• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ধূমপান হারাম

ধূমপান মানবসমাজের অবর্ণনীয় ক্ষতিসাধন করে

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

ধূমপান হারাম

  • প্রকাশিত ১৭ আগস্ট ২০১৮

ধূমপান গোটা বিশ্বের জন্য একটি মহাবিপদ। তাই আজ বিশ্বজুড়ে ধূমপানের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ ধূমপানের শিকার হয়ে দিনের পর দিন সুন্দর স্বাস্থ্য ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা পুড়িয়ে ছাই করে ফেলছে। লাখ লাখ লোক ধূমপানজনিত ক্যানসারসহ অন্যান্য রোগে মারা যাচ্ছে। কেউ কেউ বিভিন্ন ঘাতক রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অসহায় অবস্থায় অতি কষ্টে বেঁচে আছে।

ধূমপান মানবসমাজের অবর্ণনীয় ক্ষতিসাধন করে। তাই নিঃসন্দেহে ইসলামের দৃষ্টিতে তা হারাম। এ প্রসঙ্গে বর্তমান যুগের বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ডের প্রধান মুফতি আল্লামা শেখ ইবন বাজ বলেছেন, ধূমপান হারাম, যেহেতু তা অপবিত্র ও নিকৃষ্ট জিনিস এবং অসংখ্য ক্ষতির কারণ। আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের জন্য শুধু পবিত্র পানাহার হালাল করেছেন। অপবিত্র জিনিস হারাম করেছেন। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, কোন জিনিস তাদের ওপর হালাল করা হয়েছে? আপনি বলুন, তোমাদের জন্য পবিত্র জিনিসগুলোই শুধু হালাল করা হয়েছে। (আল-মায়েদা : ৪)

আল্লাহতায়ালা সুরা আল-আরাফে তাঁর নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তিনি তাদের সৎ কাজের আদেশ দেন আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করেন এবং তাদের জন্য সবধরনের পবিত্র জিনিস হালাল ও সবধরনের অপবিত্র জিনিস হারাম করেন। (সুরা আল-আরাফ : ১৫৭)

সব ধরনের ধূমপান কখনোই পবিত্র জিনিসের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তা মারাত্মক ক্ষতিকর ও অপবিত্র জিনিস। তাই ধূমপানের ব্যবসাও মাদকদ্রব্যের ব্যবসার মতো নাজায়েজ। অতএব যারা ধূমপান করে ও ধূমপানের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য ওয়াজিব দ্রুত তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা এবং অতীত কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হওয়া ও ভবিষ্যতে এ কাজ না করার অঙ্গীকার করা। আর যে ব্যক্তি সত্যিকারভাবে তওবা করে, আল্লাহতায়ালা তার তওবা কবুল করেন। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, হে মুমিন বান্দারা! তোমরা প্রত্যেকে আল্লাহর কাছে তওবা কর, নিশ্চয়ই তোমরা সফলকাম হবে।

আজ মুসলিম জাহানের ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ মত হলো, ধূমপান হারাম এমনকি তা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য দোকান ভাড়া দেওয়াও হারাম। কোনো হারাম কাজের সহযোগিতাও হারাম।

ধূমপান হারাম হওয়ার আরেকটি বড় দলিল হলো, আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। (আল-বাকারা : ১৯৫)

ধূমপায়ী যেমন নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তেমনি সে ধীরে ধীরে নিজের জীবনীশক্তি নষ্ট করে আত্মহত্যার মতো অপরাধ করছে। অর্থের অপচয় বা অর্থ নষ্ট ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই। (ইসরা : ২৭) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (আল-আরাফ : ৩১)

ধূমপান কেবল অপচয় নয়, সম্পূর্ণ ক্ষতিকর কাজে অর্থ নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের প্রিয়নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখে দুর্গন্ধ হয় এমন সবজি বা কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন। এতে ফেরেশতা ও মানুষের কষ্ট হয়। হাদিসে আছে- যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন ও পেঁয়াজের মতো গন্ধ হয় এমন কোনো সবজি খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদের ধারে-কাছেও না আসে। কেননা মানুষ যে খারাপ গন্ধ দ্বারা কষ্ট পায়, ফেরেশতারাও সে গন্ধ দ্বারা কষ্ট পায়। (সহিহ মুসলিম : ১/৩৯৫) অন্য হাদিসে আছে, যে কেউ আল্লাহতায়ালা ও শেষদিবসে ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (বুখারি : ৭/২৬) আরেক হাদিসে আছে, ওই লোক প্রকৃত মুসলিম, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদে আছে। (বুখারি : ১/১১) আর ধূমপান দ্বারা মুসলিমদের কষ্ট দেওয়া হয়। নিরপরাধ কোনো মুসলিমকে কষ্ট দেওয়া হারাম।

হুসাইন আহমাদ

আলেম, প্রাবন্ধিক

alhuda2500@gmail.com

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads