• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

প্রতিরোধ করতে হবে দখল ও দূষণ

  • প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০১৮

চট্টগ্রামসহ সারা দেশের নদী ও খাল দখল-দূষণে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ছে। কর্ণফুলী নদী প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী দখল ও দূষণের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। হালদা আর কর্ণফুলী নদী নিয়ে চট্টগ্রামের জনগণ উদ্বিগ্ন। পরিবেশবাদী সংগঠন, লেখক, গবেষক, সুশীলসমাজ এই নিয়ে লিখছেন ও প্রতিবাদ করছেন নানাভাবে। কিন্তু প্রতিকারের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিন এসব নদীতে আশপাশের এলাকার মিল-কারখানার বর্জ্য পড়ছে। স্থানীয় বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনার দূষিত পানি নদীতে পড়ছে। নদীর আশপাশ ঘিরে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি, মিলকারখানা ও বসতি হতে ময়লার স্তূপ পড়ছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় পত্রিকায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে নদী দখল ও দূষণরোধে বেশকিছু পরামর্শ উপস্থাপন করা হয়। এখনো পর্যন্ত সে সব সুপারিশের কোনো বাস্তব রূপায়ণ জনগণ দেখছে না। সুপারিশে বলা হয়েছে, স্থানীয় খালগুলো ড্রেজিং ও পরিষ্কার করা জরুরি। নদীর আশপাশের ময়লা-বর্জ্য যেন নদীতে না পড়তে পারে, তার বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। হালদাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। নদীর স্বকীয়তা রক্ষা করতে হবে। নদী হতে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে।

কর্ণফুলী-হালদা নদীকেন্দ্রিক জাতীয় অর্থনীতির অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। নদী দখলের কারণে গোটা দেশের নদীকেন্দ্রিক অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। কতিপয় দখলদার তাদের স্বার্থরক্ষায় অবৈধভাবে নদী দখল অব্যাহত রেখেছে। নদী দখল করছে রাজনৈতিক একটি শক্তি। এ শক্তির সঙ্গে প্রশাসনের মুষ্টিমেয় কিছু দুষ্ট মানুষ জড়িত। এমন ধরনের তথ্য প্রশাসনের নিকট থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। নামমাত্র নদী উদ্ধার অভিযান চালানো হলেও পুনরায় সেখানে বসতি গড়ে তুলতে দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের নদী রক্ষায় সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ পরিবেশবাদী সংগঠনের। এ অঞ্চলের লেখক বুদ্ধিজীবী গবেষকরা নিয়মিতভাবে তাদের লেখালেখিতে নদী ও পরিবেশ রক্ষার দাবি তুলছেন। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাসমূহে চট্টগ্রামের নদী-খাল দূষণের চিত্র প্রায়ই দেখা যায়।

হালদা নদী সুপেয় পানির এক বৃহৎ উৎস। এ পানিই চট্টগ্রামের ৬০ লাখ মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করছে। হালদা নদী সঠিকভাবে তার অধিকার ফিরে না পেলে এখানকার মানুষের প্রয়োজনীয় সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ কঠিন হবে। নগরীর পানির চাহিদা পূরণ করতে এসব নদী-খালকে অবশ্যই দূষণমুক্ত রাখতে হবে। মৎস্য প্রজনন প্রক্রিয়াকে অবশ্যই দূষণমুক্ত রাখতে হবে। যেকোনো মূল্যে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে নদীর ওপর সব ধরনের অন্যায় আচরণ বন্ধ করতে হবে। নদীর উভয় দিকের অবৈধ দখল উচ্ছেদ চায় জনগণ। নদীর আশপাশের শিল্প কারখানায় ইডিপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। খাল ও নালায় ময়লা আবর্জনা ফেলা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। নদীতে পিলার সেতুর পরিবর্তে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করতে হবে। আমাদের নদী আমাদের গর্ব। এসব নদী-খাল রক্ষায় জাতীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ চায় এ অঞ্চলের জনগণ। নগরীর ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলে নদী বাঁচাতে হবে। আমার নদী আমার গর্ব, আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এসব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কাউকে ধ্বংস করতে দেওয়া যায় না। বাংলার ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির ধারকবাহক খাল ও নদীকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি করপোরেশন, সিডিএ, পরিবেশ অধিদফতরকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে খাল ও নদী রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। নদী দখল, খাল দখল এবং দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য খাল-বিল-নদী রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকার এ দায়িত্ব থেকে কোনো অবস্থায় সরে থাকতে পারে না। অন্যসব উন্নয়নের সঙ্গে খাল-বিল-নদী রক্ষায় সরকারের সময়োপযোগী কর্মসূচি থাকতে হবে। প্রশাসনকে নির্দেশ ও কর্মসূচি দিয়ে খাল-বিল-নদী রক্ষার কর্মসূচি নিতে হবে। নদী রক্ষায় বাজেট ও জনবল বাড়াতে হবে। অন্যায়ভাবে নদীর মাছ আহরণ ও মাছ প্রজনন ধ্বংসের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ থাকতে হবে। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ নদী ও খাল রক্ষায় সরকারের সঙ্গে আছে।

সরকারের যেকোনো উন্নয়ন সদিচ্ছায় জনগণ পাশে থাকবে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ধ্বংস ও জবরদখল কোনো অবস্থায় জনগণ প্রশ্রয় দেবে না। তাই দরকার সরকারের সময়োপযোগী কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন। সরকার নদী-খাল-বিল রক্ষায় জনগণকে পাশে পাবে।

 

মাহমুদুল হক আনসারী

প্রাবন্ধিক

hoqueansari@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads