ওই তিন ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্তদের একটা অংশ রক্তনালির রোগে ভুগছেন বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এ ছাড়া সড়ক ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় অনেকের রক্তনালি ছিঁড়ছে বা আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বর্তমানে অন্তত দুই কোটি মানুষ রক্তনালির রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি দিন দিন বাড়লেও দেশে এর চিকিৎসাব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল। মাত্র ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে চলছে রক্তনালি রোগের (ভাসকুলার সার্জারি) চিকিৎসা! রোগটি সম্পর্কে অনেক রোগী, এমনকি অনেক চিকিৎসকও ধারণা রাখেন না। উন্নত চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় রক্তনালি বন্ধ হওয়ায় দেশে প্রতি বছর হাজারো রোগীর হাত-পা কেটে ফেলতে হচ্ছে। হূদযন্ত্রের (হার্ট) মতোই হাত বা পায়ের রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে রিং পরানোর মাধ্যমে তা খুলে দেওয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেক চিকিৎসকও বিষয়টি জানেন না। সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ বাড়ানোর যথাযথ কোনো পরিকল্পনাও নেই। ফলে সঠিক সময়ে রক্তনালির রোগ নির্ণয় না হওয়ায় মারা যাচ্ছেন অসংখ্য রোগী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগ চিহ্নিত হলেও চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় পঙ্গু হচ্ছেন অনেকে।

এর মাঝেও রোগটির অল্প-বিস্তর যা চিকিৎসা হচ্ছে তাও অনেকটা রাজধানীকেন্দ্রিক। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মিলিয়ে ভাসকুলার সার্জারির চিকিৎসার জন্য মাত্র ৫০টি শয্যা বরাদ্দ আছে। ঢাকায় দুটি আর চট্টগ্রামে একটি সরকারি হাসপাতালে চলছে রোগটির চিকিৎসা। ঢাকার বেসরকারি ও অভিজাত তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ থাকলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় গরিব রোগীদের পক্ষে তা নেওয়া সম্ভব হয় না। সারা দেশে রোগটির সেবা সহজলভ্য করা না গেলে হাত ও পা হারানো মানুষের সংখ্যা বহু গুণে বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

দেশের অন্যতম রক্তনালি রোগ বিশেষজ্ঞ ও ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. বজলুল গনি ভূইয়া রোগটি প্রসঙ্গে বলেন, ‘রোগটি পায়ের রক্তনালিতে দেখা যায়। নালির ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে পা ফুলে যায়। জমাট বাঁধা রক্ত ফুসফুসে জমে ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে, ফলে রোগী মারা যান।’

তিনি বলেন, ‘রক্তচাপে তলপেটের প্রধান রক্তনালি বেলুনের মতো ফুলে ওঠে। একপর্যায়ে ফেটে গেলে রোগী মারা যায়। ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাত ও সড়ক দুর্ঘটনাসহ যেকোনো দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অধিকাংশের রক্তনালি বিচ্ছিন্ন হয়ে তৎক্ষণাৎ বা পরবর্তী সময়ে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। আক্রান্তদের নাগালের মধ্যে রক্তনালির চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি হলে বেশিরভাগকেই শরীরের অঙ্গ অক্ষত রেখে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করা সম্ভব।’

দেশে রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা কত, এ বিষয়ে কখনো সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জরিপ হয়নি জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘দলীয় বিবেচনায় তরুণ ভাসকুলার সার্জনদের নিয়োগ বন্ধ করা দরকার। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশেষজ্ঞদের হয়রানিমূলক বদলিও বন্ধ করতে হবে। এফসিপিএস ডিগ্রি নেওয়া চিকিৎসকদের তিন মাসের ভাসকুলার সার্জারির প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও দেশের ইমার্জেন্সি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।’

বিশেষজ্ঞরা জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর অসংখ্য মানুষ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। অনেকে রক্তনালির রোগে আক্রান্ত হন। তাদের রক্তনালি ছিঁড়ে যায় বা রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেছে অনেক এমন অবস্থাও ছিল। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ এবং কেউ কেউ মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ছিলেন।

তখনকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালান। সেই থেকে চিকিৎসা শাখায় যোগ হয় রক্তনালির চিকিৎসা। আলাদাভাবে এই রোগের চিকিৎসাব্যবস্থা চালু হওয়ার ইতিহাসও বেশি দিনের নয়। তবে রোগীর বিবেচনায় দেশে এর চিকিৎসাব্যবস্থা তুলনামূলক এগোয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং হূদরোগ প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়ে চলছে রক্তনালির রোগীদের চিকিৎসা। গত বছর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সীমিত আকারে রোগটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলা হাসপাতালে রোগটির চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির পরিকল্পনার পরামর্শ দেন ডা. বজলুল গণি ভূইয়া। তিনি বলেন, ‘রক্তনালির বন্ধের চিকিৎসাসহ রিং পরানো বা পায়ের অস্ত্রোপচার, রক্তনালির টিউমার বা হেমানজিওমা অস্ত্রোপচারের মতো সব ধরনের চিকিৎসার সুযোগ সারা দেশে সৃষ্টি করতে হবে। হাত ও পা অক্ষত রেখে এসব রোগীকে সুস্থ করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ঢাকার বাইরে এই চিকিৎসাসেবা ছড়িয়ে দিতে হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads