• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
আবারো বাড়ল পানির দাম, ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

আবারো বাড়ল পানির দাম, ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৬ মে ২০২১

বেড়েই চলেছে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম। এবার দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশ। ফলে প্রতি এক হাজার লিটার বা এক ইউনিটের জন্য আবাসিক গ্রাহককে দিতে হবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বর্তমানে প্রতি ইউনিটের দাম ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট পানির দাম দিতে হবে ৪২ টাকা। বর্তমানে যার দাম ৪০ টাকা। আগামী পহেলা জুলাই থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।

গত সোমবার ঢাকা ওয়াসার ভার্চুয়াল বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে গত ১৩  বছরে ১৪ বার পানির মূল্য বৃদ্ধি করল ঢাকা ওয়াসা। গত বছরের এপ্রিলে করোনা মহামারীর মধ্যেই পানির দাম বাড়িয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। তখন আবাসিকে প্রতি ইউনিটের দাম বেড়েছিল ২ টাকা ৯০ পয়সা।

এদিকে করোনাকালে অর্থনৈতিক দুঃসময়ে পানির দাম বাড়নোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। আর মূল্য বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ হলেও গণবিরোধী মন্তব্য করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। আর ওয়াসার ভাষ্য, তারা দাম বৃদ্ধি করেনি, মূল্য সমন্বয় করেছে।

ক্ষুুব্ধ গ্রাহকরা জানান, করোনায় লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। অনেক প্রতিষ্ঠানের বেতনও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাজধানীতে বসবাসকারী ভাড়াটিয়ারা এমনিতেই নানা অর্থনৈতিক চাপে আছে। তার ওপর পানির মূল্য বৃদ্ধিতে তাদের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

মিরপুর-১ নম্বরের সি ব্লকের বাসিন্দা মো. সোহেল রানা কাজ করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে। করোনার কারনে গত বছরের শেষ দিকে চাকরি হারান তিনি। পরে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি হলেও গত ৪ মাস ধরে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির বেতন। তিনি জানান, বেতন পাই বা না পাই বাড়ি ভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। তার ওপর ৬শ থেকে ৭শ টাকা দিতে হয় পানির বিল। কোনো মাসে এর চাইতে বেশিও আসে। এ ছাড়া অন্যান্য ইউটিলিটি বিল তো আছেই। এসব ভাড়া-বিল পরিশোধ করে সংসার চালাতে প্রতি মাসেই ঋণ করতে হয়। এখন যদি আবার পানির বিল বাড়ে এটা আমাদের ওপর জুলুমের শামিল।

তার মতো একই প্রতিক্রিয়া জানালেন বেসরকারি স্কুলশিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানান, করোনায় সবকিছু সীমিত পরিসরে খোলা থাকলে বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থী না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষও নিয়মিত বেতন দিচ্ছে না। প্রাইভেট টিউশনিও কেউ পড়তে আসছে না। অনেক কষ্টে সংসারের ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্ত্রীর গয়নাও বন্ধক রাখতে হয়েছে। এখন যদি আবার পানির বিল বাড়ানো হয়, তা যত অল্পই হোক না কেন, এখন সেটাই অনেক বেশি বোঝা হয়ে যাবে আমাদের মতো মানুষদের জন্য।

জানা যায়, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান তিন মাসের ছুটিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তবে ছুটিতে যাওয়ার আগেই গত মার্চ মাসে বোর্ডের ২৭৮তম সভায় তিনি পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই সময় এ সিদ্ধান্ত সমালোচনার মুখে পড়ে। ফলে তখন তা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু গত সোমবার ওয়াসার ভার্চুয়াল বোর্ড সভায় সিদ্ধান্তটি অনুমোদিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত হন ওয়াসার এমডি।

সূত্র জানায়, ওয়াসার ১৩ সদস্যের বোর্ডে ৪ জন সদস্য করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই পানির দাম বৃদ্ধির বিপক্ষে ছিলেন। তাদের মতে, করোনায় সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। তাই এখনই পানির মূল্য না বাড়ানোর পক্ষে মতামত দেন তারা। কিন্তু পানির মূল্য বৃদ্ধিতে ওয়াসার এমডির আগ্রহই সবচেয়ে বেশি ছিল বলে জানা যায়।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এরপর ছয় দফা তার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। তার ও আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৩ বছরের সময়ে ১৪ বার পানির মূল্য বাড়ানো হয়।

এদিকে পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে ওয়াসা জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে পানি উৎপাদন করতে হচ্ছে তাদের। দীর্ঘদিন ধরে এই ভর্তুকি দিতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ফলে ওয়াসা প্রতি বছর মূল্য সমন্বয়ের জন্য পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে আইনসিদ্ধ করে নেয়। ওয়াসার আইন ১৯৯৬-এর ২২(২) ধারা অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা তাদের বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে দাম বাড়াতে পারে। বর্তমানে ওয়াসার প্রতি ইউনিট পানি উৎপাদন ব্যয় ২৫ টাকা বলে জানা যায়।

ঢাকা ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেছেন, গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত সভায় করোনা মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পানির দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু এখন সেই ভীতি থেকে মানুষ বেরিয়ে এসেছে। এ ছাড়া এটা দাম বাড়ানো নয়, এটা মূল্য সমন্বয়। কারণ প্রতি বছর পানি উৎপাদন করতে গিয়ে আমাদের খরচ বেড়ে যায়। সেই ব্যয়কে সমন্বয় করার প্রয়োজন হয় প্রতি বছর।

ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটিকে আইনসিদ্ধ হলেও বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তকে অনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আইন অনুযায়ী তারা (ওয়াসা) প্রতি বছর দাম বাড়াতে পারে। কিন্তু বর্তমানে যখন করোনার কারণে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তের চরম আর্থিক দুঃসময় যাচ্ছে, মানুষের আয় যেখানে অর্ধেকে নেমে এসেছে সেই সময় ওয়াসার কোয়ালিটি অব সার্ভিস বিবেচনায় এই দাম বৃদ্ধি শুধু অযৌক্তিকই নয়, অনৈতিক ও  অমানবিকও। তিনি অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads