• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বন্ধে পদক্ষেপ নেই সরকারের

প্রতীকী ছবি

সরকার

অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বন্ধে পদক্ষেপ নেই সরকারের

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ১৫ মার্চ ২০২০

বিভিন্ন অজুহাতে প্রায়ই দেশের অর্থ খরচ করে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরে যাচ্ছেন একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা। সেমিনার-কর্মশালায় অংশগ্রহণ, প্রশিক্ষণ গ্রহণ, উচ্চশিক্ষাসহ বিভিন্নভাবে সরকারি খরচে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন ওই সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তারা। এসব বিদেশ সফরের অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয় এবং এতে দেশের কোনো ইতিবাচক স্বার্থ জড়িত নয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এদিকে অপ্রয়োজনীয় এসব সফর বন্ধ এবং সরকারি অর্থের অপচয় রোধেও নেই কোনো  যথাযথ পদক্ষেপ।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণের সফরের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তা-কর্মচারীা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিজ দায়িত্বের কাজ বন্ধ রেখে বিদেশ সফর করছেন। জানা গেছে, মূলত পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সুযোগটির অপব্যবহার হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বেলারুশ সফর করেছেন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট দেখতে। হিসাবরক্ষণের সঙ্গে ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টের কী সম্পর্ক, তা বোঝা দুরূহ। আবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সিস্টেম অ্যানালিস্ট চীন সফর করেছেন এলইডি প্রস্তুতকারক ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের অজুহাতে। এসব ক্ষেত্রে পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে তাদের বিদেশ সফরের কোনো সাদৃশ্য নেই। আর বিভিন্ন অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, নন-টেকনিক্যাল ব্যক্তি টেকনিক্যাল বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে সফরের অভিজ্ঞতা-সম্পর্কিত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা অনুসরণ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রশিক্ষণের নামে বাছবিচারহীনভাবে এ ধরনের বিদেশ সফর  রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এ ছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অসন্তুষ্ট। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। ওই বৈঠকের পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পের অজুহাতে এবং বিভিন্ন অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তারা যেন অহেতুক বিদেশ সফর না করেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের একটি সুযোগ রয়েছে। আর একশ্রেণির কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাতে এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। বিষয়টি একধরনের রুটিনওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। এ বছর অমুক যাবেন, তো পরের বছর তমুক—বিষয়টি এমন পর্যায়ে গেছে বলে জানা গেছে। এ জন্য বিষয়টি সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সঠিক নীতমালার মাধ্যমেই সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ করা সম্ভব বলেও মনে করেন তারা। আর প্রশিক্ষণের নামে যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই উপরস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মূলত দেশ ভ্রমণ অথবা বিনোদনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব বিদেশগামী কর্মকর্তাদের দায়িত্বের সঙ্গে এসব প্রশিক্ষণের কোনো সাদৃশ্য নেই। আর এসব বিদেশভ্রমণকে সরকারি খরচের অপচয় বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

এ ব্যাপারে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের ক্ষেত্রে বা প্রয়োাজনীয় ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর প্রয়োজন হতে পারে। তবে বাছবিচারহীনভাবে অপ্রযোজনীয় বিদেশ সফর রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। কিন্তু বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ধরন দেখলেই বোঝা যায় এগুলো অপ্রয়োজনীয়।  এ ক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা অনুসরন করা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি অনেক দপ্তরে দুর্নীতি অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর দেখে তা বোঝা যায়। দেশের স্বার্থে সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় ও দেশের অর্থ অপচয় হয়, এমন সফর বন্ধ করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads