• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

বিনোদন

ফিল্ম রিভিউ- স্বপ্নজাল

সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল অপু-শুভ্রার কেমিস্ট্রি

  • প্রকাশিত ১০ এপ্রিল ২০১৮

আফসানা হক

‘আমি মজনু, আমি দিওয়ানা’- অপুর এই সংলাপটি যে শেষ পরিণতি হবে তা আর ভাবা যায়নি। কিন্তু সমাজের কিছু নীচু মানসিকতার মানুষের জন্য অপুকে তার প্রাণ দিয়েই প্রমাণ করতে হলো। এমন ঘটনাই ঘটেছে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘স্বপ্নজাল’ ছবিতে। যৌথ প্রযোজনার এ ছবিতে অভিনয় করেছেন পরীমণি, ইয়াশ রোহান, ফজলুর রহমান বাবু, মিশা সওদাগর, ইরেশ যাকের প্রমুখ।

গল্পে দেখা যায়, হিন্দু পরিবারের মেয়ে শুভ্রা (পরীমণি) আর মুসলিম পরিবারের ছেলে অপু (ইয়াশ রোহান)। দুজনেই উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া। সব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ দুজন ভালোবাসে দুজনকে। মনের অজান্তেই হয় তাদের এই ভালোবাসা। শুভ্রার বাবার (মিশা সওদাগর) সম্পত্তি দখলের জন্য আয়নাল গাজী (ফজলুর রহমান বাবু) এক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে শুভ্রা, তার মা ও ভাইকে কলকাতা পাঠিয়ে দেন। আর তাদের অবর্তমানে হত্যা করা হয় শুভ্রার বাবাকে। কলকাতায় শুভ্রা আর বাংলাদেশে অপু। এত দূরত্বের জন্য শুভ্রা ও অপুর মতো দুটি নিষ্পাপ হূদয়ের এক বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয়। থেমে থাকেনি অপু। সে শুভ্রার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়ে। আসামিদের তুলে দেয় পুলিশের হাতে। কিন্তু ধর্মের পার্থক্যের জন্য মিলন হয় না দুটি নিষ্পাপ হূদয়ের। ঢাকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য লঞ্চে যাত্রা করার সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অপু।

ছবিতে শুভ্রা ও অপুর বিচ্ছেদের পর যখন চিঠির আদান-প্রদান শুরু হয়, তখন এক রকম রোমান্টিক অনুভূতির সৃষ্টি হয়- যা এ শতাব্দীতে দেখা যায় না। এখনকার ছেলেমেয়েরা যেখানে ইলেকট্রনিক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে, সেখানে এই ছবিতে দেখানো হয়েছে চিঠির আদান-প্রদান; যার মাধ্যমে গল্পের সময়কাল সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। পাশাপাশি দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও অপু-শুভ্রা যে তাদের স্বপ্নের জাল ছড়াচ্ছে তা ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে ফুটে উঠেছে নব্বই দশকের এক কৈশোরের প্রেম। ছবিতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল অপু-শুভ্রার কেমিস্ট্রি।

পুরো ছবির দৃশ্যায়ন হয়েছে বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলা, হাওরাঞ্চল এবং কলকাতা শহরে। ছবির দৃশ্যায়ন ও দৃশ্যসজ্জা ছিল অসাধারণ। শুভ্রার বাড়ির হিন্দু ঐতিহ্য, আচার-আচরণ চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে দেখানো হয় আয়নাল গাজীর বাড়ির মুসলিম আচার-আচরণ। ছবির ন্যারেটিভ স্টাইল খুব ভালো লাগার মতো। পরিচালক ভিন্ন ঢঙে তার গল্প বলে গেছেন সম্পাদনার মাধ্যমে। ছবিতে সঙ্গীত এবং আবহ সঙ্গীতের ব্যবহারও ছিল আকর্ষণীয়। মনপুরা ছবিতে পরিচালকের বড় অস্ত্র ছিল গান। কিন্তু এ ছবিতে গল্পটাই পরিচালকের বড় অস্ত্র।

নবাগত ইয়াশের অভিনয় ছিল চোখে পড়ার মতো। কমার্শিয়াল ছবির নায়িকা পরীমণির এক বিরাট পরিবর্তন ফুটে উঠেছে এ ছবিতে। শুভ্রার চরিত্রটি বেশ রপ্ত করে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন এই ডানাকাটা পরী। ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয় সত্যি মনে রাখার মতো। নেগেটিভ চরিত্রে আবারো তিনি তার ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। ছোট চরিত্রেও দুর্দান্ত অভিনয় করা যায় তার প্রমাণ ইরেশ যাকের। আয়নাল গাজীর ছেলের চরিত্রে অভিনয় করে অল্প সময় পর্দায় থেকেও দর্শক হূদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

ছবিটি দেখতে দেখতে হঠাৎ ‘মনপুরা’ ছবির কথা মনে পড়ে গেল। বিশেষ করে, শুভ্রার বাবাকে মনুষ্যশূন্য একটি দ্বীপে রাখার দৃশ্যটি দেখে। ‘মনপুরা’ ছবিতে নায়ককেও একইভাবে নির্বাসিত করা হয়েছিল। ‘মনপুরা’ ছবিতে পরিচালক পানি নিয়ে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। এ ছবিতেও তাই। চেনা গল্পকে অচেনাভাবে উপস্থাপন পরিচালক ঠিকই করেছেন। কিন্তু ‘মনপুরা’ থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি। যেটি মেনে নিতে পারছেন না দর্শক। সমালোচক মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, ‘স্বপ্নজাল’ কি ‘মনপুরা’র সিক্যুয়াল?

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads