• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সময়ের দুটি ছোটকাগজ

শিল্প-সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘দৃষ্টি’

সংরক্ষিত ছবি

সাহিত্য

সময়ের দুটি ছোটকাগজ

  • প্রকাশিত ২৮ জুলাই ২০১৮

‘দৃষ্টি’ তার দৃষ্টি প্রসারিত করে দিগন্ত ছুঁয়েছে

আনোয়ার কামাল

শিল্প-সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘দৃষ্টি’ দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে বেরুচ্ছে। দৃষ্টি’র ১৮তম সংখ্যাটি হাতে নিলেই বলে দেওয়া যায় তার ভেতরে সারবস্তু কতটুকু ধারণ করেছে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এখানে তাকে আসতে হয়েছে। আর এর করিৎকর্মা সম্কাদক বীরেন মুখার্জী প্রতিনিয়ত প্রতি সংখ্যাতেই তার মুন্সিয়ানা দেখিয়ে যাচ্ছেন।  দৃষ্টির বর্তমান সংখ্যায় ৬ জন কবির কবিতার মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর ৫ তরুণ গল্পকারের গল্প ছেপে তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। কবি হলেন আমিনুল ইসলাম, পরিতোষ হালদার, তপন বাগচী, রহমান হেনরী, ওবায়েদ আকাশ ও বীরেন মুখার্জী। ‘আমিনুল ইসলামের কবিতায় শিল্প ও বাস্তবতা’ শিরোনামে মূল্যায়ন করেছেন, আরেক কবি মাসুদার রহমান। ‘পরিতোষ হালদারের কবিতা : শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের নন্দন’ শিরোনামে আলোকপাত করেছেন অজয় রায়। ‘তপন বাগচীর কবিতা : নৃতাত্ত্বিক ঐক্যের অনুসন্ধান’ শিরোনামে লিখেছেন অনুপম হাসান। ‘রহমান হেনরীর কবিতা : চিন্তার দ্যুতি ও হূদয়বৃত্তির মিথস্ক্রিয়া’ শিরোনামে আলোচনা করেছেন মোহাম্মদ নূরুল হক। ‘ওবায়েদ আকাশের নিখিল কাব্যিক অঙ্গীকার’ শিরোনামে লিখেছেন খালেদ হামিদী। তৈমুর খান লিখেছেন, ‘বীরেন মুখার্জীর কবিতা : বহুস্তরীয় জীবনের প্রাজ্ঞবিন্যাস’। প্রতিটি লেখাতেই ভিন্ন স্বাদের ব্যঞ্জনা খুঁজে পাওয়া যাবে। একজন কবি তার সতীর্থ আরেক কবিকে নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী লেখাগুলোর সবক’টিই আবেদনময়ী, যা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। নিশ্চয়ই পাঠকেরও ভালো লাগবে, পাঠকের কাছে আলোচ্য কবিদের কবিতা নতুন মাত্রায় উদ্ভাসিত হয়েছে। প্রতিশ্রুতিশীল যে ৫ তরুণ গল্পকারের গল্প এ সংখ্যায় স্থান পেয়েছে, তারা হলেন— স্বকৃত নোমান, মোজাফ্ফর হোসেন, আশরাফ জুয়েল, আনিফ রুবেদ ও মেহেদী ধ্রুব। প্রতিটি গল্পেই ভিন্ন স্বাদের আস্বাদন রয়েছে, যা থেকে পাঠক শুধু গল্পই নয় কিছু বাঁক বদলের ইঙ্গিতও পেতে পারেন। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’ শিরোনামে কবি শামসুর রাহমানকে মূল্যায়ন করেছেন আবুল কাইয়ুম আর কথাসাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে লিখেছেন মুসাফির নজরুল। তথ্যসমৃদ্ধ সুখপাঠ্য লেখা দুটি পাঠ করলে কবি শামসুর রাহমান ও নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখার নানান দিক পাঠককে নতুনভাবে চেনার সুযোগ করে দেবে। এছাড়াও প্রতিশ্রুতিশীল ২১ জন কবির কবিতা এখানে স্থান পেয়েছে। এদের মধ্যে কাজী নাসির মামুন, চাণক্য বাড়ৈ, সঞ্জীব পুরোহিত, চন্দন চৌধুরী, পিয়াস মজিদ, মামুন রশীদ, তুষার প্রসূন, শিকদার ওয়ালিউজ্জামান, গালিব রহমান, শামীম হোসেন, সৈয়দ শিশির উল্লেখযোগ্য। তাছাড়াও পৃথক ১৬ জন কবির দুটি ও একটি করে কবিতা ছাপা হয়েছে। এ সংখ্যায় নিয়মিত বিভাগে গল্প লিখেছেন— দীলতাজ রহমান ও রাজীব রাহুল। গ্রন্থালোচনা লিখেছেন কবি মতিন বৈরাগী এবং অনুবাদ করেছেন— রেজা নুর ও রওশন হাসান। ‘দৃষ্টি’ বরাবরের মতো তার কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে, তা এ সংখ্যাটি পাঠান্তে সহজেই অনুমেয়। পরিশেষে এ কথা বলতেই হয়, বীরেন মুখার্জী তার এ সংখ্যায় যেসব লেখককে তুলে ধরেছেন, এতে তার দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারতা পাঠককে প্রলুব্ধ করবে, কাছে টানবে। ‘দৃষ্টি’র এ পথচলা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হোক।

 

সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘বুনন’

শামসুল কিবরিয়া

অন্য ভাষার সাহিত্য নিয়ে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে খালেদ উদ-দীন সম্কাদিত সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘বুনন’-এর চতুর্থ সংখ্যা। এ সংখ্যার ফোকাস তাই বিদেশি সাহিত্যের ওপর। ক্রোড়পত্রের প্রথমেই রয়েছে অন্য ভাষার সাহিত্য নিয়ে দুটি ভূমিকা-গদ্য। এর একটি বিশ্বসাহিত্য নিয়ে।  অপর গদ্যটি অনুবাদ নিয়ে। অনুবাদ গল্প অংশে ছয়টি গল্প স্থান পেয়েছে। অনূদিত গল্পকাররা হলেন যথাক্রমে গি দ্য মোপাসাঁ, মিলিজাফতা, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, হারুকি মুরাকামি, কাজুও ইশিগুরি,  ইনতেজার হুসেইন। গল্পগুলো পাঠকের হূদয় স্কর্শ করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাষার গল্পের স্বাদ একত্রে পেতে সহায়তা করবে। অনুবাদকরাও বেশ দক্ষতার সঙ্গে গল্পের ভাষান্তর ঘটাতে পেরেছেন। অনুবাদ কবিতা অংশে বিভিন্ন ভাষার ১৬ জন কবির কবিতা ছাপা হয়েছে। কবি ও ভাষা অনুযায়ী কবিতার বিভিন্ন রকম স্বাদ আস্বাদন করা যাবে কবিতাগুলো পাঠের মাধ্যমে। অনূদিত হলে কবিতার প্রকৃত ভাব নষ্ট হওয়া নিয়ে অনেক কথা রয়েছে। এ কবিতাগুলো পাঠ করতে করতে পাঠক নিজের মতো করে এর যথার্থতা উপলব্ধি করতে পারবেন বলে মনে করি । টি. এস. এলিয়টের কবিতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছেন তৈমুর খান। এ আলোচনা থেকে কবির কবিতা সম্কর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। ফরাসি সাহিত্যের প্রবাদ-পুরুষ আলবেয়ার কামুর জীবন, সাহিত্য-দর্শন ও তার বিভিন্ন উপন্যাস নিয়ে জাহিদুর রহমান লিখেছেন গদ্য। ইংরেজি সাহিত্যে আধ্যাত্মিকতা নিয়ে গদ্য রয়েছে মোহাম্মদ মহিউদ্দীনের। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে কীভাবে তরুণ লেখকদের জন্য পাঠতালিকা তৈরি করেছিলেন— এ সংক্রান্ত একটি রচনার অনুবাদ স্থান পেয়েছে বুননের বর্তমান সংখ্যায়। এ সংখ্যাটি আরো ঋদ্ধ হয়েছে জয়েস ক্যারল ওটস শাজিয়া হাফিজ রামজির সাক্ষাৎকারের অনুবাদ প্রকাশ করে। সাক্ষাৎকার দুটি অনুবাদ করেছেন যথাক্রমে মোজাফ্ফর হোসেন ও লায়লা ফেরদৌস। সাক্ষাৎকার থেকে লেখকদের সাহিত্য-দর্শন সম্কর্কে ধারণা পাবেন পাঠক। ক্রোড়পত্রের পাশাপাশি বুননের আয়োজনে রয়েছে নিয়মিত পর্ব। এ অংশে আছে প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা। প্রবীণ ও নবীন মিলিয়ে মোট ৬৩ জন কবির কবিতা স্থান পেয়েছে। মলয় রায়চৌধুরী, হাফিজ রশিদ খান, মোস্তাক আহমাদ দীন, মুজিম ইরম, ওবায়েদ আকাশ, খালেদ উদ-দীনের পাশাপাশি সূচিবদ্ধ হয়েছেন অনেক নবীন কবি। বর্তমান সময়ের বাংলা কবিতা ও কাব্যধারা সম্কর্কে জানা যাবে কবিতাগুলোর পাঠান্তে। কবিতা নিয়ে আর্যনীল মুখোপাধ্যায় ও শহীদ ইকবালের প্রবন্ধ দুটি বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। কবিতা যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে কি-না, এ নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন আর্যনীল মুখোপাধ্যায়। শহীদ ইকবাল তার প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন কবিতা কীভাবে রচিত হয়, কী ধারণ করে কবিতা বা আদৌ কিছু ধারণ করে কি-না এ প্রসঙ্গে। এছাড়াও বুননের বর্তমান সংখ্যায় প্রকাশিত ৬টি গল্পে উঠে এসেছে বর্তমান সময়ের জীবনবাস্তবতা, টানাপড়েন, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি।  নানা সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে ছোটকাগজ করতে হয়। বুননের নতুন সংখ্যা পড়ে মনে হয় সম্কাদক প্রতিকূলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই সফল হয়েছেন। আরো যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো— এ সংখ্যায় নবীন সাহিত্যিকদের লেখা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্থান পেয়েছে। ছোটকাগজ হিসেবে এটি ‘বুনন’-এর প্রশংসনীয় কাজ। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads