করোনা মহামারির মধ্যে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। অথচ খবরের আড়ালে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কেউ বুঝতে পারছে না। এখনই নজর দেওয়া না হলে পরিস্থিতির অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধতন কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তিনি। পরদিন শুক্রবার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় আইসিইউতে। এখনো তিনি আইসিইউতে আছেন। করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কথা স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও। অধিদপ্তর বলছে, জুন নাগাদ ডেঙ্গু রোগী অনেক বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮০ জন। চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২১৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘গত কিছুদিন বৃষ্টি হচ্ছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এমনটা চলবে। এই সময়েই ডেঙ্গু বেড়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছিল। গতবছর তেমন প্রাদুর্ভাব দেখা না গেলেও চলতি বছর আবার রোগী বাড়ছে।’
জানুয়ারিতে ৩৫ জনের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও জুন নাগাদ রোগী বাড়ছে জানিয়ে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘ছাদবাগানের টব থেকে শুরু করে ফ্রিজে জমে থাকা পানিতেও এডিস মশার লার্ভা বিস্তারের আশঙ্কা থাকে। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে, যেন আশপাশে জমে থাকা পানি না থাকে।’ অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, তিন দিন হলেই জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে। এদিকে আর কয়েক সপ্তাহ পরেই কোরবানির ঈদ। সেসময় অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাবেন। তাদের উদ্দেশে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘বাড়ি যাওয়ার আগে অবশ্যই বাথরুমের কমোড, প্যান ঢেকে যেতে হবে। বালতির পানি ফেলে উল্টো করে রাখতে হবে।’
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্যমতে, নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানি, প্লাস্টিকের ড্রাম, বালতি, পানির ট্যাংক, বাড়ি করার জন্য নির্মিত গর্ত, টব, বোতল ও লিফটের গর্তে এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। ডা. রোবেদ বলেন, এসব জায়গাগুলোতেও নজরদারি বাড়াতে হবে।
জরিপে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড, লালমাটিয়া, সায়েদাবাদ এবং উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায় এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।