• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

কে বন্ধু, কে নয়

  • প্রকাশিত ২৪ এপ্রিল ২০১৮

পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে। এক. এদের আপনি বুক চিরে কলিজা রান্না করে দিলেও মুখ ভেঙচিয়ে বলবে- ‘লবণ কম হয়েছে।’ দুই. শুধু লবণ দিলেও এরা মিষ্টি হেসে বলবে— ‘ধন্যবাদ, বড়ই তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়া যাবে।’ এ দুই শ্রেণির মানুষ নিয়েই আমাদের পৃথিবী। আমাদের চারপাশে যারা থাকেন তাদের ভাবনাও এর থেকে ভিন্ন নয়। এদের ভাবনা যদি আমার-আপনার ক্যারিয়ারের জন্য হুমকি না হতো, তাহলে বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছুই বলার ছিল না। কিন্তু ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা যাদের সঙ্গে চলি, মিশি তাদের ভাবনা আমাদের মনে গভীরভাবে দাগ কাটে। তাই উক্ত দুই ধরনের মানুষের মধ্যে কার সঙ্গে মিশব আর কার সঙ্গে মিশব না— সফল ক্যারিয়ার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আপনি যখন কলিজা চিরেও কারো কাছে শুনবেন— ‘লবণ কম হয়েছে’, তখন আপনার অবচেতন মন ধরেই নেবে আপনি উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু করেননি। কিংবা যা করেছেন তা হরহামেশা সবাই করে। আপনার চেয়েও ভালোভাবে করে। আসলে কি ব্যাপারটি তাই? সবাই কি সবার জন্য কলিজা পরিবেশন করতে পারে? ‘কলিজা পরিবেশন’ মানে বিশেষ কিছু করা, যা সচরাচর কেউ কারো জন্য করে না। তো সেই স্পেশাল কাজটি করার পরও ধন্যবাদ পাওয়া তো দূরের কথা; বরং এমন মন্তব্য শুনলেন, যা আপনার মনই ভেঙে দিল। দুর্বল করে দিল আত্মবিশ্বাসকে।

ভুল করে পা পিছলে গেলে যেমন নিচের দিকেই যেতে থাকে মানুষ, তেমনি ভুল মানুষের ভুল মন্তব্য মনে গেঁথে নিলেও ব্যর্থতার গর্তে তলিয়ে যেতে থাকবেন আপনি। ‘লবণ কম হয়েছে’ কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, আমি বোধহয় বিশেষ কিছু করতে পারিনি। আসলে কিন্তু তা নয়। আপনি বিশেষ কিছুই করেছেন। কিন্তু ভুল মানুষের জন্য। তাই সে আপনার গুণ না দেখে দোষ খোঁজার চেষ্টা করছে নিখুঁতভাবে। ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা এ শ্রেণির মানুষকে বলেছেন, ‘নেতিবাচক চিন্তার মানুষ’। পৃথিবীর সব সফল মানুষ একবাক্যে স্বীকার করেছেন— আত্মবিশ্বাসের শক্তিশালী দুর্গে আঘাত হানার জন্য একজন নেতিবাচক মানুষের একটি ছোট্ট মন্তব্যই যথেষ্ট। কোনোভাবে যদি ওই নেগেটিভ মন্তব্যটি মনে গেঁথে যায়, ব্যস! আপনার পিছলে পড়া শুরু।

সুতরাং এমন কারো সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেবেন না, যে আপনার প্রতিটি কথা ও কাজের গুণ রেখে দোষ বলে। যার মন্তব্য আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং বড় কিছু করলেও ভাব দেখায় যেন কিছুই করেননি। এমন মানুষকেও জীবনবুকের ব্লক অপশনে রেখে দিন। এসব মানুষ সফলতার পথে বড় হুমকি। নেতিবাচক চিন্তার মানুষ স্বপ্নের আকাশে কালো মেঘ হয়ে দেখা দেয় আপনার জীবনে। সুতরাং আজই ছেঁটে ফেলুন এসব কালো মেঘ নামের কালো চিন্তার মানুষদের।

এবার আসুন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষের কথায়। আপনি সামান্য লবণ দিয়েছিলেন তাকে। লবণ পেয়েই সে কী আনন্দ! কী উচ্ছ্বাস! কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ছেন তিনি। তখন আপনার ভেতর কেমন লাগবে? আপনার কি মনে হবে না, সামান্য কিছু করতেই একজন মানুষ এত খুশি, তাহলে আরো বড় কিছু করা দরকার এবং তা করার শক্তি আপনার আছে। এই যে, আপনার শক্তি আছে, আপনি পারবেন— এ মনোভাবই আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে দেবে সফলতার পথে। আজ আপনি লবণ দিয়েছেন মানে সামান্য কিছু করেছেন, কাল ঠিকই বড় কিছু করতে পারবেন। সামান্য কিছু পেয়েও যারা উচ্ছ্বাস এবং কৃতজ্ঞতা জানায় এদের বলে ‘ইতিবাচক চিন্তার মানুষ’। ক্যারিয়ারে সফল হতে চাইলে এ ধরনের মানুষের সংস্পর্শের বিকল্প নেই। সফল হতে যা কিছু প্রয়োজন এদের থেকেই নিতে পারেন দুহাত ভরে। যখনই এমন কোনো মানুষের দেখা পাবেন, যে আপনার দোষ ঢেকে গুণকে বড় করে দেখে— তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। সম্পর্ক গড়ুন। তবেই সহজে পাড়ি দিতে পারবেন সফলতার বন্ধুর পথটুকু।

অনেকেই বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দোষ ঢেকে মুখে প্রশংসার ফুল ফোটায়। এদের কিন্তু ভুলেও ইতিবাচক মানুষের কাতারে ফেলবেন না। এরা আসলে ‘ক্ষতিকর’ মানুষ। আপনার বারোটা বাজানোর জন্যই প্রশংসার বৃষ্টি ঝরায় তারা। এদের থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকবেন। ইতিবাচক ও ক্ষতিকর মানুষের মাঝে পার্থক্য হলো- ইতিবাচক মানুষ ওই গুণটিরই প্রশংসা করবে যা আপনার ভেতর আছে। ঠিক ততটুকুই প্রসংশাই করবে, যতটুকু আপনি প্রাপ্য। আর ক্ষতিকর মানুষ, আপনার প্রাপ্যের চেয়েও বেশি প্রশংসা করবে। এমন গুণের প্রশংসাও করবে, যা আসলে আপনার মাঝে নেই। সফল হতে চাইলে অবশ্যই এ ধরনের মানুষের সঙ্গেও নিরাপদ দূরত্ব রেখে এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্য জয়ের স্বপ্নিল পথে।

 

আল ফাতাহ মামুন

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Email: alfatahmamun@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads