• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

মাতৃভান্ডার

ছবি : সংগৃহীত

খাদ্য

কোনটা কুমিল্লার আসল রসমালাই

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০১৮

কুমিল্লার মানুষের অতিথিসেবার প্রধান উপকরণ ঐতিহ্যবাহী রসমালাই। বিয়েবাড়ি থেকে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়ানো পর্যন্ত রসমালাইয়ের কদর। কুমিল্লা গিয়ে কেউ একরাত থাকবেন আর রসমালাই খাবেন না তা হয় না। এমনকি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এলেও অনেকে মাঝপথে নেমে রসমালাই নিয়ে আসেন। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে কুমিল্লার রসমালাইয়ের রস এখন গড়িয়ে গেছে বিদেশ পর্যন্ত। সৈয়দ মুজতবা আলী রসগোল্লা নিয়ে রম্যগল্প লিখেছিলেন, তিনি হয়তো কোনোদিন রসমালাই খাননি, তাহলে আরেক রসের সাগর বইয়ে দিতেন। রসমালাই অবশ্য রসগোল্লারই আধুনিক সংস্করণ। ছোট ছোট দানার মতো গুল্লি, তাতে রসের সয়লাব, মুখে দেওয়া মাত্র গলে যায়, গুল্লিটা মুখে পুরে ইচ্ছেমতো চুষুন, যতক্ষণ চুষবেন ততক্ষণ রস!

৮৮ বছর হয়ে গেল এই রসমালাইয়ের বয়স। সেই ১৯৩০ সালে এর সৃষ্টি। খনীন্দ্র সেন ও মণীন্দ্র সেন নামে দুই ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছিলেন কুমিল্লা শহরে জীবিকার সন্ধানে। কুমিল্লা শহরের মনোহরপুরের বিখ্যাত রাজ্যেশ্বরী কালীমন্দিরের কাছে তারা ‘মাতৃভান্ডার’ নামে একটি মিষ্টির দোকান খোলেন। তখন ব্রিটিশ আমল, দেশবিভাগের ১৭ বছর আগের কথা। সকালের নাশতার সঙ্গে তারা নানারকম মিষ্টিও দিতেন। দুই ভাইয়ের হাতে রসগোল্লার এক অপূর্ব সংস্করণ প্রকাশিত হয়। রসগোল্লা বড়, রসও কম, যা থাকে তার সবটা গোল্লার সঙ্গেই। দুই ভাই এমন জিনিস সৃষ্টি করলেন যেখানে রসই বেশি, গোল্লা কম। রসহীন বাঙালি সেই রসের মধ্যে ডুবে গেল।

মণীন্দ্র সেন অবিবাহিত ছিলেন, খনীন্দ্র সেনের ছিল দুই মেয়ে এক ছেলে। দেশবিভাগের আগেই খনীন্দ্র সেন মারা গিয়েছিলেন। পিতার অবর্তমানে দোকানের হাল ধরেন বড় ছেলে শংকর সেনগুপ্ত। এখন তার সন্তান অনির্বাণ সেনগুপ্ত ব্যবসার উত্তরাধিকারী। যদিও দোকানে বসেন দীর্ঘদিনের তত্ত্বাবধায়ক বাবু রাখাল চন্দ্র দে।

আপনি যদি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে বাসে যান তাহলে পথের পাশে শতাধিক মাতৃভান্ডার নামের দোকান দেখবেন। চান্দিনা থেকে শুরু আর চৌদ্দগ্রামের কাছে গিয়ে শেষ। ‘ময়নামতি মাতৃভান্ডার’, ‘কুমিল্লা মাতৃভান্ডার’, ‘অরিজিনাল মাতৃভান্ডার’, ‘নিউ মাতৃভান্ডার’, ‘বিশ্বরোড মাতৃভান্ডার’, ‘১নং মাতৃভান্ডার’, ‘মাতৃ ও ভান্ডার’, ‘আসল মাতৃভান্ডার’, ‘খাঁটি মাতৃভান্ডার’, ‘ওল্ড মাতৃভান্ডার’, ‘১০০% মাতৃভান্ডার’, ‘মনোহরপুর মাতৃভান্ডার’, ‘আদি মাতৃভান্ডার’, ‘মাতৃভান্ডার লি.’- এ রকম অসংখ্য নাম। সবাই দেদারসে রসমালাই বিক্রি করছে। এ নিয়ে আসল মাতৃভান্ডারের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের জিজ্ঞেস করলেও বলে, যে যা খুশি করুক। তাতে তো আমাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। এতে যদি তাদের দু’পয়সা আসে তাতে কী আসে যায়!

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads