• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হোক

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হোক

  • নাজমুল হোসেন
  • প্রকাশিত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও পুরনো আন্দোলন চাকরির আবেদনে বয়সসীমা বাড়ানো। বর্তমান সরকারের ক্ষমতার শেষ মেয়াদে অর্থাৎ একাদশ জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি এসে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা নড়েচড়ে বসেছেন। নব্বইয়ের দশকের আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ২৭ বছর, আর অবসরের বয়সসীমা ছিল ৫৭ বছর। তারপর গড় আয়ু আর কর্মক্ষমতার বিচার করে ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে শুধু বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়। তবে সর্বশেষ ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শুধু অবসরের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে সাধারণদের জন্য ৫৯ বছর আর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬০ বছর করা হয়। তবে এই অবসরের বয়স দৃশ্যমান কোনো দাবি ছাড়াই সরকার স্বেচ্ছায় বাড়িয়েছে। একতরফাভাবে শুধু অবসরের বয়স বাড়ানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই শূন্যপদের সংখ্যা কমে যায়। এরপরই চাকরির আবেদনে বয়স বাড়ানোর দাবি তোলে সারা দেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীরা। জাতীয় সংসদেও ‘পয়েন্ট অব অর্ডার’সহ রেকর্ড সংখ্যক বার প্রস্তাব ওঠে। সরকার বিষয়টিকে তখন আমলেও নিয়ে বলেছিল, পরের বার ক্ষমতায় এলে এর বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৪ সালে নতুন করে ক্ষমতায় এলেও আজ পর্যন্ত এই দাবির বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন বিগত দশকে সেশনজট, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে তারা অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন ২৭-২৮ বছরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজেও রয়েছে সেশনজট। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেশনের মাস্টার্স পরীক্ষা সময়মতো অনুষ্ঠিত না হয়ে অসময়ে হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, সেশনজট কমার কারণে আবেদনে বয়সসীমা বাড়ানো যাবে না। গত এক দশকেরও বেশি সময়ের ভয়াবহ সেশনজটে বয়স হারিয়ে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে সরকার কি উদ্যোগ নেবে? সরকারি নীতির মতো বেসরকারি সেক্টরেও ৩০-এর পরে জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় এসব বেকার সেদিকেও প্রবেশ করতে পারছেন না। বর্তমানে তারা রীতিমতো হতাশা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। জানা যায়, বর্তমান বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশের চাকরির নিয়োগে আবেদনের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত। তাহলে কি বাংলাদেশ নামের ছোট্ট ভূখণ্ডটি পৃথিবী নামক গ্রহের বাইরের? কিসের এত বাধা এই বয়স বাড়ানোর পথে?

এ দেশের চাকরির প্রজ্ঞাপনে আবেদনের বয়সসীমা ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত নিয়ম থাকলেও এটা শুধু সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের বেলায়ই প্রযোজ্য। কারণ চাকরিতে প্রবেশনারি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছেন যেমন উপজাতিরা ৩২ বছর, ডাক্তাররা ৩২ বছর, জুডিশিয়ালরা ৩২ বছর, নার্সরা ৩৬ আর বিভাগীয় প্রার্থীরা পাচ্ছেন ৪০ বছর পর্যন্ত। অথচ বাংলাদেশ সংবিধানের ‘সরকারি নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা’ অংশে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে- ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।’ কিন্তু বাস্তবে এর উল্টো নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছে। ২০১২ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২১তম বৈঠকে ৩২ বছরের সুপারিশ করা হয়, ২০১৬ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সব জেলার প্রশাসকরা ৩৩ বছরের সুপারিশ করেন এবং সর্বশেষ চলতি বছরের গত ২৭ জুন আবারো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯তম বৈঠকে ৩৫ বছরের সুপারিশসহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। কমিটির সদস্যরা বিশ্বের সব দেশের নিয়োগবিধি, এদেশের বর্তমান গড় আয়ু, আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের তুলে ধরা সব যৌক্তিক দিকের সঠিক আলোচনা, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে বয়স বাড়ানোর বিষয়টিকে আমলে নিয়ে সুপারিশ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তবে সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করার লক্ষ্যে সারসংক্ষেপ চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩২ বছর করার প্রস্তাব করলেও এটি সরকারের নীতি নির্ধারণী বিষয় হওয়ায় সেটা ইচ্ছামতো বাড়ানোর এখতিয়ার সরকারের হাতে রয়েছে বলেও জানা যায়। এমন সংবাদ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে নতুনভাবে ঝড় ওঠে। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় চাকরির বয়স ন্যূনতম ৩৫ বছর করে যুবসমাজকে কাজে লাগাতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাজমুল হোসেন

লেখক : প্রকৌশলী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads