ভোজন বিলাসীদের কাছে বরিশালের গৌরনদীর দধি ছাড়া ভোজন রসনা পুরোটাই যেন অসমাপ্ত থেকে যায়। ঐতিহ্যগত কারণে ক্রেতা সাধারনের কাছে গৌরনদীর দধি লোভনীয় খাবার হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোভনীয় এ খাবার দেখলেই জিভে জল আসে না এমন ভোজন বিলাসীদের খুঁজে পাওয়াই যাবে না। গৌরনদীর দধি’র ঐতিহ্য ও সুনাম এখন শুধু দেশেই নয়; আন্তর্জাতিকভাবেও খ্যাতি অর্জন করেছে। সুদূর যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে “গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডার” নামের প্রতিষ্ঠান।
প্রায় আড়াই’শ বছরের পুরনো দেশের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী গৌরনদীর দধি’র সারা দেশে রয়েছে যথেষ্ট চাহিদা। বিয়ে, বৌ-ভাত, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য এবং ভোজন বিলাসীরা রসনা মেটাতে দূর-দূরান্ত থেকে দধির জন্য আসেন গৌরনদীতে। প্রতিদিন শত শত মন দধি এখান থেকে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুর, সিলেটসহ বিভিন্নস্থানে পাঠানো হয়। দেশের বাইরেও ব্যাপকভাবে গৌরনদীর দধি’র সুনাম রয়েছে। গৌরনদীর দধির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ১০/১৫ দিনেও স্বাভাবিক আবহাওয়ায় নষ্ট হয় না। যেকোন যানবাহনে সহজে বহন করা যায়।
চাহিদার সাথে সাথে অধিক মুনাফার কথা না ভেবে গুণগত মান ও সুনামকে ধরে রাখতে গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি তৈরি করে আসছেন সুশীল ঘোষ প্রতিষ্ঠিত গৌরনদী বন্দরের শ্রী গুরু মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বলরাম ঘোষ। সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করায় ইতোমধ্যে একাধিকবার জেলার দীর্ঘমেয়াদী সেরা করদাতা হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানটি পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন।
বলরাম ঘোষ বলেন, বাবার (সুশীল ঘোষের) পাশাপাশি গত ২৩ বছর ধরে আমি এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছি। সম্প্রতি বাবার মৃত্যুর পর আমিই বাবার পেশাকে ধরে রেখেছি। সুশীল ঘোষ বংশ পরস্পরায় দীর্ঘ ৫০ বছর সুনামের সাথে এ ব্যবসা করে গেছেন।
সূত্র মতে, প্রায় আড়াই’শ বছর পূর্বে ডাওরী ঘোষ নামের এক ঘোষ গৌরনদীতে তৈরি করেন এ লোভনীয় খাবার। পরবর্তীতে বংশপরস্পরায় গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী ভোজ্যপণ্যের ধারা ধরে রেখেছেন সুশীল ঘোষ, শচিন ঘোষ, গেদু ঘোষ, দিলীপ দাসসহ অন্যান্যরা। বর্তমানে একমাত্র গৌরনদীর ঐহিত্যকে ধরে রেখেছেন বলরাম ঘোষ। তিনি ঐতিহ্যবাহী দধি তৈরি করে সারাদেশে সরবারাহের মাধ্যমে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।
সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০০০ সালে ডিবি লটারীর বিজয়ী হিসেবে আমেরিকায় গমন করেন শ্রীগুরু মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারিগর রানা ঘোষ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেশ স্বল্প সময়ে যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়ে গৌরনদী দধির সুনাম।