• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

সিরীয় সঙ্কট : ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ

  • ড. তারেক শামসুর রেহমান
  • প্রকাশিত ০৫ মে ২০১৮

সিরিয়ার সঙ্কটকে কেন্দ্র করে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্প্রতি পশ্চিমা সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। সংবাদটি হচ্ছে, আমেরিকান সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোটেলের ইসরাইল সফর। সিরিয়া এই সেন্ট্রাল কমান্ডের আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। একজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা ইসরাইল সফরে যেতেই পারেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ১৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশের বিমানগুলো সরাসরি সিরিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সিরিয়ার রাসায়নিক স্থাপনাগুলোতে বোমাবর্ষণ করে তা ধ্বংস করে দিয়েছে। এই বিমান হামলা সরাসরি সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল। জেনারেল ভোটেলের এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসরাইলকে এই যুদ্ধে জড়িত করা। যদিও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসরাইল এই যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে। ইসরাইলি বিমানগুলো এর আগে সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ পর্যন্ত করেছিল।

সিরিয়ার যুদ্ধ কোিদকে এখন মোড় নেবে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এই যুদ্ধ একটি বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের (গ্রেটার ইসরাইল) জন্য পরিকল্পনার অংশ কি না, তা নিয়ে ইতোমধ্যে কোনো কোনো মহলে আলোচনা হচ্ছে। জেনারেল ভোটেলের ইসরাইল সফর এ লক্ষ্যে হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। সঙ্গত কারণেই তাই বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের পরিকল্পনা নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। বলা হয়, ইসরাইল রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যই এই বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার সঙ্গে যার নাম জড়িত, তিনি হচ্ছেন ওডেড ইনন (Oded Yinon) নামে একজন স্ট্র্যাটেজিস্ট। তিনি যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন, তা ‘ইনন পরিকল্পনা’ নামে খ্যাত। প্রকৃতপক্ষে ইসরাইল রাষ্ট্রের পরিকল্পনাকারী থিওডোর হার্জেল, যিনি জিওনবাদের প্রবক্তা, তিনি একসময় যে বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের পরিকল্পনা করেছিলেন, ওডেড ইনন সেই পরিকল্পনার একটি বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন। ইনন পরিকল্পনায় রয়েছে, লেবানন ও সিরিয়াকে ভেঙে একাধিক রাষ্ট্রে পরিণত করা (দেখুন Oded Yinon, A Strategy for Israel in the Nineteen Eighties, Belment, Massachusetts, 1982)। আজ থেকে ৩৬ বছর আগে এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও, আজ পর্যন্ত এতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। তবে স্ট্র্যাটেজিতে নতুন নতুন উপাদান যুক্ত হয়েছে। আরব বিশ্বে যদি বিভক্তি জিইয়ে রাখা যায়, তাতেই লাভ ইসরাইলের। আজ এত বছর পর ইসরাইল অনেক অংশে সফল। আরব বিশ্বে বিভক্তি এত বেশি স্পষ্ট এখন, অতীতে তেমনটি ছিল না। কাতার-সৌদি আরব দ্বন্দ্ব, সৌদি আরব-ইয়েমেন দ্বন্দ্ব কিংবা সৌদি আরব ও ইরান কর্তৃক এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করার প্রতিযোগিতা, কুর্দিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সিরিয়া-ইরাকে আইএসএর উত্থান ও পতন, সব মিলিয়ে মুসলিম বিশ্বে এত বেশি বিভক্তি যে, এই বিভক্তির সুযোগ নিচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইলের এই পরিকল্পনা যদি সফল হয়, তাহলে এই একুশ শতকেই নতুন এক আরব বিশ্বকে আমরা দেখতে পাব। ইনন পরিকল্পনায় একাধিক মুসলিম রাষ্ট্রের জন্মের কথা যেমনি বলা হয়েছে, ঠিক তেমনি বলা হয়েছে একটি ‘গ্রেটার ইসরাইল’ রাষ্ট্রের কথাও। যেমন বলা হয়েছে গ্রেটার ইসরাইলি রাষ্ট্রটি গঠিত হবে পুরো ফিলিস্তিনি এলাকা, দক্ষিণ লেবানন থেকে সিডন (Sidon) এবং লিটানি (Litani River) নদী, সিরিয়ার গোলান উপত্যকা, (যা এখন ইসরাইলের দখলে), হাওরান (Howran) ও দেরা (Deraa) উপত্যকা, হিজাজ (Hijaz) রেলপথ দেরা থেকে আম্মান জর্দান পর্যন্ত। এবং সেই সঙ্গে Gulf of Aquaba-এর নিয়ন্ত্রণভার। কোনো কোনো ইসরাইলি স্ট্র্যাটেজিস্ট আরো ইহুদি এলাকা সম্প্রসারণের পক্ষে- পশ্চিমে নীল নদ থেকে পূর্বে ইউফ্রেতিস নদী পর্যন্ত, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ফিলিস্তিনি এলাকা, লেবানন, পশ্চিম সিরিয়া ও দক্ষিণ তুরস্ক। স্টেফান লেন্ডম্যানের (Stephen Lendman) বই Greater Israel-এ এমন ধারণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখন এই বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের ধারণা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে, সেটা একটা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু ট্রাম্প তার নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সিরিয়ায় আরো কিছু সৈন্য প্রেরণ করা, সিরিয়ার সঙ্কটে ইসরাইলের জড়িয়ে যাওয়া, স্বাধীন একটি কুর্দি রাষ্ট্র গঠনে (সিরিয়া ও ইরাকের অংশ বিশেষ নিয়ে) যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সমর্থন প্রমাণ করে ইসরাইল তার সেই পুরনো ধারণা এখনো পরিত্যাগ করেনি। ইসরাইল এটাকে তার নিরাপত্তার সঙ্গে এক করে দেখছে। যদি আরব বিশ্বকে ছোট ছোট রাষ্ট্রে ভাগ করা যায়, তাতে করে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকেও আমরা হালকাভাবে দেখতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল এক স্বার্থ রয়েছে। সিরিয়ায় জ্বালানি তেলের (গ্যাস ও তেল) বিশাল ভান্ডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আকৃষ্ট করেছে এ অঞ্চলে একটি ‘ঘাঁটি’ করার ও অনেক দিনের জন্য সেখানে থেকে যাওয়ার। পাঠক মাত্রেই লক্ষ করে থাকবেন, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে শুধু একটি কারণেই; আর তা হচ্ছে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুর্দি এলাকায় মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশের অবস্থান। মার্কিন সেনাবাহিনী সেখানে অবস্থান করছে কুর্দি বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য! তুরস্ক ইতোমধ্যে সিরিয়ার অভ্যন্তরে সেনা অভিযান পরিচালনা করেছে এবং কুর্দি শহর আফরিন দখল করে নিয়েছে। কুর্দিদের পার্শ্ববর্তী শহর মানবিজ, সেখানে অবস্থান করছে মার্কিন বাহিনী। কোনো কোনো মার্কিন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, সিরিয়ার ৩০ শতাংশ এলাকা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে (মিন্ট প্রেস, ১৬ এপ্রিল ২০১৮)। এই ৩০ শতাংশ এলাকাতেই রয়েছে সিরিয়ার তেল, গ্যাস আর সুপেয় পানির আধার। গুরুত্বপূর্ণ দাইর এজর (Deir Ezzor, Al-Hasakah, Raqqa), আল হাসাকা ও রাকা অঞ্চল এর অন্তর্ভুক্ত। রাকা ও দাইর এজর এ রয়েছে তেলের বিশাল ভান্ডার। একই সঙ্গে হামা, হোমসসহ রাকা অঞ্চলেও রয়েছে গ্যাসের ভান্ডার। সিরিয়ার তেল ও গ্যাসের শতকরা ৯৫ ভাগ রয়েছে এই এলাকায়। সিরিয়ার বিখ্যাত তেল রিফাইনারি ‘আল ওমর’ও এ এলাকায় অবস্থিত। সিরিয়া সঙ্কটের আগে প্রতিদিন এই অঞ্চল থেকে ৩,৮৭,০০০ ব্যারেল তেল ও ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস উত্তোলিত হতো। সিরিয়ায় তেলের রিজার্ভ ধরা হয় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ব্যারেল, যা কিনা এই অঞ্চলে অবস্থিত এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা এখন মার্কিন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সিরিয়ার বিখ্যাত কনোকো গ্যাস ফিল্ডও (Conoco) এই এলাকায় অবস্থিত, যেখান থেকে প্রতিদিন ৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস উত্তোলিত হয়। বিখ্যাত কনোকো ফিলিপ এই গ্যাস আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট বুশ সিরিয়ার ব্যাপারে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে, কনোকো ফিলিপ এই গ্যাস ফিল্ড ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এই তেল ও গ্যাস ফিল্ডের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র কুর্দিদের সঙ্গে একটা সমঝোতায় গিয়েছিল। আর ওই সমঝোতার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিমাসে কুর্দি নেতৃত্বকে ১০ মিলিয়ন ডলার করে দিয়ে আসছে। কুর্দিরা এই তেল উত্তোলন করে ইরাকি কুর্দিদের সরবরাহ করে। সেখানে ওই তেল পরিশোধিত হয়ে তুরস্কের কাছে বিক্রি করা হয়। মজার ব্যাপার, এই তেল বিক্রি ও সরবরাহে মধ্যস্থতা করে একদল আন্তর্জাতিক ‘তেল বিশেষজ্ঞ’! এক্ষেত্রে কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক সরকারের কোনো ভূমিকা নেই।

সিরিয়া সঙ্কটের সঙ্গে কাতার-তুরস্ক প্রস্তাবিত পাইপলাইন এবং ইরান-ইরাক-সিরিয়া পাইপলাইনেরও একটা সম্পর্ক আছে। ইউরোপের প্রচণ্ড গ্যাসের চাহিদা মেটাতে উদ্যোগ নিয়েছিল আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো। তারা পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল। কাতার-তুরস্ক পাইপলাইন, যার উদ্যোক্তা হলো যুক্তরাষ্ট্র, এ রকম একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। কাতারের গ্যাস দীর্ঘ পাইপলাইনে সিরিয়া ও তুরস্কের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হবে ইউরোপে। বড় বড় কোম্পানি (১১টি), যেমন- টোটাল, কনোকো ফিলিপস, বিএইপি, সেভরন এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল। কিন্তু সিরিয়া এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এর বিকল্প হিসেবে রাশিয়ার একটি প্রস্তাব ছিল। যাতে ইরানি গ্যাস সিরিয়ার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ইউরোপে। একই সঙ্গে রাশিয়া Turkstream Project-এর মাধ্যমে গ্যাস তুরস্কের সহযোগিতায় নিয়ে যেতে চায় ইউরোপ। রাশিয়ার গজপ্রম কৃষ্ণ সাগরের নিচ দিয়ে এই গ্যাস তুরস্কে সরবরাহ করবে, যা ২০১৯ সালে ইউরোপে যাবে। ইতোমধ্যে তুরস্ক রাশিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে একটি চুক্তিও করেছে। ফলে সিরিয়া সঙ্কটের সঙ্গে এই জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

তেল ও গ্যাসের পাশাপাশি সুপেয় পানির প্রশ্নটিও আছে। যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তিনটি রিজার্ভিয়ার রয়েছে, যেখানে সুপেয় পানি ধরে রাখা হয়। এই সুপেয় পানির ওপর নির্ভরশীল সিরিয়ার একটি বড় অংশ। বিশেষ করে আলেপ্পো শহর ও আশপাশের সুপেয় পানির অন্যতম উৎস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবস্থিত তিনটি জলাধার- লেক আসাদ, তারকা বাঁধ ও তিসরিব বাঁধ। আলেপ্পোর বিদ্যুৎও আসে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে। বাঁধের পানি দিয়ে যে শস্য ফলানো হয়, তা সিরিয়ার খাদ্য চাহিদার অনেকাংশ পূরণ করে। শুধু তারকা বাঁধের ওপর ৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ নির্ভরশীল। ইউফ্রেটিস নদীর পানি সরবরাহও এই তিনটি পানির উৎসের ওপর নির্ভরশীল। স্ট্র্যাটিজিক্যালি এই তিনটি বাঁধের গুরুত্ব অনেক বেশি।

আরো একটা কথা এখানে উল্লেখ না করলেই নয়। আর তা হচ্ছে, গোলান উপত্যকায় বিশাল তেলের রিজার্ভ। এটি সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে রেজিস্ট্রিকৃত একটি কোম্পানি Genie Oil and Gas গোলান উপত্যকার ১৫৩ বর্গমাইল এলাকার তেল ও গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব পেয়েছে। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে এই এলাকাটি ইসরাইল দখল করে নেয়। এরপর আর এই এলাকাটি সিরিয়াকে ফেরত দেয়নি ইসরাইল। বলা হচ্ছে, সৌদি আরবের পরেই এই এলাকায় সবচেয়ে বড় তেলের রিজার্ভ রয়েছে। লক্ষ করে দেখবেন Genie Oil and Gas কোম্পানির সঙ্গে যারা জড়িত, তারা যুক্তরাষ্ট্রে নিউকন হিসেবে পরিচিত এবং ইসরাইলের পক্ষে এরা কাজ করছেন। যেমন- জেমস উলসে, রিচার্ড চেনি, রুপার্ট মারডক, বিল রিচার্ডসন, জেকস রথশিল্ড প্রমুখ। জেমস উলসে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সিআইএ প্রধান ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটনের থিঙ্কট্যাঙ্ক Foundation for Defence of Democracy-এর চেয়ারম্যান। এই থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মধ্যপ্রাচ্য সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেশ দিয়ে থাকে। ডিক চেনি ছিলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট। বিল রিচার্ডসন ছিলেন ক্লিনটনের বন্ধু ও মেক্সিকোর সাবেক গভর্নর। রুপার্ড মারডক মিডিয়া টাইকন। এদের প্রায় সবাই ইহুদি ও ইসরাইলের স্বার্থে কাজ করছেন। গোলান উপত্যকা তাই একই সঙ্গে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিশাল পানির আধারও রয়েছে গোলান উপত্যকায়। এই এলাকা আর সিরিয়ার তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ উত্তর-পূর্বাঞ্চল (কুর্দি এলাকা) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে স্ট্র্যাটেজি রচনা করছে তাতে সহসা সিরিয়ায় যুদ্ধ থেমে যাবে না। তাই মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি ‘যুদ্ধ’ আসন্ন! এ ধরনের একটি আশঙ্কার কথাই বলেছেন মোসেস অ্যাপোসট্যাটিকুস (Moses Apostaticus) তার প্রবন্ধে Genie oil : The Real Reason Syria is A World War III Flashpoint (XYZ, May 23, 2017. XYZ একটি অনলাইন ম্যাগাজিন)।

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের যে কত বড় স্বার্থ আছে, তার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে পেন্টাগনের আর্থিক সহায়তায় সিরিয়ার ভেতরে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম হয়েছে, যারা এখনো আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। যেমন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স, ‘ফুরসান আল হাক’, কুর্দি এলাকায় ‘পিপলস প্রোটেকশন ইউনিট’ বা YPA, ‘সুকুর আল জাবেল ব্রিগেড’ ইত্যাদি। আল কায়দার সঙ্গে সম্পৃক্ত নুসরা ফ্রন্টও সিআইএর কাছ থেকে অর্থ ও অস্ত্র পাচ্ছে। এমন অভিযোগও আছে যে, ইসলামিক স্টেট বা আইএসের জন্ম দিয়েছিল ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৪ সালে জন্ম নেওয়া এই সংগঠনটির অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে। কিন্তু নুসরা ফ্রন্ট এখনো যুদ্ধ করে চলছে। আর এদের অর্থ ও অর্থের উৎস হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং সিরিয়া নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল।

ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র।

লেখক : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads