• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামে আত্মীয়তার গুরুত্ব ও অধিকার

  • প্রকাশিত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

তরিকুল ইসলাম মুক্তার

 

 

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। যা বনী আদমের একে অপরের মাঝে প্রেম-প্রীতি আর ভালোবাসার সুনিপুণ সৌধ নির্মাণ করে। ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ব্যবহার সবার কাম্য এবং ইসলামের দাবিও বটে। বিশেষ করে নিজ আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্কের মজবুত আস্থা স্থাপন করা শুধু ইসলামী শরীয়তের বর্ণবিন্যাসে নয়; মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিরও চাহিদা। কেননা, বাংলায় আত্মা থেকে আত্মীয়তা শব্দের উৎপত্তি। তাই আত্মার সাথে আত্মীয়তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া রক্তের ধারা থেকে আত্মীয়তার জন্ম। একটি সুন্দর সমাজ বা পরিবার গঠনে আত্মীয়তার সম্পর্ক অতুলনীয়। আত্মীয়তার সুসম্পর্কের অটুট বন্ধন একজন ব্যক্তিকে সুখ-দুঃখ, অনুকূল-প্রতিকূল নানা ধরনের পরিস্থিতির মুকাবিলায় স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনে সহযোগিতা করে। পক্ষান্তরে আত্মীয়তা বন্ধনের স্বর্ণ-সুতা পুড়িয়ে ছাই করে যদি পরস্পরে সম্পর্কোচ্ছেদ করা হয়, তাহলে তার জীবনটা হয়ে উঠে অনেকটা বিপন্ন এবং ব্যর্থ।

আত্মীয়ের আত্মিক অনুভূতির সন্ধান মেলে সুখে-দুঃখে ও বিভিন্ন অনুকূল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। বিপদের মুহূর্তে আত্মীয় যেভাবে সাড়া দেয়, অন্য কারো পক্ষে সেরকম সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া অন্য কেউ সাড়া দিতেও চায়না একজন আত্মীয় অন্য আত্মীয়দের সুখে যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করবে, অন্যরা তা করবে না। তাই সমাজে বেঁচে থাকার জন্য আত্মীয়ের সহযোগিতার বিকল্প নেই। এক আত্মীয়ের অন্তরে অন্য আত্মীয়ের দুঃখের জ্বালা এবং সুখের জোয়ার থাকবেই। আত্মীয় ছাড়া মানুষের পক্ষে সামাজিক জীবন পরিচালনা করা কঠিন ব্যাপার।

ইসলাম আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলামের অনুসারী কোনো মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করলে তাকে অবশ্যই আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। এক কথায় আত্মীয়দের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা পোষণ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, আন্তরিকতা, সাহায্য এবং উপদেশ দিয়ে তাদের সাথে গভীর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। কোরআন মাজীদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা করে থাক এবং আত্মীয়-জ্ঞাতীদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ দৃষ্টি রাখেন। (সুরা নিসা, আয়াত-১) মহানবী হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার রিযিকের প্রাচুর্য্য এবং দীর্ঘ জীবনের প্রত্যাশা করে, তার উচিত আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। (মিশকাত ৪১৯)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমনের প্রায় সাথে সাথেই আমিও তাঁর দরবারে গিয়ে হাজির হলাম। সর্বপ্রথম আমার কানে তাঁর যে কথাটি প্রবেশ করল, তা হলো-‘হে লোক সকল! তোমরা পরস্পর পরস্পরকে বেশি করে সালাম দাও। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে খাদ্য দান করো। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোল এবং এমন সময়ে নামাজে মনোনিবেশ করো, যখন সাধারণ লোকেরা নিদ্রামগ্ন থাকে। স্মরণ রেখো, এ কথাগুলো পালন করলে তোমরা পরম সুখ ও শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (মিশকাত)

আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা দেন, আল্লাহতায়ালা সবার সাথে ন্যায় ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নির্দেশ দিচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করার জন্য।’ (সুরা নাহল, আয়াত-৯০) আলোচ্য আয়াতাংশে সদ্ব্যবহার করার সাথে সাথে সামর্থ্যানুযায়ী আত্মীয়-আপনজনদের আর্থিক সেবা-যত্ন করা, তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা এবং তাদের খবরা-খবর নেওয়াও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আয়াতে প্রথমে পিতা-মাতার হক্বের ব্যাপারে তাকীদ দেওয়া হয়েছে এবং তার পরেই আত্মীয়-স্বজনের হক্বের কথা বলা হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন- ‘(বিপদগামী তারাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহতায়ালা যা অবিচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা ছিন্ন করে, আর পৃথিবীর বুকে অশান্তি সৃষ্টি করে। তারা যথার্থই ক্ষতিগ্রস্ত। (সুরা বাকারা, আয়াত-২৭)।

হজরত সালমান ইবনে আমের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সাদকার মাল সাধারণ গরিব-মিসকিনকে দান করলে তাতে তো শুধু সদকার সাওয়াবই পাওয়া যায়। আর তা যদি নিজের রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনকে দান করা হয়, তাহলে তাতে দুটি সাওয়াব পাওয়া যায়। একটি হলো সাদকার সাওয়াব এবং আরেকটি হলো আত্মীয়তার হক আদায় করার সাওয়াব।’ গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, একজন মানুষের প্রতি আল্লাহর এবং অন্যান্য মানুষ তথা সৃষ্টিকুলের, অধিকার ও প্রাপ্য আদায় করার নির্ধারিত পদ্ধতি ও তৎসংশ্লিষ্ট সীমার নামই দীন বা ধর্ম। বিশ্বের শান্তি ও অশান্তি এসব সম্পর্ক যথাযথভাবে বজায় রাখা বা না রাখার ওপরই নির্ভরশীল। অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’ আহ্! কত বড় শাস্তির হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারণ করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অথচ এদিকে কী আমরা একটুও খেয়াল করি? আমরা আমাদের নিজেদেরকে নিয়ে চিন্তার জগতকে ডুবে আছি। এসব অসামাজিক, অনৈসলামিক মনোভাব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে আত্মীয়তার অধিকার বুঝে তদানুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন!

 

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া শায়খ আবদুল মোমিন, মোমেনশাহী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads