• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বই হোক নিত্যসঙ্গী

আগে মানুষ কাগজে মোড়ানো বই পড়ত

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

বই হোক নিত্যসঙ্গী

  • প্রকাশিত ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তুফান মাজহার খান

বই মানুষের পরম বন্ধু। বই মানুষকে বিনয়ী করে, ভালো-মন্দের শিক্ষা দেয়, জ্ঞান বৃদ্ধি করে, আত্মপ্রত্যয়ী করে, সামাজিকতা শেখায়, অপরাধ থেকে দূরে রাখে, হিংসা, দ্বেষ, কলুষতা থেকে মুক্তির পথ দেখায়। বই মানুষকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ করে গড়ে তোলে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ আমরা বই পড়তে ভুলে গেছি! একটা সময় ছিল যখন মানুষের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বই ছিল অপরিহার্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে। উদ্ভাবিত হয়েছে নানা বিনোদন প্রযুক্তি। টেলিভিশন, কম্পিউটার, স্মার্টফোনসহ আরো অনেক কিছু। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং আধুনিকতা তথা স্মার্টনেস বাড়াতে সবাই ঝুঁকে পড়ছে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর। ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে উঠছে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই। প্রযুক্তির সর্বশেষ ও সহজলভ্য আবিষ্কার হলো স্মার্টফোন। বর্তমানে যে কোনো বয়সের মানুষের হাতেই থাকে এটি। পথে, ঘাটে, হাটে, মাঠে, অফিসে, গাড়িতে, কাজের ফাঁকে যে যখনই সুযোগ পাচ্ছে সে তখনই ফোনের ডাটা চালু করে শুরু করে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো বা ইউটিউবের ব্যবহার। বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে যেন এটিই একমাত্র অবলম্বন। বেঁধে দেওয়া হাতেগোনা কিছু পাঠ্যপুস্তক ছাড়া আর কোনো বই-ই সচরাচর পড়তে দেখা যায় না শিক্ষার্থীদের। আগে মানুষের ভ্রমণসঙ্গীও ছিল বই। কোথাও যাওয়ার আগে ট্রাভেল ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্গে স্থান পেত দুয়েকটি গল্প-উপন্যাসের বই। অথচ স্মার্টফোন যেন সে কথাগুলো আজ আমাদের ভুলিয়েই দিয়েছে।

প্রযুক্তি আমাদের জন্য অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ। কিন্তু প্রযুক্তির অপব্যবহার বা অবাধ ব্যবহারে আমাদের মস্তিষ্ক বিকৃত হচ্ছে। আমরা হয়ে যাচ্ছি সংকীর্ণমনা। ফোন বা কম্পিউটারের বাইরে আমরা তেমন কিছুই ভাবার সময় পাই না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যেসব বই বেঁধে দেওয়া হয়, সেগুলো অপাঠ্যপুস্তক। আর যেসব বই আমরা কিনে পড়ি অর্থাৎ বাইরের বই, সেগুলোই পাঠ্যপুস্তক। এর অর্থ হচ্ছে, যেসব বই শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় অথবা পড়তে বাধ্য করা হয়, সেসব বই তারা পড়ে ঠিকই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা বা জানার আগ্রহ নিয়ে পড়ে না। শুধু পরীক্ষায় পাস করা অথবা ভালো ফলাফলের জন্য পড়ে। যার স্থায়িত্ব মস্তিষ্কে খুবই কম। কিন্তু যে বই কিনে পড়া হয়, তা অবশ্যই জানা ও শেখার জন্য অতি আগ্রহের সঙ্গে পড়া হয়। রবীন্দ্রযুগে হয়তো এ কথাটি সত্যিই ফলপ্রসূ ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমরা আজ বইবিমুখ হয়ে গেছি। অধিকাংশ মানুষ বই পড়ে না।

আগে মানুষ কাগজে মোড়ানো বই পড়ত। আর এখন যারা বই পড়ে, তারা পড়ে ই-বুক। অর্থাৎ সেই প্রযুক্তিনির্ভর বই। ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটারে এ বই পড়া যায়। এমনকি ই-বুক পড়ুয়া পাঠক বাড়ার কারণে ই-বুক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। তৈরি হচ্ছে জনপ্রিয় বইগুলোর ই-বুক। এমনকি স্মার্টফোন বা ট্যাবে পড়ার জন্য বড় বড় লেখকের বইগুলো দিয়ে তৈরি হচ্ছে অ্যাপও। যার দরুন প্রকৃতপক্ষে যারা বইয়ের পাঠক, তারাও পয়সা বাঁচানোর সুবিধার্থে ওই পথেই হাঁটছেন। ফলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন স্থবির হয়ে যাচ্ছে। বইয়ের বিক্রি কমেছে বহুলাংশে। আগে অমর একুশে বইমেলায় যে পরিমাণ বই বিক্রি হতো, এখন সে পরিমাণ হচ্ছে না। বইমেলায় তুলনামূলক মানুষের আগমন বেড়েছে ঠিকই কিন্তু বই বিক্রি বাড়েনি। এমনকি অতীতে শুধু বইমেলায় নয়, এর বাইরেও হাটে-বাজারে, বইয়ের দোকানগুলোতে কবিতা, গল্প, উপন্যাসের বইয়ের চাহিদাই ছিল অন্যরকম। পাঠ্যপুস্তক বা গাইড বইয়ের তুলনায় সেসব বইয়ের বিক্রিই ছিল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য। তাই বইয়ের দোকানগুলোতে পাঠ্যপুস্তক বা গাইড বইয়ের তুলনায় সেসব বই-ই থাকত বেশি। কিন্তু বর্তমানে বইয়ের ব্যবসা হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ পাঠ্যপুস্তক ও গাইড বইনির্ভর। হাতেগোনা কিছু গল্প-উপন্যাসের বই ছাড়া দোকান ভর্তি থাকে বিভিন্ন গাইড বইয়ে। সেসব কারণে আশাহত হচ্ছেন লেখক, প্রকাশক ও বই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে আমরাও আধুনিক হব এটাই স্বাভাবিক। তবে এ আধুনিকতা যেন আমাদের বই পড়তে ভুলিয়ে না দেয়, সে বিষয়টি অবশ্যই আমাদের খেয়াল রাখা উচিত। বইয়ের বাজারে আবার সুদিন ফিরে আসবে, মানুষ বই পড়বে, বইকে সঙ্গী বানাবে- এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads