Logo

আন্তর্জাতিক

দোদুল্যমান রাজ্যের হাতে ট্রাম্প–কমলার ভাগ্য

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫১

দোদুল্যমান রাজ্যের হাতে ট্রাম্প–কমলার ভাগ্য

ছবি : সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র ২ দিন বাকি। আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন ভোটাররা বাছাই করবেন তাদের প্রেসিডেন্ট। তবে এই প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ডের প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে। তাই যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই পৃথিবীর প্রায় সবদেশেরই চোখ থাকে মার্কিন নির্বাচনের উপর।

যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি রাজ্য রয়েছে এবং মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। বিজয়ী প্রার্থীকে ২৭০টি বা তার বেশি ভোট পেতে হয়। ইতোমধ্যে কিছু অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট প্রদান শুরু হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে দ্বিদলীয় প্রাধান্য রয়ে গেছে। প্রতিটি নির্বাচনে এগুলোর বেশির ভাগ ভোটার সাধারণত একই দলকে ভোট দেন– হয় ডেমোক্রেটিক অথবা রিপাবলিকান পার্টি। মাত্র কয়েকটি রাজ্য রয়েছে, যেখানে যে কোনো প্রার্থী জিততে পারেন। এগুলোকে ‘সুইং স্টেট’ অর্থাৎ, রণক্ষেত্র বা দোদুল্যমান রাজ্য বলা হয়। এবারের নির্বাচনে এ রকম রাজ্য সাতটি। এদের ‘সেভেন সিস্টার্স’ও বলা হয়।

অঙ্গরাজ্যগুলো হলো অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন। এই রাজ্যগুলো আবার দুটি গ্রুপে বিভক্ত– ‘সান বেল্ট’ এবং ‘রাস্ট বেল্ট’। এই দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে ৯৩টি ভোট রয়েছে। জয় পেতে হলে উভয় প্রার্থীকে এর মধ্যে অন্তত তিনটি রাজ্যে জিততে হবে।

পেনসিলভানিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিন রাস্ট বেল্টের অংশ। এ রাজ্যগুলো দেশটির উৎপাদন শিল্পের সাবেক কেন্দ্রস্থল। এই শিল্প ঐতিহ্যের রাজ্যগুলোর বেশির ভাগ ভোটার বহু বছর ধরে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়ে আসছেন। ডেমোক্র্যাটরা গত আটটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্যে সাতটিতে এসব রাজ্যে জয় পেয়েছেন। শুধু ২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এর প্রতিটিতে জয়লাভ করেন। এই তিনটি রাজ্যে জয় পেলেই কমলা হ্যারিস নির্বাচনে বিজয়ী হবেন। তবে ট্রাম্প এই তিনটি রাজ্যে জয়ী হলেও প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হওয়ার জন্য তাঁকে অন্য আরও অন্তত একটি রাজ্যে জয় পেতে হবে।

এদিকে এসব রাজ্যে ট্রাম্পের শক্তির জায়গা ঠিক উল্টো। তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যগুলোর গ্রামীণ এলাকায় বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেন।

পেনসিলভানিয়ায় ১৯টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। যা দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কমলা হ্যারিস পেনসিলভানিয়া এবং রাস্ট বেল্ট গ্রুপ থেকে আরও একটিতে জয় পেলে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যাবেন। তিনি পেনসিলভানিয়ার সঙ্গে সামগ্রিকভাবে মাত্র তিনটি দোদুল্যমান রাজ্যে জিতে ২৭০ ভোটের বাধা পার হতে পারেন। তবে নেভাদায় পর্যাপ্ত ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট নেই। তাই পেনসিলভানিয়া এবং অন্য যে কোনো দুটি রাজ্যে তার জয়ই হোয়াইট হাউজ জয়ের জন্য যথেষ্ট হবে।

বর্তমানে পেনসিলভানিয়ায় উভয় প্রার্থীই ৪৮ শতাংশ সমর্থন নিয়ে সমানে সমান অবস্থানে রয়েছেন। পেনসিলভানিয়া এ নির্বাচনের প্রধান রণক্ষেত্র। পেনসিলভানিয়া ২০১৬ সালে জয় পান ট্রাম্প। তবে বাইডেন ২০২০ সালে বিজয়ী হন এখানে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের রাজ্যগুলোকে প্রায়ই সান বেল্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কারন, উত্তরের তুলনায় সেখানে জলবায়ু উষ্ণ। এ নির্বাচনে দক্ষিণের চারটি দোদুল্যমান রাজ্য হলো- অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা ও নর্থ ক্যারোলাইনা। রাস্ট বেল্টের মতোই কমলাকে প্রেসিডেন্ট হতে হলে এর চারটিতেই জয়ী হতে হবে। তবে এটি কমলার জয়ের জন্য একটি অসম্ভব পথ। কারণ, ১৯৪৮ সালে হ্যারি ট্রুম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা এই চারটি রাজ্যে একই সঙ্গে কখনও জয়ী হননি।

ট্রাম্প সান বেল্টের সবগুলোতে জয়ী হলেও তাঁকে আরও একটি রাজ্যে জয় ছিনিয়ে নিতে হবে। তবে রিপাবলিকানদের এই রাজ্যগুলোতে জয়লাভের ইতিহাস রয়েছে। দলটির প্রার্থী নিক্সন, রিগান, বুশ এবং বুশ জুনিয়র প্রত্যেকে এক বা একাধিক নির্বাচনে এসব রাজ্যে জয়লাভ করেছিলেন।

ট্রাম্প গত দুটি নির্বাচনে নর্থ ক্যারোলাইনায় জয় ধরে রেখেছেন। এখানে জয় ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে হোয়াইট হাউস জয় তার জন্য আরও কঠিন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় তাকে অন্তত দুটি রাস্ট বেল্ট এবং আরও দুটি সান বেল্টে জিততে হবে।

১৯৮০ সাল থেকে শুধু একবার নর্থ ক্যারোলাইনায় জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা জয়ী হন এখানে। তবে কমলা এখানকার কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ভোটদানে অনুপ্রাণিত করতে পারলে জয়ী হতে পারেন।

এদিকে, পেনসিলভানিয়ার কিছু ভোটারের মেইল ভোট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদের সশরীরে ভোট দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। গত শুক্রবার এ রায় দেন মার্কিন আদালত। রিপাবলিকানরা এই ধরনের ভোট গণনা না করার আবেদন জানালেও আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় এসব অঙ্গরাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজনের পক্ষে প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে ট্রাম্প–সমর্থক ইলন মাস্কের মতো ধনকুবের। পছন্দের প্রার্থীর জন্য প্রচারণায় নেমেছেন তারকারাও।

শনিবার (২ নভেম্বর) দুই প্রার্থী নর্থ ক্যারোলাইনা ও ভার্জিনিয়ায় ভাষণ দেন। মার্কিন নির্বাচনের সর্বশেষ জরিপগুলোর তথ্যমতে, আগামী ৫ নভেম্বর দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে। 

এসবি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর