• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ চলছে

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

সংগৃহীত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ চলছে

বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বারের মধ্যাহ্নভোজে পরিকল্পনামন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

প্রত্যাশিত হারে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) না আসায় দেশের অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না। আর এফডিআই আহরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনিয়োগ অবকাঠামোর অভাব। সক্ষমতা বাড়লেও বিদ্যুতের উৎপাদন সে হারে বাড়ছে না। গ্যাসের মজুত ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। চড়া দামে আমদানি করা এলএনজি শিল্পায়নের ব্যয় বাড়াবে। দক্ষ জনশক্তির অভাব বাংলাদেশে প্রায় স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েই গেছে। দেশকে মধ্যম আয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে। নিতে হবে ২০ থেকে ২৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিজিসিসিআই)  আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক মধ্যাহ্নভোজ সভায় এসব বিষয় উঠে আসে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল দ্য ওয়েস্টিনে ‘উদীয়মান বাংলাদেশ : ব্যবসাবান্ধব নীতি ও পরিকল্পনা’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার ওমর সাদাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, সেমস গ্লোবালের গ্রুপ প্রেসিডেন্ট মেহেরুন নেসা ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কর হার নির্ধারণ, সুদের হার, ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালুসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে প্রকল্প নিয়ে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

জনশক্তিকে অর্থনীতির বড় শক্তি হিসেবে মনে করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, তরুণ উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতির প্রাণ। বর্তমানে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম। ২০৪১ সাল নাগাদ এর হার ৭০ শতাংশে উন্নীত হবে। সারা বিশ্বে জনসংখ্যা বাড়ছে। জরিপ ছাড়াই বলা যায়, বিশ্বব্যাপী ব্যবসার খরচ বাড়বে। বাড়বে জ্বালানির চাহিদা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সৌরশক্তি ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ সরকারের রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি খাতের ব্যবসায় সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। নীতিসহায়তা দিয়ে সরকার সব সময় উদ্যোক্তাদের পাশে থাকবে। দেশের অর্থনীতির ৮৩ শতাংশ অবদান বেসরকারি খাতের। ব্যক্তি খাতে পণ্য ধরে ধরে প্রণোদনা দেওয়া হবে। ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশও সহজ করা হবে। এর ধারবাহিকতায় দেশের বাইরে চলে যাওয়া অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ব্যক্তি খাতে আয়কর সীমা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এর ফলে কর আহরণ বাড়বে। করের হার সহজ হলে করদাতা পাঁচ লাখে উন্নীত হবে।

আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার ওমর সাদাত বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি খাত  ও এফডিআই। পরিবেশের অভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা এখানে আসতে চাইছে না। এখানে মূলধন ঘাটতি এখনো প্রকট। শেয়ারবাজারে বৈদেশিক বিনিয়োগের অংশ ততটা বাড়েনি। এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ওয়ানস্টপ সার্ভিসের অদক্ষতা ও দক্ষ শ্রমিকের বড় অভাব রয়েছে। জনশক্তির দক্ষতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

উদ্যোক্তারা ২০ থেকে ২৫ বছর ব্যবসার চিন্তা নিয়ে বিনিয়োগে আসেন বলে মনে করেন ওমর সাদাত। এক্ষেত্রে এফডিআই আহরণ বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকারকে মাঠে নামার অনুরোধ জানান তিনি। এ ব্যবসায়ী বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোর অভাব আছে। বেশি ব্যয়ের এলএনজি আমদানি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমুদ্র বিজয় বড় অর্জন হলেও এ থেকে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা এখনো পাওয়া যায়নি। নতুন আওতায় আসা সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, উচ্চ মাধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে ১ হাজার ৭০০ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। উচ্চ আয়ে যেতে হলে দরকার মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলার। ২০৪১ সাল নাগাদ উচ্চ আয়ের দেশের যোগ্যতা অর্জন করতে হলে মাথাপিছু আয় ১৫ হাজার ডলারে উঠাতে হবে। দেশের জনসংখ্যা বেড়ে তখন ২০ কোটিতে উন্নীত হবে। বিশাল জনসংখ্যার উচ্চ আয় নিশ্চিত করতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসহায়তা দেওয়ার কারণে পোশাক খাত অনেক এগিয়ে গেছে। এ কারণে ৮০ শতাংশের বেশি রফতানি আয় আসে পোশাক থেকে। পোশাক খাতের বাইরে অন্য কোনো খাতের উদ্যোক্তাদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দক্ষতা নেই। পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আরো বলেন, সরকার শিল্পায়নে নীতিসহায়তা দিচ্ছে। এক সময় নিয়োগকারীরা সেবা পেতে হয়রানির শিকার হতেন। এখন সময় বদলে গেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও আগের চেয়ে অনেক কম। বেসরকারি খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে ব্যবসার পরিবেশ ভবিষ্যতে আরো ভালো হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads