• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত ও মোহাসাবা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত ও মোহাসাবা

  • প্রকাশিত ১০ এপ্রিল ২০২১

‘গীবত’ ও ‘মুহাসাবা’ দুটো আরবি শব্দ। গীবত অর্থ-সমালোচনা বা পরনিন্দা। আর মুহাসাবা অর্থ-আত্মসমালোচনা। গীবতের কারণে মানুষ নিন্দনীয় ও গোনাহগার হয়। আর আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষ প্রশংসনীয় হয়। আমাদের সমাজে গীবত যেন এক মহামারীর রূপ ধারণ করেছে। গীবত যে কবীরা গোনাহ সেটা আমরা মনেই করি না। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা পরস্পরের গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তাদের মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? কখনো না। আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত-১২) রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমরা কি জান গীবত কি? সাহাবিগণ বললেন,  আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের ভাইয়ের এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। নবীজিকে আবার বলা হল আমি যা বলি তা যদি তার মধ্যে থাকে (অর্থাৎ আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, তা যদি তার মধ্যে পুরাটাই বিদ্যমান থাকে)? নবীজি বললেন, সে বিষয়টা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে সেটাই গীবত। আর যদি সে বিষয়টা না থাকে তাহলে অপবাদ (বুহতান যা গীবতের চেয়েও জঘন্য)। (সহিহ মুসলিম)

আমাদের বর্তমান অবস্থা এমন যে, গীবত চর্চায় আমরা বেশ পারদর্শী। আমরা সবচেয়ে বেশি মজা পাই অন্য কারো আলোচনা, সমালোচনা করতে। হযরত মুআয রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর দীর্ঘ হাদিসে পাওয়া যায়, প্রতিদিন আমল লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা বান্দার নেক আমল নিয়ে যখন প্রথম আসমানে যান, তখন বান্দার নেক আমলসমূহ চমকাতে থাকে! যখন দ্বিতীয় আসমানে নেয়া হয়। তখন দ্বিতীয় আসমানের ফেরেশতা বলেন, এই আমল আমলকারীর মুখে ছুড়ে মারো! কারণ সে মানুষের গীবত করে। (তাফাক্কুল অধ্যায়, তানবীহুল গাফিলীন) হজরত হাতেম আসাম্ম (র.) বর্ণনা করেন, গীবতকারী জাহান্নামে বানরে পরিণত হবে। গীবতে শয়তান খুশি হয়। একদিন হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম ইবলিস শয়তানকে দেখতে পেলেন। তার এক হাতে মধু আর আরেক হাতে ছাই। তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে শয়তান বলে, এ ছাই আমি এতিমদের মুখে নিক্ষেপ করি, যাতে তাদের চেহারা বিশ্রী হয়ে যায় এবং মানুষ তাদের থেকে দূরে থাকে। আর মধু আমি গীবতকারীর মুখে ঢেলে দেই, যাতে তার মুখ রসে ভরে যায় এবং আরো বেশি গীবত করতে পারে।  (নজহাতুল মাজালিস)

‘একদা শেখ সাদী (রহ) তাঁর পিতার পাশে বসে কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন। পাশে কিছু মানুষ ঘুমাচ্ছিলেন। শেখ সাদী বললেন, দেখো ওরা তেলাওয়াত বাদ দিয়া গুমাইতেছে! তখন তাঁর পিতা বললেন তুমিও যদি তাদের মতো ঘুমে থাকতে তাহলে ভালো হতো, অন্তত গীবত করতেনা।’ আহ! তাঁদের জীবন আর আমাদের জীবন কতো ফারাক। আমরা নিজেদেরকে গীবতে ডুবিয়ে রেখেও বুঝি না আমরা যে গীবত করছি। জিনা, ব্যাবিচারের মতো গীবতও হারাম এবং আরও বেশি জগণ্য। কারণ, যিনার গোনাহ আল্লাহ চাইলে মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু গীবতের ক্ষেত্রে আল্লাহর নেযাম হলো, যার গীবত করা হয়েছে সে যদি ক্ষমা না করে তাহলে সে ক্ষমা পাবে না। তাই গীবতকে জিনা অপেক্ষা জগণ্য বলা হয়েছে। হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা একদল জাহান্নামীদেরকে ডেকে বলবেন, কীসে তোমাদেরকে জাহান্নামে এনেছে? তারা বলবে, আমরা দুনিয়ায় থাকতে নামাজ পড়তাম না, এতিমদেরকে আহার করাতাম না এবং আমরা মানুষদের গীবত করতাম। (সুরা মুদদাসসির, আয়াত: ৪২)

তবে কিছু গীবত বৈধ : মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী (রহ) বলেন, ছয় অবস্থায় গীবত করা জায়েয। ১. অত্যাচারীর অত্যাচার থেকে রক্ষার জন্য অত্যাচারীর গীবত করা। ২. অপরাধীর অপরাধ নির্মূল হবে, এমন কারো কাছে অপরাধীর অপরাধ বর্ণনা করা। ৩. ফতোয়া জানার জন্য গীবত করা। ৪. ঈমান বিধ্বংসকারী লোকের গীবত করা। ৫. যদি কারো নাম গীবতের মাধ্যমে প্রসিদ্ধ হয়ে থাকে, তাহলে তার গীবত করা। যেমন-অমুক কানা কোথায়! ৬. যে ব্যাক্তি নিজের দোষ নিজে বর্ণনা করে, তার গীবত করা।

‘মুহাসাবা’ বা আত্মসমালোচনা হলো-নিজেকে শুধরানোর নিয়তে নিজের দোষ খুঁজা। হাদিসে আত্মসমালোচনাকারীকে প্রকৃত বুদ্ধিমান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে গীবত পরিহার করে আত্মসমালোচনা অর্জনের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টিলাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

আমিনুর রহমান হাসান

লেখক: শিক্ষার্থী, প্রাবন্ধিক

সদস্য, বাংলাদেশ কওমি তরুণ লেখক ফোরাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads