• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
কেন আমির আহমদ এর বিকল্প খুঁজবে জুলধাবাসী!

প্রতিনিধি পাঠানো ছবি

সারা দেশ

কেন আমির আহমদ এর বিকল্প খুঁজবে জুলধাবাসী!

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০২২

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে চশমা প্রতীকে লড়ছেন দলীয় প্রার্থী ঘোষিত ব্যাংকার আমির আহমদ। যিনি বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। একই পদে উড়োজাহাজ ও তালা প্রতীকে লড়ছেন শিকলবাহার মোঃ আব্দুল হালিম ও মহি উদ্দিন মুরাদ।

কর্ণফুলী জুড়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হকে কিনা এ নিয়ে আলোচনা চলছে। ওদিকে, জুলধা ইউনিয়নের দোকান ও পাড়া মহল্লায় চলছে আমির আহমদ কে নিয়ে নানা সমালোচনা। আবার অনেকেই বলছেন, জনবিচ্ছিন্ন এক ব্যাংক ম্যানেজার কে প্রার্থী করেছেন। নিজ ইউনিয়ন জুলধায় যিনি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছেন।

জুলধা ইউনিয়নের ডাঙারচরবাসী বলছেন, ‘ডাঙারচরের প্রধান সড়কটি নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ছিল চরমে। বিগত ৫ বছর যাবৎ জলে ডুবি বেঁচেছে লোকজন। মহিলাদের খুব কষ্ট হয়েছে। বার বার নেতাদের ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। ডাঙারচরের সড়ক ও ঘাট নিয়ে কত মানববন্ধন হলো তবুও পাশে ছিলেন না চশমা মার্কার আমির আহমদ।

অন্তত তিনি চাইলে নেতা হিসেব উপজেলা চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু কখনো খোঁজ খবর নেননি। যা নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও ডাঙারচরের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। ফলে, যতই হাক ডাক করুক না কেন? জুলধায় অনেকটা কোনঠাসা ও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে আমির আহমদ।

জুলধা পাইপের ঘোড়া বাজারের মুদি দোকানদার মোঃ হাশেম বলেন, ‘জনবিছিন্ন এক নেতাকে দলীয় মনোনয়ন বলে জাহির করায় দলের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটের মাঠে যা নিরসন করা কঠিন হবে। মহিলারা ভোট দেবেন কিনা সন্দেহ আছে।’

২০১৭ সালের উপজেলা নির্বাচন ও ২০২২ সালের ইউপি নির্বাচনে আমির আহমদ কখনো নৌকার পক্ষে মাঠে নামেনি। বার বার নিজেকে ক্লিন ইমেজের দাবি করলেও ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে তৃণমূলের সমর্থিত প্রার্থীদের তালিকায়ও কখনো তার নাম আসেনি। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে আমির আহমদ নিজেকে দলীয় প্রার্থীর তকমা লাগিয়ে দিব্যি ঘুরছেন। কিন্তু নিজ ইউনিয়ন জুলধায় বেকায়দায় পড়েছেন।

ভোটের মাঠে জুলধার প্রায় ১৫ হাজার নারী-পুরুষ যে ৯ টি কারণে আমির আহমদ এর বিকল্প খুঁজতে পারে। তার সম্ভাব্য কারণগুলি উপস্থাপন করা হলো-

১. কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়ন সড়কে মিল কারখানায় যেসব ভারি যানবাহন চলাচল করে। ওসব যানবাহন থেকে যারা নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন সকলেই আমির আহমদ অনুসারি বলে ড্রাইভার ও মালিক পক্ষরা জানিয়েছেন। বিষয়টি জানার পরও কখনো আমির আহমদ ব্যবস্থা নেননি। এছাড়াও জুলধায় যেকোন জমি ক্রয়-বিক্রয়ে যারা দখল বেদখলে জড়িত সেই সিন্ডিকেটের সদস্যরাও তার লোক। যিনি এবার ভাইস চেয়ারম্যান পদে চশমা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। গোপন লেনদেনের বিষয় হওয়াতে মুষ্টিমেয় লোকজন এসব জানলেও কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। এবার নির্বাচন আসায় লোকজন এসব নিয়ে সমানে সমালোচনার ঝড় তোলেছে।

২. জুলধায় অবস্থিত শিল্প কারখানা সুপার পেট্রোলিয়াম, ক্যাব বাংলা, এইচ এম অ্যাক্সিজেন লিমিটেড, এইচ এম স্টীল এন্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, পারটেক্স কোম্পানী, মোস্তফা হাকিম ব্রিকস ও অন্যান্য মিল কারখানার ইন্ডাস্ট্রির কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীর সঙ্গে সিন্ডিকেট করে নানা বর্জ্য ও পরিত্যক্ত স্ক্র্যাপ ব্যবসার সাথে আমির আহমদ এর নামও জড়িত। তিনি বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে প্রভাব খাটিয়ে বখাটে ছেলেদের দিয়ে প্রতি মাসে সুবিধা নিতেন। বিষয়টিতে মিল কারখানার মালিকেরা তিক্ত বিরক্ত হলেও ব্যবসার খাতিরে নীরব রয়েছেন। এ নিয়ে ডিসি অফিসেও নানা অভিযোগ রয়েছে। যার ক্ষোভ নির্বাচনে বিস্ফোরণ হতে পারে। কেননা ওসব মালিকদের কোম্পানীতে জুলধার হাজার হাজার লোক চাকরি করেন।

৩. এসব ব্যবসা থেকে একটা বড় অংকের মাসোহারা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এজন্য আমির আহমদ কখনো চাননি জুলধায় নৌকার কোন প্রার্থী চেয়ারম্যান হোক। কারণ দলীয় ভাবে প্রভাবশালী কেউ চেয়ারম্যান হলে সে সিন্ডিকেটটি সমর্থন হারাবে। ইনকাম কমে যেতে পারে এমন শঙ্কা ছিল তাঁর। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি নৌকার হয়ে নুরুল হকের পক্ষে ছিলেন না। তাঁর অনুসারীরাও নিয়ম রক্ষার্থে নীরব ছিলেন। এবারের নির্বাচনে আমির আহমদ এর প্রতীক চশমা। এ প্রতীকের প্রতি অনাগ্রহী ভোটাররা। এজন্য হয়তো ভোটাররা অন্য প্রার্থীকে বেঁচে নেবেন। কেননা উপজেলা নির্বাচন কে জাতীয় নির্বাচন ভাবছেন না জুলধা গ্রামের মানুষজন।

৪. জুলধা ইউনিয়ন দুই ভাগে বিভক্ত। ডাঙ্গারচর তিনটি ওয়ার্ড। ভোট মাত্র ৪ হাজার মতো। অন্যদিকে, জুলধার বাকি ৬ টি ওয়ার্ডে ৯ হাজার মতো ভোটার। দীর্ঘস্থায়ী ভাবে দুই গ্রামের লোকদের মাঝে একটা ভোট দ্বন্দ্ব আছে। অতীত নির্বাচনের ফলাফল ও ইতিহাস বলছে, জুলধার মানুষ সহজে ডাঙ্গারচরের মানুষকে ভোট দেয়নি। এবারও দেবেন না। বিকল্প খুঁজে নেবেন।

৫. ডাঙ্গারচরের মিলখানায় দুটো সিন্ডিকেট রয়েছে। দুটোর ধাওয়া, পাল্টা হামলা ও মারামারি ঘটনার নৈপথ্য ভূমিকা কিন্তু আমির আহমদ এর। ডাঙ্গারচর সুপার পেট্রোলিয়ামসহ প্রতিটি ফ্যাক্টরি থেকে তার ঈশারায় চলে বাম হাত ডান হাতের কাজ। বাদ যায় না তেল চোরাকারবারিও। সিন্ডিকেট গ্রুপের মাধ্যমে এ টাকা ছড়িয়ে যায় কর্ণফুলীর বাকি ইউনিয়নের নেতাদের পকেটে। এজন্য জুলধার মানুষেরা খুবই ক্ষুব্ধ আমির আহমদের প্রতি। কেননা, অন্য ইউনিয়নেও প্রচুর মিলকারখানা ও বড় বড় ফ্যাক্টরী রয়েছে। কিন্তু জুলধার নেতারা কখনো চরপাথরঘাটা, শিকলবাহার ওসব মিল কারখানা থেকে অবৈধ টাকার ভাগ পায় না। সুতরাং উপজেলা নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা তৈরি হয়েছে।

৬. শুধু এসব কারণে নয়। নানা কারণে আমির আহমদ নিজ ইউনিয়নে ইমেজ সংকটে পড়েছে। বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে গায়েবি নাশকতা মামলায় জুলধা ইউনিয়ন থেকে যেসব নিরীহ লোকজন কে আসামি করা হয়েছিলো। তাদের তালিকা সরবরাহ করেছিলেন ইউনিয়ন নেতা হিসেবে তিনি। যিনি একজন ব্যাংকার হয়েও জনপ্রতিনিধি হতে এখন মরিয়া। তিনি জানেন জুলধায় কি কি আয়ের পথ রয়েছে। যদিও তার নিজ ওয়ার্ডের সাহাবুদ্দিন মেম্বারের সাথে তার চরম দ্বন্দ্ব। গত ইউপি নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে শালাকে ভোটে দাঁড় করিয়ে ছিলেন। এবারও তার নাটকীয়তা বুঝে নিতে পারে।

৭. জুলধার সাইফুল ইসলাম বদি মেম্বার ও সাবেক সিরাজ মেম্বার সাথে দ্বন্ধ ক্যাব বাংলার কাজ নিয়ে। ইদানীং আবার ডাঙারচরের ঘাটটি আমির আহমদ কৌশলে দখল করেছেন। নানা অপকৌশলে ইজারাদারকে লেলিয়ে দিলেন সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে। আর গোপনে উপজেলা নেতাদের পকেট ভারি করেছেন। সাধারণ জনগণ জনপ্রতি ভাড়া ও সেবা বাড়াতে লড়াই করেও পরে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। সেটা নিয়ে এলাকাবাসী আমির আহমদ এর উপর এখনো বিরক্ত। যা ভোটের মাঠে প্রতিফলন হতে পারে।

৮. আমির আহমদ রাজনীতির আড়ালে জুলধা এলাকার বিভিন্ন জনের সাথে প্রভাব কাটাতে গিয়ে দ্বন্ধে জড়িয়েছেন। একজন ব্যাংকার হিসেবে জনগণের সামনে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নেই। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি যুবলীগ নেতা মুসাকে ভোটে দাঁড় করান। পরে তার পক্ষে আর অবস্থান নেননি। শেষে প্রকাশ্যে সমর্থন দিলেন পরে নুরুল হকের পক্ষে। সে থেকে মুসাও নাখোশ। একজন সিনিয়র নেতার দু'মুখীভাব অবাক করেছে সে সময় সাধারণ জনগণকেও। কারণ মুসার একটা ভোট ব্যাংক আছে। আমির আহমদ এর সাথে রফিক চেয়ারম্যানেরও নেই তেমন ভালো সম্পর্ক। যদিও রফিক চেয়ারম্যানের নিজস্ব কিছু লোকজন ও বলয় রয়েছে। এসব ভোট চশমা প্রতীকে পড়বে কিনা সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

সবশেষে বলা যায়, ভোট ভোটারের নিজস্ব আমানত। এ আমানত যোগ্য প্রার্থী বা যোগ্য রাজনৈতিক দলের পক্ষে পড়বে এটিই স্বাভাবিক। ড. মাহাথির মোহাম্মদ একাধারে ২২ বছর (১৯৮১-২০০৩) মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে ওই দেশকে উন্নয়নের উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিধায় প্রায় ৯৩ বছর বয়সে ওই দেশের মানুষ আবার জোর করেই রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন করেছেন তাঁকে। এ থেকে সবারই শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।

তপশীল মতে, কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ২ নভেম্বর ইভিএম পদ্ধতিতে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার মোট ভোটার ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭৯৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৩ হাজার ৫৯৯ জন ও মহিলা ভোটার ৫৪ হাজার ২০০ জন।

চেয়ারম্যান পদে নৌকা পেলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী পেলেন আনারস, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আমির আহমদ পেলেন চশমা, মহিউদ্দিন মুরাদ পেলেন উড়োজাহাজ এবং মো. আবদুল হালিম তালা প্রতীক। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মোমেনা আক্তার নয়ন পেলেন কলস, বানাজা বেগম হাঁস প্রতীক, ফারহানা মমতাজ ফুটবল এবং রানু আকতার বৈদ্যুতিক পাখা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads