• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মোজাম্মেলকে এবার বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার চায় পুলিশ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল

সংগৃহীত ছবি

আইন-আদালত

‘সড়কের নৈরাজ্য তুলে ধরায় এই মিথ্যা মামলা’

মোজাম্মেলকে এবার বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার চায় পুলিশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চাঁদাবাজির মামলার পর এবার বিস্ফোরক আইনে করা এক মামলায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে গত ফেব্রুয়ারিতে কাফরুল থানায় বিস্ফোরক আইনে (মামলা নম্বর ১৩(২)১৮) করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। মাজহারুল হকের আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।

মোজাম্মেল চৌধুরীর আইনজীবী জায়েদুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ আজ (সোমবার) মোজাম্মেলকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে কাফরুল থানার বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গ্রেফতার দেখানোর ব্যাপারে মোজাম্মেল হক চৌধুরী আদালতে বলেছেন, তিনি যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব। যাত্রীদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে কাজ করে আসছেন। তিনি যেন সংগঠনের হয়ে কাজ না করতে পারেন, সেজন্য আগে মিরপুর থানার চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।’

কথিত চাঁদাবাজির মামলায় গত বুধবার রাতে মোজাম্মেলকে গ্রেফতার করে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালত সেদিন মোজাম্মেলের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত শনিবার মোজাম্মেলকে ‘পেশাদার চাঁদাবাজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পুনরায় পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালত পুনরায় রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান। মোজাম্মেলের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সেদিন আদালতকে বলেন, ‘মামলার বাদীই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, আসামিকে তিনি চেনেন না। তাহলে মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে মামলা করল কে? এটা সাজানো মামলা।’

গত মঙ্গলবার চাঁদাবাজির এ মামলা করেন কথিত মিরপুর রোড শ্রমিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল। তবে দুলাল গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি নেতা নন, কোনো পদ-পদবিও তার নেই। তিনি ঢাকা চিড়িয়াখানা পরিবহনের লাইনম্যান। দুলাল আরো বলেন, নতুন পরিবহন কোম্পানি খোলার কথা বলে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের মিরপুর শাখার সভাপতি আবদুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন তার সই নেন। পরে তিনি জানতে পারেন সেই সইয়ে মামলা করার কথা।

এদিকে যাত্রী স্বার্থবিরোধী সড়ক পরিবহন আইন পাসের বিরুদ্ধে কথা বলায় মালিক-শ্রমিকদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন দাবি করে অবিলম্বে মোজাম্মেলকে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা। সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি সব যাত্রীর পক্ষ থেকে শুধু এটুকুই বলেছে যে, রাস্তায় বের হলে যেন তারা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন। এমন নিরীহ একটি সংগঠনের নেতাকে যদি রিমান্ডে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে, তবে হতবাক হতে হয়। অথচ সব ক্ষেত্রে সরকার উন্নয়নের রোল মডেলের কথা ফলাও করে প্রচার করলেও সড়ক উন্নয়নের লেশমাত্র দেখা যাচ্ছে না। এমন উন্নয়ন হচ্ছে যে, রাস্তায় প্রতিদিন ১০ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। রাষ্ট্র যদি সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে না পারে, তবে আমরা কথা বলব না? আমরা সোচ্চার হব না?’ তিনি অবিলম্বে মোজাম্মেল হক চৌধুরীর মুক্তি দাবি করেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মোজাম্মেল হক চৌধুরী যেসব তথ্য উপস্থাপন করতেন, তাতে সড়কের নৈরাজ্য প্রায়ই উন্মোচিত হতো। কিন্তু এ বিষয়গুলো সরকার সহ্য করতে পারছে না। এখন চাঁদাবাজির মামলা টেকাতে না পেরে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেফতারের আবেদন করেছে।’

মোজাম্মেল চৌধুরীর স্ত্রী বিজু আক্তার চৌধুরী শিশুকন্যা ফাতেমা-তুজ-জহুরাকে কোলে নিয়ে হাজির হন সংবাদ সম্মেলনে। কিন্তু তিনি এসে শুধু কাঁদেন। বলেন, ‘আমি এখন কোনো কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। শুধু প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ যেন আমার স্বামীকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য সামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, মোজাম্মেল হক চৌধুরী সড়কে মানুষ হত্যার বিচার চান। সড়কে অবৈধ গাড়ি, অবৈধ চালক, যাত্রী হয়রানি, যাত্রী হত্যা, ভাড়া নৈরাজ্যের অবসান চান- এটাই তার অপরাধ। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি খায়রুল আমিন, যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য আমান উল্যাহ মাহফুজ, ঢাকা মহানগর যাত্রী কল্যাণ সমিতির সদস্য মনিরুজ্জামান, মো. ফারুক, মোজাম্মেল হক চৌধুরীর ছোট ভাই মনিরুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

এদিকে মোজাম্মেল হক চৌধুরীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে সেফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্স (স্রোতা)। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্রোতার আহ্বায়ক হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, যারা সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন, মোজাম্মেল হক চৌধুরীর গ্রেফতার তাদের মনোবল ভেঙে দেবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads