• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

নতুন মাদক ‘এলএসডি’

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২৮ মে ২০২১

দেশে নতুন এক মাদকের সন্ধান মিলেছে। এর নাম লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথালামাইড বা এলএসডি। এটি বেশ দামি একটি মাদকদ্রব্য। সাধারণত ব্লটিং পেপারের ওপরে এই তরল মাদক ঢেলে সেই কাগজ শুঁকে বা ঠোঁটের নিচে রেখে নেশা করে মাদকাসক্তরা। পার্শ্ববর্তী দেশে এই মাদক বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে এলএসডির সন্ধান পান গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, হাফিজুর রহমান মৃত্যুর আগে এ মাদক গ্রহণ করেছিলেন। এ ঘটনায় তার তিন বন্ধুকেও আটক করা হয়েছে। যাদের কাছে এ মাদক পাওয়া যায়। বিশেষ করে উচ্চবিত্তের সন্তানদের টার্গেট করেই এলএসডি আমদানি করা হয়। এলএসডির একটি ছোট টুকরো ব্লটিং পেপারের দাম তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রের এই মাদকের প্রতি আগ্রহ বেশি।

গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান।

জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এলএসডি আবিষ্কার করেন। প্রথমদিকে এলএসডি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো। তবে ওষুধটি মস্তিষ্কের ক্ষতি করায় নিষিদ্ধ করা হয়। সাধারণত এলএসডি নেওয়ার পর একজন মানুষ চোখ বন্ধ করেও দেখতে পায়। তাদের কল্পনাশক্তি অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এলএসডি নেওয়ার পর প্রকৃতি ও বাইরের জগতের সঙ্গে এমন ধারণা অনুভূত হয় যাকে অনেকসময় ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক রূপও মনে করা হয়। এমনকি এই মাদকের প্রভাব কেটে গেলেও ওই রকম অনুভূতি থেকে যেতে পারে। এলএসডি ব্যবহার করলে মানুষের স্মৃতির ভাণ্ডার খুলে যায়। তবে সেসব স্মৃতির ভার অধিকাংশ মানুষই সহ্য করতে পারেন না। ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতির প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অধিকাংশ মাদকগ্রহণকারীই স্মৃতির চূড়ান্ত স্তরে প্রবেশের আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এলএসডি গ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই এমন দাবি করেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, হ্যালুসিনেশনই এসব অনুভূতির মূল কারণ।  ভারতের অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর এই মাদকটি আলোচনায় আসে। তার বিরুদ্ধে এই মাদক নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা এ কে এম হাফিজ আক্তার আরো জানান, নতুন এ মাদক বাংলাদেশে কখনো জব্দ হয়নি। পাশাপাশি এ বিষয়টি অজানা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে তদন্তের এক পর্যায়ে সন্ধান মেলে এ মাদকের। বিশেষ করে হাফিজের বন্ধু মহল এমন মাদক গ্রহণ করে বলে তথ্য আসে এবং মৃত্যুর আগে হাফিজ এ মাদক নেয় বলেও নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা। এরপর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আরো তৎপর হয়। পরে এ মাদকসহ হাফিজের তিন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। গোয়েন্দাদের ধারণা, নতুন এ মাদক নেওয়ায় হাফিজুর অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে যান। তবে মাদক নেওয়ার কারণে হাফিজুর ‘আত্মহত্যা’ করেছেন কি না, তা জানাননি।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০০ ব্লট এলএসডিসহ হাফিজের বন্ধু তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, সাদমান সাকিব রুপল, আসহাব ওয়াদুদ তুর্য ও আদিব আশরাফ। এদের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুপল ও তুর্য এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আদিব। তাদের ধানমন্ডি ও লালমাটিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবির কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার জানান, প্রতি ব্লট এলএসডি তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ‘এটা স্ট্যাম্পের মতো দেখতে। ঠোঁটের নিচে রেখে ব্যবহার করা হয়। এই মাদক নিলে মানুষ অনেক ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘এই মাদক (এলএসডি) নেদারল্যান্ড থেকে দেশে আনা হয়। দেশে এই মাদক জব্দের ঘটনা এটাই প্রথম। ফেসবুকের ২টি পেজে এই মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করা হতো। গ্রাহকদের বেশিরভাগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তাধীন রয়েছে। এই মাদকের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে কিনা বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছি। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।’

প্রসঙ্গত, হাফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রভিত্তিক (টিএসসি) সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৫ মে থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ২৩ মে শাহবাগ থানায় ছবি দেখে ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে লাশ শনাক্ত করেন হাফিজুরের ভাই হাবিবুর রহমান।

এরপর এ ঘটনায় পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষার্থীরা। ২৪ মে সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কমিটির সদস্যদের নিয়ে বসে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমরা দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করব।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads