এনবিআর বিলুপ্তির ব্যাখ্যা প্রেস উইংয়ের
রাজস্ব ব্যবস্থায় বড় সংস্কারে যাচ্ছে সরকার

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ২০:৫৩

দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় ঐতিহাসিক সংস্কারে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রায় পাঁচ দশক ধরে কার্যক্রম চালানো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে গঠিত হচ্ছে দুটি স্বতন্ত্র সংস্থা—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এই দুটি সংস্থা সরাসরি থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এতে করে কর নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব দুটি পৃথক কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত হবে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের পেছনের যুক্তি ব্যাখ্যা করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এনবিআরের বর্তমান কাঠামো স্বার্থের সংঘাত তৈরি করছে এবং নীতিনির্ধারণে দক্ষতার অভাব দেখা দিচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠানের হাতে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকায় জবাবদিহির ঘাটতি এবং প্রশাসনিক জটিলতা বেড়েছে। এর ফলে দেশের করভিত্তি বাড়েনি, বরং রাজস্ব আহরণের সক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ায় সর্বনিম্ন। বৈশ্বিক গড় যেখানে ১৬.৬ শতাংশ, সেখানে এমন নিম্ন রাজস্ব সক্ষমতা দেশের উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। সরকারের মতে, জনগণের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হলে কর-জিডিপি অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশে উন্নীত করা জরুরি। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতেই এনবিআর বিলুপ্ত করে নতুন কাঠামো গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, এনবিআর কেবল রাজস্ব আদায়ে নজর দেয়, অথচ ন্যায্যতা, প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতি কাঠামোর বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকে। ব্যবসায়ীদের দাবি, কর প্রশাসনের মধ্যে এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যেখানে কর আদায়কারী কর্মকর্তারা অনেক সময় ব্যক্তিস্বার্থে কর ফাঁকিবাজদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করেন।
নতুন কাঠামোতে রাজস্ব নীতি বিভাগ দায়িত্বে থাকবে কর আইন প্রণয়ন, করহার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তি ব্যবস্থাপনার মতো কাজের। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কাজ করবে কর আদায়, নিরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায়। এই বিভাজনের ফলে কর নীতির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হবে এবং বাস্তবায়নে আরও পেশাদারিত্ব আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি কেবল একটি প্রশাসনিক সংস্কার নয়, বরং একটি সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এতে করে কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে, দক্ষতা বাড়বে এবং দেশ একটি কার্যকর ও জনগণের আস্থাভাজন রাজস্ব ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে। এই সংস্কারের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়ানো, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং দক্ষ পেশাজীবীদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও ন্যায্য কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথ তৈরি হবে।
ডিআর/এমএইচএস