• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
কেমন হবে প্রসূতি মায়ের খাবার

মা পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার না খেলে শিশুর সুস্থতা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়

ছবি : ইন্টারনেট

ধর্ম

কেমন হবে প্রসূতি মায়ের খাবার

  • প্রকাশিত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ফারজানা বীথি

একজন গর্ভবতী মাকে সন্তান ধারণের পর থেকে প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত যে যত্ন বা দেখভাল করা হয়, নবজাতক জন্মের পর তার জায়গা জুড়ে থাকে আগত শিশুটি। সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুই হয়ে ওঠে শিশুটি। তখন নতুন মায়ের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে ভুলে যাই অনেকেই। এমনকি মায়েরাও সন্তানের পরিচর্যায় এতখানি ব্যস্ত হয়ে ওঠেন যে, নিজের প্রতি নজর দিতেই ভুলে যান। সময়মতো খাওয়ার কথাও ভুলে যান বেমালুম। অথচ এ সময় প্রয়োজন মায়ের বাড়তি যত্ন। সন্তান প্রসবের সময় শারীরিক ধকল এবং রক্তক্ষরণের কারণে যে শারীরিক দুর্বলতা তৈরি হয় তা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার। এ ছাড়া নবজাতকের মায়ের বুকের দুধ পান করার কারণে এ সময় মায়ের খাবারের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কেননা মায়ের দুধ থেকেই সব ধরনের পুষ্টিগুণ পেয়ে থাকে নবজাতক। মা যদি ঠিকমতো এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার না খান তাহলে শিশুর সুস্থতা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিতে পারে। প্রসূতি মায়ের খাদ্য তালিকায় তাই যেসব খাবার রাখা প্রয়োজন, চলুন জেনে নেওয়া যাক সে বিষয়ে।

১. শর্করা জাতীয় খাবার

নবজাতকের মায়ের দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দৈহিক শক্তি ফিরে পেতে শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। চাল, আটা, ময়দা, আলু, গুড়, চিনি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। প্রয়োজন অনুসারে শর্করা জাতীয় খাবার মায়ের এবং তার শিশুর শরীরিক বিকাশে ভূমিকা রাখে।

২. প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার

সব রকমের ডাল, শিমের বিচি, ছোট মাছ, শুঁটকি, ডিম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন আছে। আমিষ জাতীয় খাবার মায়ের শরীরের ক্ষয় পূরণে সহায়তা করে এবং শিশুর শরীর গঠনে সাহায্য করে। ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি, মিনারেল এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে-যা বাচ্চার হাড় মজবুত করে। দিনে এক থেকে দুটি ডিম খাওয়া যেতে পারে।

৩. আঁশযুক্ত খাদ্য

নতুন মায়েরা প্রায় সময় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকেন। এজন্য বেশি পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। কচুশাক, শজনে, কলার মোচা, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, শিম, পটোল, কচু, বেগুন, বরবটি, মটরশুঁটি, কলমিশাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, লাউয়ের পাতা ও মিষ্টি কুমড়ার শাকে প্রচুর আঁশ রয়েছে।

৪. শাকসবজি

যেকোনো সবুজ শাকসবজি নতুন মায়েদের জন্য উপকারী। শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। এর মধ্যে পালংশাক, কচুশাক, অন্যতম। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ফলিক অ্যাসিড থাকে, যা নতুন রক্ত কোষ তৈরি করে। যে সব মায়ের শিশু জন্মদানের সময় রক্তপাত হয়ে থাকে তাদের জন্য পালংশাক খাওয়া অনেক প্রয়োজন।

৫. ফলমূল

নবজাতকের মায়ের প্রচুর তাজা ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। চাইলে তাজা ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন রকম দেশীয় মৌসুমি ফলে প্রচুর ভিটামিন থাকে, যা এ সময় মায়ের প্রয়োজন।

৬. দুগ্ধ জাতীয় খাবার

দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং স্নেহ জাতীয় পদার্থ রয়েছে। বিশেষ করে গরুর দুধে থাকে প্রোটিন। প্রসূতি মায়েদের তাই প্রতিদিন দুধ পান করতে পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। ক্যালসিয়াম, ভিটামিনসহ অনেক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে এক গ্লাস দুধ।

৭. ওমেগা-৩ ফ্যাট জাতীয় খাদ্য

মায়ের শরীরের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে এবং শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে ওমেগা-৩ ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া এটি শিশুর দাঁত ও হাড় গঠনে ভূমিকা রাখে। কাঠবাদাম, ছোট সামুদ্রিক মাছ, মাগুর মাছ, মাছের তেল থেকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাট পাওয়া যায়, যা প্রেগনেন্সির ধকল কাটিয়ে উঠতে নতুন মাকে সাহায্য করে। কাঠবাদাম নিয়মিত খাওয়া উচিত নতুন মায়েদের। কারণ কাঠবাদামে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও ভিটামিন-ই ও প্রয়োজনীয় অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল রয়েছে।

৮. খনিজ লবণ

নতুন মায়ের রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া দূর করার জন্য ক্যালসিয়ামের অবদান অনস্বীকার্য। এ কারণে খেতে হবে ক্যালসিয়াম ও ভক্ষণযোগ্য ফাইবার। সেক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন সামুদ্রিক মাছ, শিমের বিচি। বর্তমানে অনেক মা সকালের নাশতায় ওটস বেছে নিয়েছেন। এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন আছে।

৯. পানি

নবজাতক মায়ের দুধ খাওয়ায় মাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হয়। সন্তানের জন্মের পর অনেকসময় মায়ের পানিশূন্যতা দেখা দেয়। মায়ের পানিশূন্যতা রোধে প্রচুর পরিমাণে পানি পান  করতে হবে এ সময়। খাদ্যগ্রহণ, পরিপাক ও শোষণ করতে পানির প্রয়োজন।

১০. যেসব খাদ্য বর্জনীয়

জাঙ্ক ফুড, মসলাযুক্ত খাবার, উচ্চ ক্যাফিনযুক্ত পানীয়, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাদ্য, সম্পৃক্ত চর্বি  নবজাতক মায়ের জন্য অবশ্যই বর্জনীয়। আংশিক রান্না করা খাবার নতুন মায়ের পক্ষে ভালো নয়। কারণ কম রান্নাযুক্ত খাবারে নানা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে মা ও শিশুর শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads