• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
একশ টাকায় করোনা মুক্তি

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

একশ টাকায় করোনা মুক্তি

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০২১

মাত্র ১০০ টাকায় করোনা মুক্তি! হয়তো কেউ ভাবতে পারেন রাস্তার কোনো হকার এটি বলছেন। না, সারা দুনিয়া যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক মাসুদুল হাসান চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গলায় সামান্য ব্যথা অনুভব বা করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্রই হয় টেস্ট করেন নতুবা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেন।  তিনি বলেন, করোনার যত ধরনের স্ট্রেইন আসুক মাত্র ১০০ টাকার ওষুধে বাসায় চিকিৎসা নিলে এটি সেরে যাবে।

পরজীবীনাশক ওষুধ আইভারমেকটিনকে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করছেন অনেকেই। তবে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে ওষুধটি এখনো পুরোপুরি স্বীকৃতি লাভ করেনি। করোনার চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের ব্যবহার নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক মাসুদুল হাসান দাবি করেছেন, করোনার চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত এই ওষুধটি একমাত্র ভরসা। তিনি গত ২০ এপ্রিল ‘আমার হেলথ ডটকমডটটিভি’ নামের একটি ইউটিউব ভিডিও’র সাক্ষাৎকারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী, আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রতিরোধে এবং পোস্ট করোনা চিকিৎসায় আইভারমেকটিন কার্যকর একটি মেডিসিন। নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন লার্নিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাসুদুল হাসান যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধটি করোনা চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন,  যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট ভার্জিনিয়া মেডিকেল স্কুলের ফার্মাকোলজিস্ট এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ারের প্রধানও এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন এবং তারা ব্যবহার করে শতভাগ কিউর পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। 

তিনি জানান, ২০২০ সালের মে মাসের ৫ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটিতে একটা টেস্টে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা ৯৮% বলে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ ৯৮ শতাংশ করোনাভাইরাসকে আইভারমেকটিন কিল করতে পারে।

আইভারমেকটিনকে সর্বপ্রথম উকুনের ওষুধ বলা হতো। তবে এটিকে উকুনের ওষুধ বলে বিভ্রান্ত করা ঠিক না বলে মনে করেন ডাক্তার মাসুদুল হাসান। তিনি জানান, ১৯৭২ সালে আমেরিকাতে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার এম এ আজিজ। তিনি ১৯৭৫ সালে এটিকে এভারমেকটিন থেকে আইভারমেকটিনে রূপান্তর করেন। ১৯৮১ সালে এফডিআই এটিকে অনুমোদন দেয় ৪টি রোগের জন্য। আইভারমেকটিনের তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই উল্লেখ করে মাসুদুল হাসান বলেন, ‘এটা শুধু একশজনের মধ্যে মাত্র ৬ জনের সর্বোচ্চ মাথাব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। এটা প্রিভেনটিভ হিসেবে কাজ করে।’

করোনা আক্রান্ত হলে, আক্রান্ত হওয়ার আগে এবং পরে ওষুধটি কীভাবে কতটুকু গ্রহণ করতে হবে সে সম্পর্কেও একটি ব্যবস্থাপত্র তিনি দেন। তিনি জানান, ‘যার ওজন ৮০ কেজির ওপরে তিনি প্রিভেনটিভের জন্য ১২ মিলি গ্রামের আইভারমেকটিন ট্যাবলেট খালি পেটে প্রতি পনেরো দিন পরপর খাবেন। সাথে ভিটামিন ডি-৪০০০০ মিলি খাবেন, সেইসাথে মাস্ক পরবেন এবং টিকা গ্রহণ করবেন। এ ছাড়া আক্রান্ত হলে পরপর ৫ দিন আইভারমেকটিন ১২ মিলি গ্রাম খালি পেটে খেতে হবে। সেইসাথে ডক্সিসাইক্লিন। আর যদি ব্লাড থিনার খেতে চান পারেন। তবে প্রয়োজন নেই। নইলে অ্যাসপিরিন অথবা ভিটামিন সি অথবা ভিটামিন ডি খেতে পারেন।’

তিনি পোস্ট করোনা রোগীদের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘অনেকেই করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছেন। অনেকেই দুর্বল হয়ে পড়ছেন, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তারা আইভারমেকটিন প্রতি মাসে একটি করে ১২ মিলি করে খেতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘করোনা নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে। আমরা জানি না কতদিন এটি থাকবে। তবে যত ধরনেরই আসুক না কেন, এটা প্রমাণিত যে, একমাত্র আইভারমেকটিন ওষুধই আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে।’

ডাক্তার মাসুদুল হাসান ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে করোনা আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে করোনা আছে কি না সেটি পরীক্ষা করে নিতে হবে। তবে র্যাপিড টেস্ট না, আরটিপিসিআরের মাধ্যমে। যদি করোনা থাকে তাহলে ওই অবস্থায় ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না। কারণ এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, যেটা আমেরিকাতে দেখেছি।’

দেশে করোনা চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের ব্যবহার পরীক্ষামূলকভাবে করেছেন অনেকেই। ফলাফলও ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন অনেক চিকিৎসক। এ ছাড়া গেল বছর জুনে আইসিডিডিআর,বি’র পক্ষ থেকে করোনা চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের ব্যবহার নিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়।

এ ছাড়া ওষুধটির ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ তারেক আলম ১৯ জন চিকিৎসক ও গবেষকের একটি দল নিয়ে কাজ করেন। সম্মান ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ডা. রুবাই-উল-মুর্শেদের সঙ্গে তিনি আইইডিসিআরের পরিচালিত একটি গবেষণায় সহ-প্রাথমিক তদন্তকারী ও উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য হিসেবে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আইভারমেকটিন ব্যবহারের বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন।

তারা জানান, এর আগে থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কিছু দেশে সার্স, জিকা ও ডেঙ্গুর চিকিৎসায় আইভারমেকটিন ব্যবহার করা হয়েছে। গত বছরের ১৫ এপ্রিল ডা. তারেক আলম এফডিএ অনুমোদিত এই ওষুধের গবেষণার বিষয়ে করোনা আক্রান্ত এক সহকর্মীকে জানান। তিনি নির্দেশনা অনুযায়ী ডক্সিসাইক্লিনের সঙ্গে এই ওষুধ সেবন করতে রাজি হন।

এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়। এরপরে কোভিড-১৯ পজিটিভ আরো চিকিৎসক ও ইন্টার্নদের সম্মতি নিয়ে তাদেরও এই ওষুধ দেওয়া হয়। আমরা ৫০ জনের বেশি রোগীকে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে এই ওষুধ সেবনে উপকার পেতে দেখেছি। ২০২০ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) জার্নালে এই ফলাফল নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এই চিকিৎসা পুলিশ হাসপাতালেও প্রয়োগ করা হয় এবং সেখানে সাফল্যের হার ৯০ শতাংশ।

ডা. আলম ও তার দল বাংলাদেশ মেডিকেল গবেষণা কাউন্সিল (বিএমআরসি) ও ঔষধ প্রশাসনের কাছ থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে কোভিড-১৯ রোগীদের ওপর এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি নেন। এখন এই গবেষণাটি আইসিডিডিআর,বি এবং আইইডিসিআরেও করা হচ্ছে। এই ওষুধটির ব্যবহার এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত ফলাফল নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ওষুধটি নিয়ে গবেষণা শুরু করার পর আইভারমেকটিনের আবিষ্কারক নোবেল বিজয়ী ডা. সাতোশি ওমুরা ডা. আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পাশাপাশি তানজানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মেক্সিকোর গবেষক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক অফিস থেকেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। আমরা আশা করছি, ট্রায়ালের ফলাফল আসার পর আমরা কোভিড-১৯ চিকিৎসায় জাতীয় নির্দেশিকার অংশ হিসেবে এই ওষুধটি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারব। তবে সেই গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads