ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকে উচ্চকণ্ঠে বাক্য বিনিময়, ইউক্রেনের সাথে চুক্তি হলো না

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৮:০৪

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক পরিকল্পিত ‘রেয়ার’ খনিজ চুক্তিকে কেন্দ্র করে হলেও তা শেষ পর্যন্ত উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে পর্যবসিত হয় এবং কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়।
ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের প্রায় ৪০ মিনিট পর উত্তেজনা চরমে ওঠে, যখন জেলেনস্কি ২০১৪ সালে রাশিয়ার
ক্রিমিয়া দখলের প্রসঙ্গ তোলেন। এতে ট্রাম্প অসন্তুষ্ট হন। স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জেলেনস্কিকে বলেন, ‘হয় আপনি চুক্তি করবেন, নইলে আমরা এ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও জেলেনস্কির সমালোচনা করে বলেন, ‘আমি মনে করি, ওভাল অফিসে এসে আমেরিকান মিডিয়ার সামনে আপনার এই অভিযোগ তোলা অসম্মানজনক।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আপনার হাতে এখন সেই তুরুপের তাশ নেই। আপনি লক্ষ লক্ষ লোকের জীবন নিয়ে বাজি খেলছেন। আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে বাজি ধরছেন।’
বৈঠক আকস্মিকভাবে বন্ধ হওয়ার পর নির্ধারিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়। তবে জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে তার প্রতিক্রিয়া জানান। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের প্রয়োজন ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি, আর আমরা ঠিক সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
অন্যদিকে, ট্রাম্প বৈঠকের পর সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি যে আমেরিকা সম্পৃক্ত থাকলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শান্তির জন্য প্রস্তুত নন। কারণ তিনি মনে করেন আমাদের সম্পৃক্ততা তাকে দরকষাকষিতে বড় সুযোগ করে দেয়।’
বৈঠকের মূল আলোচনার বিষয় ছিল ইউক্রেনের ‘রেয়ার’ খনিজ সম্পদের ওপর যৌথ মালিকানা সংক্রান্ত একটি চুক্তি। প্রস্তাবিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন যৌথভাবে খনিজ আহরণ করবে, যাতে ইউক্রেন ভবিষ্যতে ৫০% রাজস্ব পাবে। কিন্তু বৈঠকের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়নি।
বৈঠকের এই ব্যর্থতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সহসভাপতি দ্যমিত্রি মেদভেদেভ ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের ভেঙে যাওয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এই উদ্ধত শুকরটি শেষ অবধি ওভাল অফিসে যথার্থ চপেটাঘাত খেয়েছে।’
অপরদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি কাজা কালাস ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘ইউক্রেনই ইউরোপ। আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি এবং তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন আরও বৃদ্ধি করব।’
এই বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সম্পর্ক কোন পথে যাবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনের পরিকল্পনাগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের প্রতি তার অবস্থান আরও কঠোর করবে কি না, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
- এমজে