আ.লীগের পুনর্বাসন নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্টকে কেন্দ্র করে অপতথ্য

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১০:২৬

সম্প্রতি, ক্যান্টনমেন্ট থেকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে, এমন অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এরই প্রেক্ষিতে এই পোস্টকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে চারটি অপপ্রচারকে শনাক্ত করেছে তাদের প্রকাশিত সাপ্তাহিক নিউজলেটারে।
রিউমর স্ক্যানারের শনাক্তকরা অপতথ্যগুলো হল-
- সেনাসদস্যের পায়ের নিচে ড. ইউনূসের ছবি দাবিতে সম্পাদিত ছবি প্রচার
- গতরাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাড়িতে হাসনাত আবদুল্লাহ গিয়েছেন দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার
- হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাননি খালেদ মুহিউদ্দীন, ভুয়া ফেসবুক পেজের পোস্ট ভাইরাল
- সেনাপ্রধানের মৃত্যু দাবিতে আরটিভির নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার
সেনাসদস্যের পায়ের নিচে ড. ইউনূসের ছবি দাবিতে সম্পাদিত ছবি প্রচার
সম্প্রতি, ‘Cantonment situation’ ক্যাপশনে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে সেনাবাহিনী সদস্যের পোশাক পরা এক ব্যক্তির পায়ের নিচে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি দেখা যাচ্ছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী সদস্যের পোশাক পরা ব্যক্তির পায়ের নিচে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচিত ছবিটি আসল নয়। বরং, এটি গত জুলাইয়ের রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যানের ঘটনার একটি ছবির সম্পাদিত সংস্করণ। মূল ছবিতে পায়ের নিচে একটি কালো ব্যাজ ছিল।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে, প্রবাসী সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়েরের ফেসবুক প্রোফাইলে গত বছরের ৩০ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি পোস্টে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল ছবিতে দেখা যায়, ড. ইউনূসের ছবি নয়, বরং একটি কালো ব্যাজ দেখা যায়। এই পার্থক্য ছাড়া ছবি দ্বয়ের অন্যান্য বিষয়বস্তুর হুবহু মিল দেখা যায়।
এছাড়া, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের ফেসবুক পেজ থেকেও গত বছরের ৩০ জুলাই একই ছবিটি প্রকাশ করা হয়।
জুলকার নাইন সায়েরের ফেসবুক প্রোফাইলে গত বছরের ৩০ জুলাই ও ১ আগস্ট এমন আরও কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়, যেখানে অন্যান্য বাহিনীর পোশাক পরা ব্যক্তিদেরও কালো ব্যাজ মাড়াতে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে গত বছরের ৩০ জুলাই দেশে শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। তবে সরকার ঘোষিত এই রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা ‘চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি অনলাইনে প্রচার’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। তাদের সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে ‘লাল রঙ’ দেন। আলোচিত ছবিটিও সেই শোক দিবস প্রত্যাখ্যানের ঘটনার।
সুতরাং, সেনাবাহিনীর পোশাক পরা এক ব্যক্তির পায়ের নিচে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচিত ছবিটি সম্পাদিত।
গতরাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাড়িতে হাসনাত আবদুল্লাহ গিয়েছেন দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার
২২ মার্চ ভোর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, “গভীর রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বারিধারা বাড়িতে বৈষম্য নামের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ তার দলবল নিয়ে গোপন বৈঠক করছেন, এই মুহূর্তে…”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহ যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি গতকাল (২১ মার্চ) রাতের নয় বরং, প্রায় ১ মাস পূর্বে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহর যাওয়ার ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রচারিত ভিডিওটির বিবরণীতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ এর নাম উল্লেখ করতে শোনা যায়। উক্ত সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করে গেল রাতে এমন কোনো ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা পোস্টের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি ফেসবুক লাইভ সম্প্রচার ভিডিও পাওয়া যায়। “হঠাৎ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আব্দুল্লাহ, বারিধারা থেকে সরাসরি…” শীর্ষক ক্যাপশনের উক্ত লাইভ ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত ঢাকা পোস্টের প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এও নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি গতরাতের (২১ মার্চ) নয় বরং পুরোনো।
পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে ‘গভীর রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসার সামনে হাসনাত আব্দুল্লাহ’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ সেই প্রতিবেদনে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের স্থিরচিত্রের সংযুক্তিও পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘শেষ রাতে হঠাৎ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জরুরি সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ গাড়িতে চড়ে তার বাসভবনের সামনে উপস্থিত হন হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তবে এ সময় ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজি হননি। একপর্যায়ে কয়েকজন সাংবাদিক লাইভে আছেন বুঝতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে সরে যান হাসনাত। তাকে উপদেষ্টার বাসভবনের ফটকের সামনে দেখা গেলেও তিনি বাসার ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।
এর আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাত ৩টার পর সংবাদ সম্মেলন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের দায়ী করেন তিনি।…’
এছাড়াও, এ বিষয়ে একই ঘটনার স্থিরচিত্রসহ গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা নিউজের ইউটিউব চ্যানেল ও ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গতরাতে (২১ মার্চ) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহ যাওয়ার বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহ যাওয়ার দৃশ্যকে গতরাতে (২১ মার্চ) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহ যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাননি খালেদ মুহিউদ্দীন, ভুয়া ফেসবুক পেজের পোস্ট ভাইরাল
গত ২০ মার্চ রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে দাবি করেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। বিষয়টিকে তিনি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে ‘নতুন একটি ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন।
এ প্রসঙ্গে আলোচিত সংবাদ উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দন হাসনাতের পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ ইস্যুতে খালেদ মুহিউদ্দীন ছাত্র-জনতাকে হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত খবরটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, একটি ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এ সংক্রান্ত পোস্ট ছড়ানো হলে কতিপয় কিছু গণমাধ্যম সেটিকে খালেদ মুহিউদ্দীনের মন্তব্য হিসেবে প্রকাশ করে। পরবর্তীতে, ওই পেজ থেকে জানানো হয় যে এটি শুধুমাত্র একটি ফ্যান পেজ। একই সঙ্গে, খালেদ মুহিউদ্দীনও নিশ্চিত করেন যে তার নামে পরিচালিত ওই পেজটি ভুয়া।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, খালেদ মুহিউদ্দীন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছাত্র-জনতাকে হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে তার মূল ফেসবুক প্রোফাইলে এমন কোনো পোস্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বরং, আজ ২২ মার্চ তিনি নিজের মূল ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন, ওই প্রোফাইলই তার একমাত্র ফেসবুক প্রোফাইল। ওই পোস্টে তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে আরও একটি ফেসবুক পেজের লিংকও যুক্ত করা হয়। তিনি জানান, ‘সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন’ নামের পেজটি তার নয় এবং সেখানে প্রকাশিত কোনো মতামতও তার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তিনি এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও ওই পোস্টে জানান।
খালেদ মুহিউদ্দীনের ওই পোস্টের সূত্র ধরে ‘সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন’ নামের একটি ফেসবুক পেজের সন্ধান পাওয়া যায়। গতকাল ২১ মার্চ, ওই পেজে প্রকাশিত একটি পোস্টে হাসনাতের পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। সেখানে লেখা হয়, “হাসনাত আব্দুল্লাহ যে সাহসটা দেখালো, যে প্রলোভন অগ্রাহ্য করলো, সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। তাঁর পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়াতে হবে।”
পেজটির ট্রান্সপ্যারেন্সি সেকশন অনুযায়ী, এটি খোলা হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে, এবং সৌদি আরব থেকে একজন অ্যাডমিন এটি পরিচালনা করছেন। পেজটির বায়োতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘It’s a Khaled Muhiuddin fan page। এই পেইজের কোনো মন্তব্য খালেদ মুহিউদ্দীন স্যারের নিজস্ব মন্তব্য নয়।’
এছাড়া, ২২ মার্চ, আলোচিত সংবাদের বিষয়ে পেজটিতে প্রকাশিত আরেকটি পোস্টে লেখা হয়, ‘The Daily Inqilab, আপনাদের আবার এ কেমন সাংবাদিকতা? কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করেই নিউজ করে দিলেন? নিউজের উক্ত মন্তব্যটি খালেদ মুহিউদ্দিন স্যারের নিজস্ব মন্তব্য নয়। পেজের বায়োতেই দেওয়া আছে এটি একটি ফ্যান পেজ। এই পেজের সাথে Khaled Muhiuddin স্যারের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। অনুগ্রহ করে আপনারা ফেসবুক এবং ওয়েবসাইট থেকে ফেক নিউজটি ডিলিট করে দিন।’
সুতরাং, খালেদ মুহিউদ্দন হাসনাতের পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।
সেনাপ্রধানের মৃত্যু দাবিতে আরটিভির নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার
সম্প্রতি, ক্যান্টনমেন্ট থেকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে, এমন অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। দাবিটি মূল ধারার গণমাধ্যম আরটিভির আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় এবং আরটিভিও উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আরটিভির ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে আরটিভির লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২১ মার্চ, ২০২৫ শনিবার উল্লেখ করা হয়েছে।
এর সূত্রে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, আরটিভির ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়াও, লক্ষ্য করা যায় যে, আরটিভির ফটোকার্ডগুলোতে সাধারণত তারিখের পাশে বার উল্লেখ থাকে না৷ তবে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে বারও উল্লেখ রয়েছে।
অর্থাৎ, আরটিভি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।
পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে ফেসবুকে Khalid Rahman নামের একটি অ্যাকাউন্টে গত ২১ মার্চ দুপুর তিনটার পর এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি করা হয়। পেশায় ডিজাইনার এই ব্যক্তি জেনারেল ওয়াকারের মৃত্যুর ভুয়া এই ফটোকার্ডটি নিজের অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি একাধিক গ্রুপেও পোস্ট করেন।
তাছাড়া, এই ফটোকার্ড প্রকাশের ঘণ্টা চারেক পর সেনাপ্রধানের একই ছবি দিয়ে আরটিভির আরেকটি নকল ফটোকার্ডও পোস্ট করেন তিনি। ভুয়া এই ফটোকার্ডে লেখা ছিল, সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামানের মৃত্যুর পর পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে ১৬ ভরি স্বর্ণ মিললো ওয়াকারুজ্জামানের পেট থেকে।
সুতরাং, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মৃত্যু দাবিতে আরটিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।