• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

উন্নয়ন প্রকল্পের গোড়ায় গলদ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ অক্টোবর ২০২১

নানা দুর্বলতা নিয়েই তৈরি হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি)। প্রকল্পগুলোর গোড়ায় গলদ থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ধারিত মেয়াদ ও ব্যয়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এ কারণে শেষ পর্যন্ত জনগণের করের টাকা যেমন গচ্চা যাচ্ছে, তেমনই প্রকল্পের সুফল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটেছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ২১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সেখান থেকে ২৩৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে  প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৪৫৪ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। শুরু হতে গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৮৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৩২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ হতে বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের প্রাক্কালে আগের রেট সিডিউল অনুসরণ (২০১৫-১৬ অর্থবছরের) করে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু মূল ডিপিপি অনুমোদনের পর এ পর্যন্ত তিনবার এলজিইডির রেট সিডিউল পরিবর্তন হয়েছে। রেট সিডিউল বৃদ্ধির কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ডিপিপির কিছু কিছু সড়কের শেষ বা প্রান্তিক অংশে অল্প কিছু দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে উন্নয়ন না করলে রাস্তাটির অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ফলে ফলে জনগণ পূর্ণমাত্রায় সুফল পাবে না। তাই অসম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ডিপিপির কিছু কিছু সড়কের রোড ডিজাইন টাইপ আছে বিসি (বিটুমিনাস কার্পেটিং)। কিন্তু বাস্তবে রাস্তার স্থায়িত্বের প্রয়োজনে আরসিসি (রড, সিমেন্ট, কংক্রিট) করা প্রয়োজন। ডিপিপিভুক্ত কয়েকটি রাস্তা ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড ও হাওর এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় স্থায়িত্বেও বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিসির পরিবর্তে আরসিসির মাধ্যমে উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ার কারণে কিছু কিছু রাস্তার ভারী এবং অধিক সংখ্যক যানবাহন চলাচল করায় সড়কের প্রশস্ততা ও গুরুত্ব বৃদ্ধিসহ উন্নততর ডিজাইনে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বাস্তবতার কারণে কিছু ব্রিজের নির্মাণ স্থান ও দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয়তার আলোকে জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু নতুন স্কিম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্প সংশোধনের আরো যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়, সেগুলো হলো এডিপিতে অপ্রতুল বরাদ্দ প্রাপ্তি। সিলেট বিভাগ প্রাকৃতিকভাবে প্রতিকূল এলাকা। বৃষ্টিপাত ও বন্যা বেশি হওয়ায় বছরে সর্বোচ্চ ৪ মাস পর্যন্ত কাজ করার উপযুক্ত সময় পাওয়া যায় গেছে। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয়নি।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ঠিক মতো হলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে এমন জটিলতা হওয়ার কথা নয়। তাহলে হয়তো বাস্তবায়নও পিছিয়ে যেত না। প্রকল্পের টাইম ওভার রান হলে, কস্ট ওভার রান হবেই, এটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ সময় বাড়লে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া প্রকল্পটি থেকে যে সুফল পাওয়ার কথা তা সময় মতো না পাওয়া বঞ্চিত হয় জনগণ।

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের  মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে  স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের অধীন সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলাগুলোর উপজেলা সড়ক ২ হাজার ৬৬৭ কিলোমিটারের মধ্যে ২ হাজার ৩৬ কিলোমিটার ( ৭৬ শতাংশ), ইউনিয়ন সড়ক ২ হাজার ৬০৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১ হাজার ৪২০ কিলোমিটার  (৫৫ শতাংশ) এবং গ্রাম সড়ক ১৬ হাজার ৪৮০ কিলোমিটারের মধ্যে ২ হাজার ৬৪৮ কিলোমিটার (১৬ শতাংশ) উন্নয়ন করা হয়েছে। যার গড় অগ্রগতি ২৮ শতাংশ। অথচ জাতীয় গড় অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ। এ জন্য মোট ১ হাজার ২১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুলাই হতে ২০২২ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদিত হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের জারি করা হালনাগাদ রেট সিডিউল কার্যকর হওয়ায় সড়কসহ অন্যান্য অংশের ইউনিট রেট বৃদ্ধি পাওয়ায়, কিছু কিছু রাস্তা বিসি’র মাধ্যমে উন্নয়ন করার পরিবর্তে আরসিসি দ্বারা উন্নয়ন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এলজিইডির ডিজাইন ইউনিট আরসিসি সড়কের ডিজাইন পরিবর্তন হওয়ায় মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, উপজেলা সড়ক বিসি দ্বারা উন্নয়ন, ইউনিয়ন সড়ক বিসি দ্বারা উন্নয়ন, গ্রাম সড়ক বিসি দ্বারা উন্নয়ন, সাবমার্সিবল আরসিসি সড়ক উন্নয়ন, সড়ক প্রতিরক্ষা, উপজেলা সড়কে ব্রিজ নির্মাণ, ইউনিয়ন সড়কে ব্রিজ, গ্রাম সড়কে ব্রিজ, সড়ক মেরামত, সড়কে মাটির কাজ, হাটবাজার উন্নয়ন, ঘাট,জেটি নির্মাণ, গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, গ্রামীণ সড়ককে দুর্যোগ সহনীয় ২ লেন সড়কে উন্নীতকরণ এবং গ্রোথ সেন্টার করা হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটির প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনের ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ২৩৯ কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা মূল অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি সংক্রান্ত বিদ্যমান পরিপত্র অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন যোগ্য। তাই একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads