Logo

আন্তর্জাতিক

গাজা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে সর্বাত্মক হামলার ঘোষণা নেতানিয়াহুর

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১৯:৪০

গাজা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে সর্বাত্মক হামলার ঘোষণা নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজার প্রতিটি অংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে আসবে। আন্তর্জাতিক মহলের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়ে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করলেও সোমবার তিনি ‘সম্পূর্ণ বিজয়ের’ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

শুক্রবার শুরু হওয়া নতুন সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে সোমবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের বাসিন্দাদের উপকূলীয় এলাকায় সরে যেতে নির্দেশ দেয়। সেনাবাহিনীর ভাষ্য, তারা নজিরবিহীন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, গাজাজুড়ে ব্যাপক ও তীব্র যুদ্ধ চলছে। আমরা গাজার সব অংশ নিয়ন্ত্রণে আনব। 

তিনি জানান, হামাসের হাতে থাকা ৫৮ জন জিম্মির মুক্তি এবং এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর ধ্বংস—এই দুটি লক্ষ্য অর্জন করেই তারা বিজয়ী হবেন।

মানবিক চাপ ও সীমিত সহায়তা প্রবেশ
হামলার প্রস্তুতির মধ্যেই সোমবার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নেতানিয়াহু গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ ঢুকতে দিতে রাজি হন। এর পরপরই রওনা দেয় সহায়তা বহনকারী কয়েকটি ট্রাক, যেগুলোর গন্তব্য ছিল উত্তরের দুর্ভিক্ষকবলিত অঞ্চলগুলো।

নেতানিয়াহু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সিনেটর দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত—‘বিশ্বে আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু’ তারা তাকে জানাচ্ছেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের দৃশ্য ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন ক্ষয় করে দিচ্ছে এবং দেশটিকে একটি ‘চূড়ান্ত অবস্থানের কাছাকাছি’, এমনকি ‘নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকির’ দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

নেতানিয়াহুর ভাষায়, ‘বিজয় নিশ্চিত করতে হলে এই সমস্যার সমাধান করতেই হবে।’ তার এই বার্তা মূলত উগ্র-ডানপন্থী জোটসঙ্গীদের উদ্দেশে, যারা গাজায় কোনো ধরনের সহায়তা পাঠানোর ঘোর বিরোধী।

ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ১৬০টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। লক্ষ্য ছিল ট্যাংকবিধ্বংসী অবস্থান, ভূগর্ভস্থ অবকাঠামো ও অস্ত্র গুদাম। নতুন অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন গিডিয়নের রথ’। এর মাধ্যমে হামাসের সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ধ্বংস করাই লক্ষ্য, সঙ্গে অবশিষ্ট জিম্মিদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে।

ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, গাজায় এখন থেকে সীমিত পরিমাণে খাদ্য সহায়তা প্রবেশ করতে পারবে। ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম বলছে, সোমবারের মধ্যেই গম, তেল ও ডালসহ ৫০টি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকবে। 

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানায়, আরও ৯টি ট্রাকে শিশু খাদ্য বহন করে আনা হচ্ছে।

এই সহায়তা পাঠানো হচ্ছে মার্চে আরোপিত অবরোধ কিছুটা শিথিল করে। মার্চে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল মানবিক সহায়তার পথ বন্ধ করে দেয়। এরপর ২৩ লাখ মানুষের এই উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের হুমকি তৈরি হয় বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা।

সহায়তা পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত পরিবহন কোম্পানির মালিক নাহেদ শহেইবার গাজার বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা কোনো সহায়তা লুট না করে।

গুপ্ত অভিযানে কমান্ডার নিহত
খান ইউনিস শহরের কেন্দ্রস্থলে ছদ্মবেশে প্রবেশ করা ইসরায়েলি বাহিনীর এক অভিযানে ফিলিস্তিনি এক যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও চিকিৎসাকর্মীরা। তারা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী বাস্তুচ্যুত মানুষের ছদ্মবেশে প্রবেশ করে ‘পপুলার রেজিস্ট্যান্স কমিটি’ নামে একটি হামাস-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর কমান্ডার আহমেদ সারহানকে হত্যা করে।

সারহানকে হত্যার পর তার স্ত্রী ও সন্তানদের আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী একটি বাসে করে গাজার পূর্ব সীমান্তের দিকে চলে যায়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ সারহান বলেন, তারা দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে বাবাকে হত্যা করে, ১১ বছর বয়সী একটি বাচ্চা ও তার মাকে নিয়ে চলে যায়।

যুদ্ধ তীব্রতর, হতাহত বেড়েই চলেছে
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত আট দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান অনেক বেশি তীব্র করেছে।

দুই পক্ষের সূত্র জানায়, দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চললেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর পরই ইসরায়েল মানবিক সহায়তার কিছুটা অনুমতি দেয়।

ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্ট বলেছেন, গাজায় এখনো হামাসের উপস্থিতি ইসরায়েলি অভিযানের ‘চরম ব্যর্থতা’ এবং ভবিষ্যতের জন্য কোনো পরিকল্পনা না থাকারই প্রমাণ।

গালান্ট বলেন, ‘যদি হামাসকে বদলে দেওয়ার জন্য একটা পরিকল্পনা থাকত, তবে আজ ত্রাণ হামাসের হাতে পড়বে কি না, তা নিয়ে বিতর্কই থাকত না—কারণ তখন তারা গাজা নিয়ন্ত্রণে থাকত না।’

যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অচলাবস্থা
নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনায় একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাস নেতাদের নির্বাসন ও গাজার নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত ছিল—যা আগেই হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে।

হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি ইসরায়েলকেই দোহা আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ার জন্য দায়ী করেছেন। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, যুদ্ধ তীব্র করলে গাজায় থাকা জিম্মিদের জন্য সেটি হবে ‘মৃত্যুদণ্ড’।

গাজায় ইসরায়েলি স্থল ও আকাশ হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক বলে দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে হামাস-নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইসরায়েলি সীমান্তে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা ও ২৫১ জনকে অপহরণ করে।

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর