• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
২০৩০ সালের মধ্যে এইডস নির্মূলে সংশয়

বিশ্ব এইডস দিবস লোগো

সংরক্ষিত ছবি

স্বাস্থ্য

২০৩০ সালের মধ্যে এইডস নির্মূলে সংশয়

পাঁচ দিনের বিশ্ব এইডস সম্মেলন শুরু  আজ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৩ জুলাই ২০১৮

এশীয় অঞ্চলে এইডস রোগী, রোগটির ঝুঁকি ও রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ অঞ্চলে অন্তত ৫১ লাখ এইডস রোগী আছেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসার আওতায় আছেন মাত্র ২৪ লাখ। প্রতিবেদনে চীনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। চীন যোগ হলে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে। এইডসের কারণে মৃত্যুর হারের দিক দিয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দশম স্থানে। বিশ্বের অন্তত চার কোটি ২০ লাখ মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইডসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশে এইডস রোগের জীবাণুতে (এইচআইভি) আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রতিবছর বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আক্রান্তের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় পরের বছর কয়েকগুণ বেশি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও এ দেশে তা বাড়ছে। রোগটির ঝুঁকি কমাতে সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে। তবু চরম ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে বলে দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক সভায় বিশ্ব নেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে এইডস মহামারী দূর করার আহ্বান লক্ষ্য স্থির করেন। যার অর্থ এইচআইভিতে আক্রান্তের ঘটনা বা এইডসে মৃত্যুর হার এমন পর্যায়ে নিয়ে আসা, যাতে কোনো দেশ বা জনগোষ্ঠী আর বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে না থাকে। বাংলাদেশও এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশের লক্ষ্যে পৌঁছানো নিয়ে অনেকের সংশয় আছে।

কারণ, উন্নত পরীক্ষাগার ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার অভাবের পাশাপাশি সামাজিক অসচেতনতার জন্য এইচআইভি আক্রান্ত এ দেশের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ ‘জানেনই না’ যে তারাও এর শিকার। এ ছাড়া অভিবাসন প্রক্রিয়া ও দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অসচেতন যৌন সম্পর্কসহ বিভিন্ন কারণে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ব্যাপকভাবে রোগটিতে আক্রান্ত। তাদের থেকে স্থানীয়রাও রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

গত ২২ মে মাসে পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে এইডস ঝুঁকিতে পড়েছে দেশ। গত মে মাস পর্যন্ত এইডস রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। সারা দেশের মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

এ পরিস্থিতিতে আজ ২৩ জুলাই, সোমবার থেকে নেদারল্যান্ডসে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনের বিশ্ব এইডস সম্মেলন। ২২তম এ সম্মেলন চলবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত। এতে সবর্জনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি এইচআইভির প্রকোপ ও আক্রান্তদের কাছে সেবা পৌঁছানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এইডসের ঝুঁকি বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। ২০৩০ সালের মধ্যে রোগটি এ দেশ থেকে নির্মূল করা হবে।’ নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশে এইডস নির্মূল সম্ভব বলে মনে করেন ইউএনএইডসের এ দেশীয় কর্মকর্তা লিও কেনি।

দেশে এইডস আক্রান্তদের নিয়ে সরকারি উদ্যোগে কোনো জরিপ হয়নি। ২০১১ সালে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে এইডস ও এইচআইভিতে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেকে মনে করেন, দেশে দশ হাজারের বেশি এইডস রোগী আছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি জাতীয় সংসদকে জানান, ‘২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৫৮৬ জন রোগী এইচআইভি পজিটিভ, যার মধ্যে ৯২৪ জন মারা গেছেন।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো রোগে জনগোষ্ঠীর পাঁচ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হলে পরিস্থিতিকে ‘কেন্দ্রীভূত মহামারী’ বলা হয়। সরকারি উদ্যোগে ২০১১ সালের রক্তের নমুনা জরিপ (সেরো সার্ভিল্যান্স) মতে, শুধু ঢাকায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এইচআইভি ও এইডসে আক্রান্ত। সাত বছরের বেশি সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তারা মনে করেন, দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এইডসের ঝুঁকিতে আছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মিয়ানমারে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আড়াই লাখের ওপর আর প্রতি হাজারে আটজন এইচআইভি পজিটিভ। তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব প্রকট।

স্থানীয়দের মধ্যে অনেকের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যৌন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা নারীরা ইতোমধ্যে পাচারের শিকার হয়ে ও বেঁচে থাকার দায়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যৌন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। ফলে রোগটি ছড়াচ্ছে। স্বামী ও স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারে ১৮৯ জন এইডস রোগী পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৬৪ জনই রোহিঙ্গা।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে ‘শক্তিশালী যৌনব্যবসা’। এর মাধ্যমে বিভিন্ন বয়সের, বিশেষ করে তরুণরা আক্রান্ত হচ্ছে। নতুন উদ্বেগের বিষয়, তরুণদের পাশাপাশি শিশুরাও এ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তিন বছর ধরে শিশুদের মধ্যে রোগটির জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ জানায়, অভিবাসনের মাধ্যমেও এ দেশে এইডস সংক্রমণ বাড়ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads