Logo

আন্তর্জাতিক

তবু সংশয়ে বিজ্ঞানীরা

দূরের এই গ্রহে এলিয়েন থাকার সম্ভাবনা ৯৯.৭%

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৬

দূরের এই গ্রহে এলিয়েন থাকার সম্ভাবনা ৯৯.৭%

পৃথিবী থেকে প্রায় ৭০০ ট্রিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থিত একটি গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব (এলিয়েন) থাকার দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর চেয়ে আকারে আড়াই গুণ বড় এই গ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে কে২-১৮বি। গ্রহটি একটি ছোট নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। এই গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য অস্তিত্বের নতুন কিছু তবে অনিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা দল ‘কে২-১৮বি’ নামের ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করে এমন কিছু অণুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন, যেগুলো পৃথিবীতে সাধারণত প্রাণীদের মাধ্যমেই উৎপন্ন হয়।

এই গ্রহে প্রাণসম্পর্কিত রাসায়নিকের উপস্থিতি নিয়ে এটি দ্বিতীয়বারের মতো পর্যবেক্ষণ। তবে এটি আগের চেয়েও বেশি আশাব্যঞ্জক। দুটি পর্যবেক্ষণই নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে করা হয়েছে।

তবে গবেষক দল ও অন্যান্য স্বাধীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফলাফল নিশ্চিত করতে আরও তথ্যের প্রয়োজন।

গবেষণার প্রধান অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন জানান, ‘এখন পর্যন্ত প্রাণের অস্তিত্বের এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত। আমি বাস্তবসম্মতভাবে বলতে পারি, এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আমরা এই সংকেতের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারব।’

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এতটাই শক্তিশালী যে এটি তারার আলো বিশ্লেষণ করে গ্রহের বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করতে পারে।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে ডাইমিথাইল সালফাইড (ডিএমএস) ও ডাইমিথাইল ডাইসালফাইড (ডিএমডিএস) নামে দুটি গ্যাসের অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যেগুলো পৃথিবীতে শুধুমাত্র সামুদ্রিক শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা উৎপন্ন হয়।

মধুসূদন বলেন, ‘একটি পর্যবেক্ষণেই আমরা এই গ্যাসের যে পরিমাণ পেয়েছি, তা পৃথিবীর তুলনায় হাজার গুণ বেশি। যদি এই গ্যাসের উৎস সত্যিই জীবজগৎ হয়, তাহলে এই গ্রহটি প্রাণে পরিপূর্ণ।’

অধ্যাপক মধুসূদন আরও বলেন, ‘যদি আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে ওই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে, তাহলে সেটা প্রমাণ করবে—মহাকাশে প্রাণ খুবই সাধারণ ঘটনা।’

আরও নিশ্চিত প্রমাণের অপেক্ষা
তবে তিনি ও তার গবেষণা দল স্পষ্টভাবেই স্বীকার করেছেন, এই পর্যায়ে এখনো অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ রয়েছে।

প্রথমত, এই সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ এখনো এমন মানে পৌঁছায়নি যাতে এটিকে আবিষ্কার হিসেবে ঘোষণা দেওয়া যায়।

একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে নিশ্চয়তার মান থাকতে হয় প্রায় ৯৯ দশমিক ৯৯৯৯৯ শতাংশ—যা বৈজ্ঞানিক ভাষায় ‘ফাইভ সিগমা’ নামে পরিচিত।

এই সর্বশেষ বিশ্লেষণে যা পাওয়া গেছে, তা তিন সিগমা—অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ নিশ্চিয়তা। সংখ্যাটা অনেক হলেও এটি এখনো বৈজ্ঞানিক সমাজকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করার মতো যথেষ্ট নয়।

তবে আগের তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি—১৮ মাস আগে যেটি ছিল মাত্র এক সিগমা, অর্থাৎ ৬৮ শতাংশ নিশ্চিততা। তখন সেটিকে ব্যাপক সংশয়ের চোখে দেখা হয়েছিল।

ফাইভ সিগমা ফলাফল পেলেও এটি চূড়ান্ত প্রমাণ নয় বলে জানিয়েছেন এডিনবরো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যাথরিন হেইম্যানস।

তিনি বলেন, ‘এই গ্যাস পৃথিবীতে জীব দ্বারা উৎপন্ন হলেও, আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে ওই গ্রহে সেটি কোনো জীবের কারণেই উৎপন্ন হয়েছে।’

তার মতে, ‘মহাবিশ্বে প্রচুর অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। আমরা জানি না যে ওই গ্রহে আর কোনো ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ ঘটছে কিনা যার মাধ্যমে এই অণু তৈরি হতে পারে।’

তাই ক্যামব্রিজের দলটি এখন পরীক্ষা করে দেখছে, ডিএমএস ও ডিএমডিএস গ্যাসগুলো অজৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হতে পারে কিনা।

বিকল্প ব্যাখ্যা ও বিতর্ক
অন্য গবেষক দলগুলোও কে২-১৮বি থেকে পাওয়া তথ্যের একাধিক অজৈব ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছে। বিজ্ঞানীদের মধ্যে শুধু ডিএমএস ও ডিএমডিএস গ্যাসের উপস্থিতি নিয়েই নয়, বরং গ্রহটির প্রকৃতি নিয়েও জোরালো বিতর্ক চলছে।

অনেক গবেষকের মতে, গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে অ্যামোনিয়া গ্যাস অনুপস্থিত থাকার অর্থ—গ্রহে বিশাল মহাসাগর রয়েছে, যা সেই গ্যাস শোষণ করে নিচ্ছে। 

তবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অলিভার শর্টল বলছেন, এটি গলিত শিলার সাগরও হতে পারে, যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব।

তিনি বলেন, ‘অন্য নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরে এমন গ্রহগুলো সম্পর্কে আমরা যা জানি, তার সবই আসে সেই ক্ষীণ আলো থেকে, যা তাদের বায়ুমণ্ডল ছুঁয়ে আসে। এই সংকেত এতটাই দুর্বল যে, শুধু প্রাণ নয়—গ্রহের অন্যান্য গঠনগত বৈশিষ্ট্য বোঝাতেও এটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলেন, এর ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা এখনো একমত হতে পারেননি, গ্রহটি আসলে কেমন।

এদিকে, নাসার অ্যামস রিসার্চ সেন্টারের ড. নিকোলাস ওগান এক ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘কে২-১৮বি আসলে একটি গ্যাসীয় পরিপূর্ণ একটি গ্রহ যার কোনো কঠিন পৃষ্ঠ নেই।

তবে এই বিকল্প মতগুলোও জেমস ওয়েবের তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে দাবি করছেন অন্য গবেষকরা।

মূলত কে২-১৮বি গ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক রয়েছে।

অধ্যাপক মধুসূদনও স্বীকার করেন, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে এখনো বড় বাধা অতিক্রম করতে হবে।  

তবুও, তিনি মনে করেন, ‘আজ থেকে দশক পেরিয়ে আমরা হয়তো এই সময়টির দিকেই ফিরে তাকাব—যখন জীবন্ত মহাবিশ্বকে আমরা প্রথম সত্যিকার অর্থে ছুঁতে পেরেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘এটা হতে পারে সেই মুহূর্ত, যেখান থেকে আমরা হঠাৎ করেই মহাবিশ্বে একা কি না—এই মৌলিক প্রশ্নটির জবাব খুঁজে পাওয়ার পথে হাঁটতে শুরু করেছি।’

গবেষণাটি দ্য অ্যাস্টোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারে প্রকাশিত হয়েছে।

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর