• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিএনপির কাছে ১৯ দল  চায় ১৫৪ আসন

বিএনপির জোটের লোগো

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

নির্বাচনের বিকল্প প্রস্তুতি নিচ্ছে মিত্ররা

বিএনপির কাছে ১৯ দল চায় ১৫৪ আসন

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০১৮

‘আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠন’- এই তিন ইস্যুতে একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার আছে ২০ দলের। বিএনপির নেতৃত্বেই জোটের শরিকরা দৃশ্যত ঐক্যবদ্ধ। তবে জোটের প্রধান নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে শরিক দলের অনেক নেতাই স্রেফ বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব সারছেন। তবে নির্বাচনী ময়দানে সবাই তাদের হিস্যা আদায় করতে চায় কড়ায়গণ্ডায়। এরই মধ্যে ৩০০ নির্বাচনী আসনের মধ্যে ১৫৪টি দেওয়ার বায়না ধরেছে ২০-দলীয় জোটের ১৯ শরিক। বিএনপির তরফ থেকে অবশ্য এখনো কাউকে হতাশ করা হয়নি, আবার আশাও দেওয়া হয়নি। এর ফয়সালার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। আলাপকালে শরিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা নেই। ২০ বছর ধরে একসঙ্গে পথচলার সঙ্গীরা এখন হাঁটছে আপন পথে। নির্বাচনের বিকল্প প্রস্তুতি হিসেবে নিজ দল ও প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থীর খসড়া করা হচ্ছে। এতে ১৯ দলের প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩০।

জানতে চাইলে জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনমুখী দলের প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। তবে এ মুহূর্তে বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করছে না। জোটের শরিক দলগুলোকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন খালেদা জিয়া। তবে সেটা নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্ট হলেই।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয় এবং ৯ জানুয়ারি নতুন সরকার শপথ গ্রহণ করে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে পরবর্তী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইসির দেওয়া এ আভাসেই সব দলে প্রস্তুতি চলছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা চালাচালি হচ্ছে বড় দুই জোটে। এককভাবেও প্রস্তুতি নিচ্ছে অনেক দল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিবন্ধন নিয়ে আইনি প্যাঁচে পড়া জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ১০০ আসনে। জোটের কাছে দলটি চায় ৭০ আসন। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপির দাবি ২টি আসন, প্রস্তুতি নিচ্ছে ৩টিতে। ইসলামী ঐক্যজোট ২টি আসনে প্রস্তুতি নিলেও ১টিতে ছাড় পেলেই খুশি। খেলাফত মজলিস ৬০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করেছে। তারা জোটের কাছে চায় ১০টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ৩০ আসনে প্রার্থী ঠিক করেছে, তবে জোটের কাছে চায় ১২টি। জাগপার ১২ প্রার্থী আছে, তবে দলটি ভাগ চায় ৩টি। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ৪০টি আসনে প্রার্থীর খসড়া করেছে, জোটের কাছে চায় ৩৬টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১০টি আসনে প্রার্থী ঠিক করেছে, তবে ছাড় দেবে ৮টিতে। এনপিপি চায় ৫টি আসন, বাংলাদেশ ন্যাপ ৫০ আসনে প্রার্থী ঠিক করলেও ছাড় দিতে রাজি ৪৭টিতে। জাতীয় পার্টি (জাফর) ১০টি আসনে দলীয় প্রার্থী রেখেছে, তবে ছাড় দেবে অর্ধেক। বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রস্তুতি ৩টিতে, ছাড় দেবে ১টি। এ ছাড়া মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, ইসলামিক পার্টি, ডেমোক্র্যাটিক লীগ, সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ১টি করে আসনে প্রার্থী দিতে চায়।

এ প্রসঙ্গে এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমরা এখনো জোটবদ্ধ নির্বাচনের দিকেই আছি। দলে অনেক সাবেক এমপি-মন্ত্রী আছেন। নির্বাচনী আসনে তারা কাজ করছেন। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা রমজানে ইফতার পার্টি করবেন। তিনি আরো জানান, দল পুনর্গঠনের কাজ চলছে। এর আগে গণমাধ্যমে দলটি জানিয়েছিল, ৩০ আসনে তারা প্রার্থী দেবে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিস। দলটি রংপুর, খুলনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৬০টি আসনকে টার্গেট করেছে বলে জানিয়েছেন মহাসচিব আহম্মদ আবদুল কাদের। তিনি বলেন, জোটগতভাবে নির্বাচনের চিন্তা এখনো আছে। পাশাপাশি বিকল্প প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ৩৬ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এবারো তারা বসে নেই। সারা দেশে ৪০টি আসন নিয়ে দলটি প্রস্তুতি নিচ্ছে। জোটের কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে বলে জানান পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান।

বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, তাদের প্রস্তুতি আছে দুই ধরনের। জোটগত ও এককভাবে। জোটগত ভোট হলে দলের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি (নীলফামারী-২), তার ভাই ব্যারিস্টার মশিউর রহমান গানি (রংপুর-৩) এবং দলের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া (নরসিংদী-৩) প্রার্থী হবেন। তবে এককভাবে নির্বাচন করলে ৫০টি আসনে তারা প্রার্থী দেবেন।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ৫টি আসনে প্রার্থী দেবে। দলের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২), সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা (ঢাকা -১৩), প্রেসিডিয়াম মেম্বার শহিদুর রহমান (কুমিল্লা-১০), আ হ ম জহির হোসেন হাকিম (লক্ষ্মীপুর-২) ও মাওলানা আবদুর রশিদ (জামালপুর-২) প্রার্থী হবেন। এনপিপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, জোটের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তবে আমরা এককভাবেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন।

বাংলাদেশ লেবার পার্টি (একাংশ) চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা নিজ নিজ এলাকায় নানামুখী কাজ করছি। তিনি জানান, ইরান নিজে ঢাকা-১৫ এবং দলের মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ কুমিল্লা-৫ আসনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবার স্বতন্ত্র হিসেবে ১০০টি আসনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে তাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত তারা জোটগতভাবেই নির্বাচন করার পক্ষে। দলটির অভ্যন্তরীণ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে জোটপ্রধান বিএনপি দাবি মানলে জামায়াত ৭০ আসনে প্রার্থী দেবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads